বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মেয়র মকছুদের শাস্তিসহ ৪ দফা দাবিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীকী অনশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: রোববার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:১৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

কক্সবাজারের মহেশখালীতে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর নৃশংস হামলা-নির্যাতনের বিচারসহ চার দফা দাবিতে আজ রবিবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘন্টার প্রতীকী অনশন কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। 

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। উক্ত প্রতীকী অনশন কর্মসূচীতে আরো বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল, সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. এএসএম জাহাঙ্গীর আলম, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জিকে বাবুল, ভাস্কর শিল্পী রাশাসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

প্রতীকী অনশন কর্মসূচীর বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন বিচ্ছু জালাল বলেন,
"বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদেরকে প্রাপ্য সম্মান দেয়া রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া আমাদের কর্তব্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতন চলমান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসররা প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদেরকে হত্যা, হামলা, নির্যাতন ও রক্তাক্ত করে যাচ্ছে। এমনকি যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষীদেরকেও রক্তাক্ত করা হচ্ছে যা রাষ্ট্রের জন্য অনেক বড় অশনিসংকেত।" 

বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, "বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকে সফল ও সার্থক করার জন্য অবশ্যই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের জীবনের নিরাপত্তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। চলতি বছরে যুদ্ধাপরাধ আদালতের প্রায় ১০ জন বাদী ও সাক্ষীর ওপর হামলা হয়েছে। এছাড়াও এই বছরে প্রায় ২০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার ওপর হামলা ও নির্যাতন হয়েছে। দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অধিকাংশ হামলা ও নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে যা কখনোই কাম্য নয়।" 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ বলেন, "স্থানীয় প্রশাসন ও দলের নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা, নির্যাতন, জমি দখলের মতো ঘটনা একটার পর একটা আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিকট বিচার চেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদেরকে অনেক সময় উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বাধীনতা বিরোধীদের বংশধররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর অনেক পদে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসররা অনুপ্রবেশ করেছে। সংসদ সদস্য থেকে শুরু ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত অনেক জায়গায় স্বাধীনতা বিরোধী ও তাদের বংশধররা আধিপত্য বিস্তার করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদের কোণঠাসা করে রেখেছে।" 

বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এএসএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, "বঙ্গবন্ধু কন্যাকে দুর্বল করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদেরকে প্রশাসন ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সুকৌশলে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করলে আজকে হয়তো আমাদেরকে এধরণের ঘটনাগুলো দেখতে হতো না। আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠন এবং প্রশাসনের অধিকাংশ জায়গা এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের দখলে।"

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জিকে বাবুল বলেন, "ঘুষ আর মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরা দল ও প্রশাসন ঢুকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। এরা প্রশাসন ও দলে ঘাপটি মেরে বসে থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মানুষদেরকে কোণঠাসা করে রেখেছে। এদেরকে চিহ্নিত করে প্রশাসন ও দল থেকে দ্রুত বের করে না দিলে আওয়ামী লীগকে এজন্য একদিন চরম মূল্য দিতে হবে। এদের আশ্রয়দাতাদেরকেও চিহ্নিত করে দল থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, গত ২৪ নভেম্বর কক্সবাজারের মহেশখালীতে মেয়র মকছুদের পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন মামলার অভিযোগে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধ মামলা করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ওপর হামলা করা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ নভেম্বর জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মকছুদ মিয়া ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়ে তাঁকে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হিন্দুপাড়া রাস্তার মোড়ে পৌর মেয়র মকছুদ লোকজন নিয়ে তার রিকশার গতিরোধ করেন। পরে তাকে কুপিয়ে ও মারধর করে রাস্তায় ফেলে যান। এরআগে মেয়র মকছুদ মিয়া ও তার লোকজনের হুমকির মুখে ছিলেন আমজাদ হোসেন। তাঁকে নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে মেয়র মকছুদ তাকে দ্বীপ ছাড়াও করেছিল। এসব অভিযোগ তুলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন। এতে আরোও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়র মকছুদ তাঁর ওপর ন্যাক্কারজনক ভাবে এই হামলা করে।" 

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "কক্সবাজারের মহেশখালী ছাড়াও সম্প্রতি দিনাজপুর সদর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিনুল ইসলামের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এভাবে প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতনের চিত্র দেখতে হচ্ছে যা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির শাসনামলে কখনোই মেনে নেয়া যায় না। সরকারের নিকট দাবি, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। প্রতিবছর যাচাই-বাছাইয়ের নামে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বচ্ছ চূড়ান্ত তালিকা দ্রুত প্রণয়নের পাশাপাশি রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের তালিকা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদ মিয়াসহ স্বাধীন বিরোধী পরিবারের বংশধররা যারা আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছে তাদেরকে অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী আমজাদ হোসেনের ওপর হামলাকারী মেয়র মকছুদকে মেয়র ও দলীয় পদ থেকে দ্রুত অপসারণসহ গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।"

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "মহেশখালী প্রশাসন তাদের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এখনোও পর্যন্ত মামলার আসামি মেয়র মকছুদসহ তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়নি যা আইনের শাসন পরিপন্থী। অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন এর ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে। চার দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনে যাবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চে চার দফা দাবিসমূহ:

১. যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন এর ওপর নৃশংসভাবে হামলাকারী কক্সবাজার মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকছুদকে দ্রুত বহিষ্কার ও গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২. সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।

৩. মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অনুপ্রবেশকারী স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও তাদের বংশধরদের চিহ্নিত করে দল ও প্রশাসন থেকে দ্রুত বহিষ্কার করে এদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে হবে।

৪.  অবিলম্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের হয়রানি বন্ধ করে একটি স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ এবং স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের তালিকা দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]