সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে জবুথবু সারাদেশ
মাঠের ফসল নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তা
রতন বালো
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৪৭ এএম | অনলাইন সংস্করণ

যদিও শক্তি হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। পরিণত হয়েছে নিম্নচাপে। শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কোথাও আবার ভারীবৃষ্টি। জাওয়াদের প্রভাবে চার দিন ধরে মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাস বইছে উপকূলীয়সহ সারা দেশে। সূর্যের দেখা নেই তিন দিন ধরে। বৃষ্টি আর দমকা বাতাস যেনো পাকা ধানে মই দিয়ে গেছে আমনের মাঠে। হাজার হাজার বিঘা কাঁচা-পাকা আমন ধান নষ্টের উপক্রম। কাটা ধানও মাঠে রয়েছে কৃষকের। ধানের মধ্যে বোনা ও পাকা ফসল কলাইয়ে (খেসারি ডাল) অংকুর গজাচ্ছে। আবহাওয়ার এমন বৈরীতায় মাঠের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সূর্যের দেখা নেই। কুয়াশা না মেঘলা, বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্তু হঠাৎ সকাল ১০টার দিকে ঢাকার আকাশ ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি। পথচারীরা যে যেদিকে পারলেন, ছুটতে লাগলেন। মধ্য দুপুরে একটু ধরে এলেও দুপুর ১টা থেকে বেশ জোরেশোরেই ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে অনেকেই ভিজে জবুথবু হয়ে যান। নগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিচে সারি সারি মানুষ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেন। আবহাওয়ার অবস্থা বুঝে মনে করে যারা ছাতা হাতে বেরিয়েছিলেন তারা বৃষ্টির ঠান্ডা আমেজ নিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটেন। এই বৃষ্টি স্বাভাবিক বৃষ্টি না, এই বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ তার শক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। সোমবার সকালে জাওয়াদ আরও শক্তি হারিয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। এর ফলে উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলেও জানায় অধিদফতর।

ঘূর্ণিঝড়টি দুপুরের দিকে ভারতের পুরীর স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া দফতর। অবশ্য শক্তি হারানোয় প্রচুর মেঘমালা তৈরি হয়েছে, যা বৃষ্টি আকারে ঝড়ে পড়বে বলে জানানো হয়। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ অনেকটা দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ভারতের উপকূলের দিকেই যাচ্ছে। নিম্নচাপের কারণে গত শনিবার থেকেই সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। নিম্নচাপের প্রভাবে রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি আজও থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে আগের মতোই ৩ নম্বর স্থানীয় এবং খুলনা, বরিশাল এবং পটুয়াখালী অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পূর্ব বা উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্যও বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে ওঠার আগেই মূলত দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তা আমাদের দেশের উপকূলে আসতে আসতে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। যা মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপকূলীয় শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, বৃষ্টি ও বাতাসে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার বিঘা জমির ধানের গাছ পড়ে গেছে। পানিতে ডুবে থাকা কিছু কিছু ধানে এরই মধ্যে পচন ধরেছে। আমনের সহফসল কলাইয়ের (খেসারি ডাল) অংকুরেও পচন ধরেছে।

তবে, কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, উন্নত ফলনশীল ও স্থানীয় জাত মিলিয়ে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ১৪ হাজার চাষির মাধ্যমে এ বছর ৭০ হাজার বিঘা জমিতে আমনের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের রয়েছে ৩০ হাজার বিঘা। উফশী জাতের ধান স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। শুধুমাত্র স্থানীয় জাতের মোটা ও চিকন কাচা ও পাকা আমন বাতাসে নুয়ে পড়েছে। এর পরিমাণ ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার বিঘা হতে পারে। আবহাওয়া যদি এভাবে থাকে তাহলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, কলাই বোনা হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে। পানিতে না তলালে কলাইয়ের ক্ষতি হবে না।

রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা গ্রামের চাষি মো. রুহুল আমীন আকন জানান, তিনি ৮বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। তার মধ্যে তিন বিঘার পাকা ধান একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। খাদা গ্রামের মহারাজ মোল্লা জানান, তাদের একমাঠেই প্রায় ৫০ বিঘা কাচা আমন শুয়ে গেছে। তার এবং তার ভাই আ. রহিম মোল্লার প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে কলাই বোনা রয়েছে। তাতে কেবল গজ ফুটতে শুরু করেছে। বৃষ্টিতে তার বেশিরভাগই পচে গেছে। এক মণ কলাই বীজ আড়াই হাজার টাকা দরে কিনে ধান পাকার আগ মুহূর্তে বোনা হয়েছে। এখন বীজও পাওয়া যাবে না, আর এখন বোনার সময়ও শেষ হয়েছে। 

এদিকে, সাতক্ষীরা থেকে ধান কাটতে এসে বিপাকে পড়েছেন পরবসীরা (কৃষি শ্রমিক)। ১০ দিন আগে ১৬ জনের একটি দল নিয়ে শরণখোলায় এসেছেন মো. গফুর শেখ (৫৫)। গত শুক্রবার দুর্যোগ শুরুর আগ পর্যন্ত ১০বিঘা জমির ধান কেটেছেন তারা। সেই কাটা ধানের বেশিরভাগই মাঠে পড়ে আছে। কিছু কিছু ধানে পচন ধরেছে।

শ্রমিকের দলনেতা গফুর শেখ জানান, মণপ্রতি ৫ কেজি করে ধান পান তারা। মালিক একবেলা খেরাকি (খাবার) দেন। বাকি দুই বেলা তারা নিজ খরচে খান। আবহাওয়ার এই অবস্থায় এখন তাদের বসে বসে খেতে হচ্ছে বলে হতাশ তিনি।

শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন জানান, দুর্যোগের পূর্বাভাষ পেয়ে চাষিদের আগেই শতর্ক করা হয়েছে। মাঠের কাটা ধান তুলে নিতে বলার পরেও কিছু এখনো মাঠে রয়েছে। পানি না জমলে ধান ও কলাইয়ের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে, এই বৃষ্টি শীতকালীন শাক-সবজির উপকার হবে।

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এখনো সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া না গেলেও প্রাথমিকভাবে ১৮ থেকে ২০ হাজার বিঘা জমির ধান নুয়ে পড়ার খবর জানা গেছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে আমনের মাঠের অবস্থা জানতে আমাদের সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জরিপ শুরু করেছেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]