প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:০৫ পিএম আপডেট: ০৭.১২.২০২১ ১০:০৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আজ ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করে পাক হানাদার বাহিনীকে মৌলভীবাজার থেকে বিতাড়িত করে শত্রুমুক্ত করেছিল। এই দিনেই মৌলভীবাজার পুরোপুরি হানাদারমুক্ত হয়।
সেদিনের সাহসী সন্তানেরা পাকাহানাদারদের পরাজিত করে মৌলভীবাজার শহর তথা জেলার সর্বত্র উড়িয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও এ জেলার একমাএ ব্যাংকার, বধ্যভূমি ও তালিকাভুক্ত গণকবরের স্থানগুলো রয়েগেছে অরক্ষিত। হানাদার মুক্ত দিবসে এ জেলার এসব স্থানগুলো সংস্কার ও সংরক্ষনের দাবী জানিয়েছেন এখানকার মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসীন্দারা।
জানা গেছে তৎকালিণ ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে শুরু করলে প্রতিদিনই বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে থাকে এ জেলায়। ২ ডিসেম্বর রাতে শমসেরনগর বিমানবন্দর ও চাতলাপুর বিওপিতে হানাদার বাহিনীর ওপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে পাক সেনারা টিকতে না পেরে মৌলভীবাজার শহরে ফিরে আসে। ৪ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের নিকটবর্তী বড়টিলা নামক স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ১২৭ সেনা শহীদ হন। পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ৪নং হেড কোয়াটার এর ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার রানার নেতৃত্বে মৌলভীবাজারের পিটিআই (প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং) সেন্টারে গড়ে উঠে ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার।
এখানে নির্মীত ব্যাংকারে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা, নিরীহ মানুষ ও মহিলাদের ধরে এনে হত্যা, নির্যাতন চালানো হয়। যা আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে। ৪নং সেক্টরের অধীনে সেক্টর কমান্ডার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চৌকস মেজর সি আর দত্ত’র নেতৃতে মৌলভীবাজারে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ৭ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী শেরপুরে অবস্থান নিলে মুক্তিবাহিনীও শেরপুরের দিকে অগ্রসর হলে পাক বাহিনী সেখান থেকেও পলায়ন করে সিলেটে চলে যায়। ফলে ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার পুরোপুরি মুক্ত হয় এবং আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা। এরপর থেকেই মৌলভীবাজারের সর্বস্থরের মানুষ ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস পালন করে আসছে। তবে স্থানীয় বাসীন্দাদের অভিযোগ রয়েছে স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও আজও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এ জেলার একমাএ ব্যাংকার, বধ্যভূমি, গণহত্যার স্থান তালিকা সংস্কার ও সংরক্ষনের। অযতেœ আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এসব স্থানের স্মৃতিচিহু। তাই এসব স্থান সংস্কার ও সংরক্ষন করে মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজম্মকে জানানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন এ জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসীন্দারা।
মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কামান্ডার জামাল উদ্দিন জানান, প্রতিবছর ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মৌলভীবাজার জেলা ইউনিট কমান্ড এর আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করা হয়। তবে তিনিও এ জেলার একমাএ ব্যাংকার ও বধ্যভূমি সংস্কারের জোর দাবী জানান সরকারের কাছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যবস্থা রাখা হয়। তিনি আরো জানান সরকারের পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত গণকবরগুলো সংরক্ষনের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, শ্রীগ্রই এসব স্থানগুলো সংরক্ষনের কার্যক্রম শুরু হবে।