প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ
বিএনপি নেতা আলাল কি এখন মুরাদের ভাই দুলাল? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা তিনি করতেই পারেন। রাজনীতিতে পারস্পরিক আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু তা কখনই শালীনতার পর্দা তুলে নিজেকে একদম রাস্তার কলতলায় নামিয়ে নয়। সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান তার সীমাহীন ঔদ্ধত্য, শালীনতা-শিষ্টাচার বিবর্জিত কথাবার্তা, মাতলামি, যৌনবিকৃত আচরণ ও নোংরা ভাষার জন্য বরখাস্ত হয়েছেন। দল ও সংসদ থেকেও তিনি খারিজ হবেন। মুরাদের মুখে ভাষা ছিল না, খিস্তি-খেউড় ছিল। আচরণে কোনো বিনয় ভদ্রতা শালীনতা দূরে থাক একদম চরম উগ্র দম্ভ মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিল। পাপ আর অপরাধের মাত্রা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। মুরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা-ও ভাইরাল হয়েছে। হাই কোর্ট তা-ও সরিয়ে দিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছে। আলালের বক্তব্যেও রাজনৈতিক ভাষা লঙ্ঘন হয়েছে। বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে এবং রাজনীতির জন্য অশালীনতার আরেক মাইলফলক হয়েছে।
১৯৭৯ সালের সংসদে বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন স্বাধীনতাবিরোধী প্রখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান শাহ আজিজুর রহমান। বিএনপি সংসদীয় দলের প্রথম সভায় তিনি এমপিদের বলেছিলেন, আপনারা শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল ও শাসনামল নিয়ে সমালোচনা করবেন কিন্তু তাঁকে নিয়ে কোনো কটূক্তি করবেন না। সেই সংসদের আরেক বিখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান সবুর খানও কখনো বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করেননি। এ দুজনকে স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর বাঙালি জাতিকে এক মোহনায় এনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রস্তুতকালেও চরম শত্রু ইয়াহিয়া খান এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোকে সাহেব বলে সম্বোধন করেছেন। আইয়ুব খানের মন্ত্রী সবুর খানকে সবুর ভাই বলে সম্বোধন করতেন। মওলানা ভাসানী থেকে তোয়াহা, আতাউর রহমান খানসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সবার প্রতি তাঁর উদার রাজনৈতিক শিষ্টাচার ছিল নজিরবিহীন।
আমাদের রাজনীতিবিদরা সেসব সংস্কৃতির পাঠ নেননি। আজ যে যত প্রতিহিংসাপরায়ণ, যে যত রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে অশালীন নোংরা গালাগালি করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেন, মুই কি হনুরে ভাব নিয়ে ভদ্রতা বিনয়কে কবর দিয়ে দম্ভ নিয়ে হাঁটেন তিনিই যেন তত বড় নেতা। এক অসুস্থ অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে যা রাজনীতিকে কলুষিত করছে। সমাজকে অশান্ত করছে। জনগণ এ নোংরামিকে ভয় পায়, জিম্মি হয়ে থাকে কিন্তু পছন্দ করে না। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও ফাঁসিতে ঝুলে কবরে শায়িত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও অশালীন ভাষার জন্য কম সমালোচিত হননি। মাশুল তাদেরই গুনতে হয়েছে মুখের ভাষার।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে ভালো বক্তা জানতাম। সেন্স অব হিউমার প্রখর মনে করতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তার নোংরা বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তার এজন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিএনপি নেতৃত্বকেও এর জবাব দেওয়া উচিত যে, তারা কী ব্যবস্থা নিলেন। এদিকে মুরাদ হাসান তার অপরাধের প্রাপ্য শাস্তি পেয়েছে। আরও পাবে। কিন্তু প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে মরহুম বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার পুত্র ইশরাক হোসেন যে গালাগালি করেছেন তাতে নিজেকে মুরাদের কাতারেই নামিয়ে এনেছেন। তিনি একজন সম্ভাবনাময় বিএনপি নেতা হয়ে বলেছেন, মুরাদকে পেটাবেন। তাই নয়, মুরাদকে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলেছেন! এটা বক্তৃতা নয় জঘন্য গালি। গালি অপরাধী মুরাদকে দিন, তার পিতাকে কেন? এও বিএনপি নেতৃত্বকে দেখা উচিত। রাজনীতিবিদদেরই নিজেদের মানমর্যাদা, শালীনতা রক্ষা করার এখন চূড়ান্ত সময়। জনগণ যদি গ্রহণ না করে সেটি রাজনীতি হয় কী করে? আর নতুন প্রজন্মের সামনে রাজনীতির নামে এ কেমন বিকৃত মানসিক বিকারগ্রস্ত নোংরামির চরম চিত্রপট উন্মোচন করা হচ্ছে? সব দলের নেতাদেরই আজ গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনীতিকে সুস্থ সহনশীল ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের শ্রদ্ধা-সম্মান ধরে রাখতে রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই সব দলের মুরাদদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন