ময়মনসিংহে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠছে আনন্দমোহন কলেজের ক্যাম্পাস। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনা আতঙ্কে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইউনিট কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ এবং হাতাহাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। এরই মধ্যে কলেজের সব হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
গত শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের ইউনিট হিসাবে পরিচালিত হবে।
এই বিষয়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একটি অংশ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়, আরেক পক্ষ এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের দু’পক্ষের এ দ্বন্দ্বে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলেও ক্যাম্পাসে অশান্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। যার খেসারত দিতে হবে আনন্দ মোহন কলেজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধার সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, হঠাৎ করেই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আনন্দমোহন কলেজকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের ইউনিট হিসাবে পরিচালিত হবে এই ঘোষনা দেওয়ার পর বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের সামনে ককটেল বিষ্ফোরন ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এই ঘটনায় কলেজের হোষ্টেল সুপার কামরুল ও স্বপন নামের দুইজন শিক্ষক আহত হন। এ বিষয়ে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক এর নিটক জড়িতদের শাস্তির চেয়ে ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ হস্তার করেন। প্রশাসন এই ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
অপরদিকে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নওশেল আহম্মেদ অনি বলেন, আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের অনেক পরিক্ষিত নেতা-কর্মী রয়েছেন। যারা জেলা ছাত্রলীগের ইউনিট হিসাবে নিজেদের মানতে নারাজ। কলেজ ছাত্রলীগকে ময়মনসিংহ জেলা নয়, মহানগর ছাত্রলীগের অংশ হিসেবে পরিচালনার দাবি কলেজ ছাত্রলীগের বড় একটি অংশের। কারণ জেলা ছাত্রলীগের অযোগ্য নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মানতে নারাজ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রলীগ এর সাথে কখনই দ্বিমত পোষন করে না।তবে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগ এর সাথে দ্বিমত পোষন করে বিক্ষোভ করলে সেই বিক্ষোভে বহিরাগত লোকজন নিয়ে হামলা করা হয়েছে। এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
নাম গোপন রাখার শর্তে কতিপয় শিক্ষার্থী বলেন, কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। এ কারনে বিভিন্ন শিক্ষা বর্ষে তৈরী হয়েছে সেশনজট।ছাত্রলীগের নেতা-কমীদের দুই পক্ষের বিশৃঙ্খলার কারণে কতৃপক্ষ কলেজ বন্ধ ঘোষনা করেছে। এই কারণে দুচিন্তায় রয়েছেন।
আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আমান উল্লাহ বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানার (ওসি) ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দ বলেন, বর্তমানে আনন্দমোহন কলেজে পুলিশ মোতায়েন করা আছে। সংঘর্ষের সময় তাৎক্ষণিক পুলিশ না গেলে বড় দুর্ঘঠনা ঘটার অশংকা ছিলো। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই অভিযোগ দেইনি। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় ও শান্ত থাকে সে বিষয়ে ময়মনসিংহ প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।