#মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরতে হবে: অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস। #বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে মেতেছে বাঙালি জাতি: উৎপল দাস।
প্রকাশ: বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৪৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মুক্তিযুদ্ধে এবং একাত্তরের যে চেতনা আমাদের মধ্যে ছিল, সে সময় আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙলার আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। মুক্তির দিশারী। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনও বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৪৭তম পর্বে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংগীত শিল্পী, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের কেন্দ্রিয় নারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যে চেতনা, একাত্তরের যে চেতনা ছিল আমাদের মধ্যে সে সময় আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙলার আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। মুক্তির দিশারী। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনও বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না। তিনিই ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কাণ্ডারি। স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের এক মহাননায়ক তিনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠতম প্রবক্তা। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও সংগ্রাম তিনি নিজের চেতনায় লালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এদেশ পেয়েছি। অন্য বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভক্তি থাকলেও দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো বিরোধ থাকা উচিত নয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে দেশের স্বার্থে মিলিত হয়ে কাজ করতে হবে। বিজয় মাস এলে আমরা উজ্জীবিত হই। নতুন করে শক্তি পাই। এ দিনে আমরা অনুপ্রাণিত হই আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের কথা স্মরণ করে। উদ্বুদ্ধ হই বিজয়ের চেতনায় অগ্রগতির পথযাত্রায় এগিয়ে যেতে। প্রতি বছর বিজয় দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্ম এবং বিশ্বকে মনে করিয়ে দেই মুক্তিযুদ্ধের কথা ও বীর শহীদদের কথা। বিজয় মাসের বিজয়ের দিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বরে পুরো দেশ সেজে ওঠে লাল-সবুজে। দোকানে, রাস্তায়, অফিসে, স্কুল-কলেজে এমনকি গাড়ির সামনে শোভা পায় জাতীয় পতাকা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। করোনার কারণে যদিও এবার বিজয় দিবসের আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। তারপরও বিজয়ের চেতনা আমাদের মনে-প্রাণে রয়ে যাবে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বহু বছর নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ভুল ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেদিকে নজর রেখে বাংলাদেশের শেকড়ের সন্ধান করে জানতে হবে স্বাধীনতার ইতিহাসের ইতিকথা ও বিস্তারিত পটভূমি। জানতে হবে তাদের কথা, যাদের আন্দোলন-সংগ্রামের ফল হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে একদিন লাল-সবুজের পতাকা জয়যুক্ত হয়েছিল। তরুণ প্রজন্ম কতটুকু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বিজয়ের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করতে পারছে, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মকে। জানাতে হবে, কত ত্যাগ আর রক্তের মূল্যে কেনা আমাদের এই স্বাধীনতা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ চেতনা সজাগ থাকে সে রকম দৃষ্টান্তমূলক কর্ম সম্পন্ন করতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে সব পাপাচার, অনাচার, সব অপকর্ম ও সব দূরাচারের বিরুদ্ধে। মেধা-মনন, সাহস ও সত্যনিষ্ঠায় নিজেকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে স্বার্থক হবে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মদান আর অগণিত মানুষের অবর্ণনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষা। তবে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এখনও জানে না মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। তাই নতুন প্রজন্ম বা আমাদের সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে মা-বাবাকেই এগিয়ে আসতে হবে।
উৎপল দাস বলেন, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বীর বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের ৫০ বছর পেরিয়ে আসার পথে আমরা। বছর ঘুরে আবার এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এবারের মাসটি ভিন্ন অনুভূতি নিয়ে এসেছে। স্বাধীনতাকামী বাঙালির হৃদয়ে মাসটি মহাআনন্দের, মহা গৌরবের। স্বজন হারানোর বেদনায় এই মাস একই সঙ্গে শোকের, আবার উদযাপনেরও। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র-শ্রমিক, কৃষক-পেশাজীবী নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ। ৯ মাসের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ মানুষের জীবন ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জাতীয় জীবনে মুক্তি আসে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল ১৬ ডিসেম্বর। আবার এই ডিসেম্বরেই পাকিস্তানিরা তাদের এ দেশীয় দোসর-রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহযোগিতায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠেছিল। এ কারণে বাঙালি বিজয়ের মাসটি উদযাপন করে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনায়। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার বেশি দিন পার না হতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পরাজিত শত্রুরা। ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি গণবিপ্লবকে ১৯৭৫ সালের একটি প্রতিবিপ্লব দিয়ে শেষ করে দেওয়া হয়। হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে। বিজয়ের ৫০তম বর্ষে ডিসেম্বর মাস শুরুর প্রাক্কালে বাঙালির মনে অন্যতম বড় স্বস্তি এই যে, দীর্ঘকাল পার হলেও জাতির পাপমোচন হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরুর পরে চিহ্নিত রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা গেছে।