ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের মতো বরগুনাতেও বৃষ্টি হচ্ছে। শীত ও বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিপাকে হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই সঙ্গে দমকা হওয়ায় ক্ষেতে আমন ধান নুইয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কায় কৃষকরা।
তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভারী বৃষ্টি না হলে জেলায় ফসলের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু খেসারির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলায় ২৭.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।
পৌর শহরের খুচরা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, আমরা খোলা আকাশের নিচে দোকানদারি করি। বৃষ্টির কারণে টানা তিন দিন ধরে দোকান খুলতে পারিনি। এদিকে শীতও বেড়ে গেছে।
বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে আমন ধানের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। তাবে এই মেঘলা আবহাওয়ায় আমন খেতে পোকার আক্রমণ দেখা দেবে। বৃষ্টির চেয়ে এতে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হবে। সেই সঙ্গে খেসারির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বরগুনায় চলতি বছরে ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। খেসারি আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। বৃষ্টি চলমান থাকলে খেসারি ডালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা ।
সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বদরখালী গ্রামে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে বেশকিছু এলাকায় আমন ধানের গাছ মাটিতে শুয়ে পরছে। ধানের নিচে বৃষ্টির পানি জমে আছে। ফল এসব ক্ষেতের ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু এলাকায় পাকা আমন ধান মাঠে থাকায় বৃষ্টির তোড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
বুড়িরচর এলাকার কৃষক আব্দুর রব বলেন, এ বছর দুই কানি জমিতে আমন ধান আবাদ করেছিলাম। ধান কাটার সময় প্রায় চলে এসেছিল। হঠাৎ বৃষ্টিতে অধিকাংশ জমির ধান মাটিতে শুয়ে পরেছে। এতে লাভ তো দূরে থাক আসল উঠবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
বরগুনা সদরের বদরখালীর কৃষক বিরেন্দ্র রায় বলেন, গত দুই দিন ধরে হালকা বাতাস আর বর্ষর্ণে, আমন ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এমনিতেই কৃষি কাজ করে এখন লোকসানে আমরা, তার ওপর আমনের ছড়া দেখে লোকসানের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে ধান পড়ে যাওয়ায়, অনেকটা সমস্যায় পড়লাম। অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরগুনা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) এস এম বদরুল আলম বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় আমন ধানে শিষ কাটা লেদা পোকা আক্রমণ করতে পারে। নিচু জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে ডাল আবাদ নষ্ট হয়ে যাবে।