বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী চলছে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সরকার। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও পালন করা হচ্ছে নানাবিধ অনুষ্ঠান। ৭ মার্চের বেশ কয়েকদিন আগে, এই দিবসটি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। তখন দেশের মানুষ মুক্তকণ্ঠে তাদের প্রশংসা করতে শুরু করে। কিন্তু ৭ মার্চ বিএনপির অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সেখানে বিএনপি নেতারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার নায়ক ও খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে দেশের সেরা মানুষ হিসেবে দাবি করে। অনুষ্ঠানটি ৭ মার্চ ও মুক্তুযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আয়োজন করার ঘোষণা দিলেও, বাস্তবে তারা স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছে। মূলত, একই পদ্ধতিতে এর আগেও অজস্রবার বিএনপি এই কাজ কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, জিয়াউর রহমান যেমন উগ্রবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে; খালেদা জিয়াও তেমনি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী পরিচয় ব্যবহার করে দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে এবং দেশকে তুলে দিয়েছে ১৯৭১-এর খুনি ও ধর্ষক জামায়াতের নেতাকর্মীদের হাতে।
জিয়াউর রহমানের ছেলে ও বিএনপির ডি ফ্যাক্টো প্রধান তারেক রহমানের নেতৃত্বে মির্জা ফখরুলরা আজ যেভাবে সাধারণ মানুষের মুক্তিযুদ্ধের আবেগ নিয়ে খেলা করছে, ঠিক একইভাবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই কাজ করে আসছে বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের শক্তি দাবি করে, সরলপ্রাণ মানুষদের আবেগের সঙ্গে প্রতারণার করে, নিয়মিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী কাজের নেতৃত্ব দিয়েছে এই বিএনপি। এমনকি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিষয়ে এতোদিন চুপ থাকলেও, হঠাৎ করেই মাঠে নেমেছে তারা। কারণ, তাদের রাজনীতির অস্তিত্বই টিকে আছে এই কপটতার ওপর। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির আবেগের জায়গা, আর বিএনপি সেটা নিয়েই খেলে। তাদের এই লুকোচুরি খেলার ছদ্মবেশ উন্মোচিত হয়ে পড়লে, তারা প্রকৃত অর্থেই পথে বসে যাবে। তাই যে কোনো মূল্যে, ইতিহাস বিকৃত করে, মুক্তিযুদ্ধকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করে আসছে তারা।
ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণ ও প্রায় চার লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান স্বাধীনতাকে নিয়ে যারা এহেন নিচুকর্মে লিপ্ত, তারা নৈতিক বিচারে অপরাধী। তাদের এই অপরাধ অমার্জনীয়। দেশবিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে নস্যাৎ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানোর দায়ে, বিএনপির নেতাকর্মীদের দণ্ড প্রাপ্য। তারা এদেশকে ধ্বংস করার জন্য যা করেছে, গালভরা বুলি দিয়ে তা ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না। খুব ছোট পরিসরে হলেও, আসুন একবার চোখ বুলিয়ে দেখি- বিএনপি গংদের অপরাজনীতির ফিরিস্তি।
১৯৭১-এর রাজাকার-খুনি-ধর্ষকদের সাজা মাফ
ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের সাগরের ওপর ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, সেই মুক্ত দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসিত করেছে স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। এজন্য শুরুতেই সে গণহত্যা ও ধর্ষণের মাস্টারমাইন্ড রাজাকারদের বিচারপ্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে দালাল আইন করে, ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে, এই বর্বর অমানুষদের বিচারের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর, জিয়াউর রহমান নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্র এক আদেশে সেই দালাল আইন বাতিল করে। এবং কমপক্ষে ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। এরপর, ১৯৭৬ সালের ১৮ জানুয়ারি, পাকিস্তানি থাকা বাংলাদেশ-বিরোধীদের নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলে । ফলে, পলাতক রাজাকাররাও বীরদর্পে ঢুকতে থাকে দেশে।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দেশ গড়ার জন্য একটা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটি নিয়ে কুচক্রীরা বলে যে, বঙ্গবন্ধু সবাইকে মাফ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এটি সত্য নয়। যারা ধর্ষণ-হত্যা-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের মতো জঘণ্য অপরাধে লিপ্ত ছিল, তাদের জন্য বিচারের ব্যবস্থা করে; যারা লঘু অপরাধে যুক্ত ছিল, তাদেরকে লঘু দণ্ড দিয়ে, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনার বিচারের দাবিও জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এছাড়াও পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসর, যারা এসব ঘৃণ্য অপরাধে যুক্ত, তাদেরও বিচারপ্রক্রিয়া চলমান ছিল। প্রমাণিত এসব অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের লালন-পালন করেছে বিএনপি। স্বাধীনতার ৫০ বছরের বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জণ এটি।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা
বিএনপির আরেকটি বড় অর্জন হলো বঙ্গবন্ধুদের খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দিতে বাংলাদেশে 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ' আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেবছর, ২৬ সেপ্টেম্বর, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এই দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে। পরে ১৯৭৯ সালে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন সংসদ কর্তৃক এটি অনুমোদন করা হয়। ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই, বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর পর এটি আইন হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেই থেমে থাকেনি এই সামরিক জান্তা। জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, এই খুনিরা লিবিয়ায় নিরাপদ জীবনযাপন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে জনশক্তি রফতানির ব্যবসা করে। এছাড়াও দেশের মধ্যে কন্সট্রাকশানসহ বিভিন্ন কোম্পানি খুলে রমরমা বাণিজ্য চালায়। এমনিক তাদের সমর্থকদের লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে, অস্ত্র চালনার অত্যাধুনিক ট্রেনিং দিয়ে, আবারো দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাও করে এই চক্র। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে, বিদেশে অবস্থানকারী হত্যাকারীদের কয়েকজনকে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে চাকরি এবং পদোন্নতিও দেয়। এরাই একসময় ফ্রিডম পার্টি গঠন করে দেশজুড়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম চালায়। এমনকি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হত্যার চেষ্টাও করে।
স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের ক্ষমতায়ন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী সম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করতে জেনারেল জিয়া তার দল বিএনপির ভেতর নিয়ৈ নেয় পাকিস্তানপন্থী সামরিক-বেসামরিক আমলা, জঙ্গিবাদী মুসলিম লীগ, দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল চক্রকে। ১৯৭৯ সালে, লোক দেখানো এক নির্বাচনের মাধ্যমে, রাজাকার চক্রকে জাতীয় সংসদে অধিষ্ঠিত করে জিয়াউর রহমান। এমনকি কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানায়। অথচ দালাল আইনে তাকে দণ্ড দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারণ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে, শেষ চেষ্টা হিসেবে যে ষড়যন্ত্র করে, সেটার ক্রীড়নক ছিল এই আজিজুর রহমান। নভেম্বর মাসে জাতিসংঘে পাকিস্তানের কূটনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেয় সে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তান হানাদার কর্তৃক গণহত্যার কথা অস্বীকার করে। এমনকি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে অন্যান্য মুসলিম দেশের প্রতিও আহ্বান জানায়। এমন একটি মানুষকে ১৯৭৯ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানায় তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান। আর, মুক্তিযোদ্ধা সেনাদের ওপর চালায় বিনাবিচারে হত্যাযজ্ঞ।
এটি সর্বজনবিদিত যে, ১৯৭৯ সালে জিয়ার লোকদেখানো নির্বাচনে বিএনপির ৩০০ প্রার্থীদের মধ্যে ২৫০ জনই ছিল চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। স্বাধীনতার পর দালালির অভিযোগে এরা অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিল। এদের দিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করে জিয়াউর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের জাতীয় সংসদে একইসঙ্গে বসতে বাধ্য করে সে। তার কুখ্যাত রাজাকার মন্ত্রীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদা দেওয়া হয় মসিউর রহমান যাদু মিয়াকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের ঠিকাদারি করে অনেক টাকার মালিক হয়েছিল এই যাদু মিয়া। বঙ্গবন্ধু তাকে বিচারের মুখোমুখি করলেও, ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট তাকে জেল থেকে ছেড়ে দেয় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা।
জিয়ার অন্য রাজাকার মন্ত্রীদের মধ্যে খন্দকার আবদুল হামিদ বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজনদের একজন। এই লোক পরবর্তীতে ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘মর্দে মুমীন’ নামে উপ-সম্পাদকীয়তে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উদ্যোগের বিরুদ্ধে লিখতো। সামসুল হুদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তান বেতার থেকে অনুষ্ঠান প্রচার করেছিল। আব্দুল আলিম ১৯৭১ সালে উত্তরাঞ্চলের জয়পুরহাটে সংখ্যালঘুদের হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কারণে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। মির্জা গোলাম হাফিজ মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, 'বাংলাদেশের এই তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ আসলে একটি ভারতীয় ষড়যন্ত্র।' আবদুর রহমান বিশ্বাস প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এদের মতো বাংলাদেশবিরোধীরা জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী হওয়ায় আবারো সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে লালন-পালন করে বেড়ে তোলা
১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান দিয়ে হাজার বছরের সম্প্রীতির ভিত্তি 'বাঙালি জাতীয়বাদ'-এর অস্তিত্ব অস্বীকার করে। এমনকি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদ বাতিল করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ উন্মোচন করে। ফলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু হয় এবং উগ্রবাদের বিস্তার ঘটে।
এছাড়াও সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়, যা ১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল সংবিধানের নবম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনে পরিণত করে জিয়াউর রহমান। এমনকি সংবিধান কাটাছেড়া করে এই দালালদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগও করে দেয় সে। ফলে স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ, জামায়াত, পিডিপিসহ ধর্মভিত্তিক উগ্র-সাম্প্রদায়িক দলগুলো তৎপরতা শুরু করে। দাপটের সঙ্গে সমাজে পুনর্বাসিত হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।
জিয়াউর রহমানের কারণেই রাজাকারদের সর্দার গোলাম আজম ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং থেকে যায়। এমনকি পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে জামায়াতের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে। জিয়ার মদতে এবং গোলাম আজমের নেতৃত্বে, এসময় থেকে দেশজুড়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম শুরু করে জামায়াত। বিএনপির সরাসরি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকেই, রগকাটা রাজনীতির এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করে গোলাম আজমের ব্রেন চাইল্ড শিবিরের নেতা-কর্মীরা।
বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত
বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজমন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের মূল স্লোগান ‘জয় বাংলা’কে নিষিদ্ধ করে জিয়াউর রহমান। এর বদলে সে পাকিস্তানি স্টাইলে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ অনুকরণ করে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান চালূ করে। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। ১৯৭৯ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে জিয়ার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান 'বাংলা ভাষা'র নাম বদল করে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে নতুন নামকরণ করে। এর কারণ, বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছিল এই বাংলা ভাষার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এবং জয় বাংলা স্লোগানের মাধ্যমেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরো বাঙালি জাতিকে একতাবদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তাই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এসব বদলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালালো।
শুধু তাই নয়, জাতীয় সংস্কৃতি বদলে দেওয়ার অপচেষ্টা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বেতার’ নামটিও পরিবর্তন করে জিয়াউর রহমান। এর নতুন নাম দেওয়া হয় ‘রেডিও বাংলাদেশ’। হাজার বছরের ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর চেতনা মুছে ফেলে নতুন করে বলা শুরু করে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’।
এমনকি, ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জেনারেল জিয়া জাতীয় পতাকা পর্যন্ত পরিবর্তনের চেষ্টা করে। ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে 'সবুজ জমিনে কমলা রঙের বৃত্তের' নতুন জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এই পরিবর্তনকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠলে, জিয়া আবার পুরনো পতাকাকে ফিরে যায়।
সরকারের জাতীয়করণ করা সম্পদ পাকিস্তানকে প্রদান
স্বাধীনতার পর, এখান থেকে শুষে নিয়ে যাওয়া সম্পদের ন্যায্য হিস্যা চান বঙ্গবন্ধু। এজন্য পাকিস্তানিদের কাছে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দাবি করেন তিনি। তারা তা না দেওয়ায়, এদেশে থাকা পাকিস্তানিদের সম্পদ জাতীয়করণ করে বঙ্গবন্ধুর সরকার। এবং একইসঙ্গে নিজেদের পাওনায়া বুঝে পেতে দেন-দরবার চালিয়ে যান বঙ্গবন্ধু।
কিন্তু জিয়া ক্ষমতা দখল করে বাঙালির ন্যায্য হিস্যার বিষয়ে উল্টোপথে হাঁটেন। এমনকি বাংলাদেশে পাকিস্তানের যেসব সম্পত্তি জাতীয়করণ করা হয়েছিল, জিয়া সেগুলো পাকিস্তানে ফিরিয়ে দেন। ক্ষেত্রবিশেষ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দেন। তার পাকিস্তানপ্রেম এতো প্রকাশ্য ও তীব্র ছিল যে, পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে যোগ করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে জিয়াউর রহমান যখন পাকিস্তান সফরে যায়, তখন পাকিস্তানের সংবাদপত্রে বলা হয়- প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ে একটি ‘কনফেডারেশন’ গঠনে আগ্রহী।
রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উপহার
একাত্তরের খুনি-ধর্ষক-রাজাকারদের বাংলার মাটিতে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি হন প্রধানমন্ত্রী। সেসময় স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই রাজাকারদের পদায়ন অব্যাহত রাখেন তিনি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দেন স্বাধীনতাবিরোধী আবদুর রহমান বিশ্বাসকে। এর আগে, ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের এমপি ও মন্ত্রী ছিল সে। সে একজন তালিকাভুক্ত রাজাকার।
শুধু তাই নয়, রাজাকার সর্দার গোলাম আজমের নিশ্চিত জীবনযাপনের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এমনকি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং পুরোদমে রাজনীতি করার সুযোগ দেন। অথচ দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু দালালদের ভোটাধিকার ও রাজনীতি করার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
তবে, জিয়াউর রহমানের সময় দেশে ফেরে গোলাম আজম। এরপর থেকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়াই সে দেশে অবস্থান করছিল এবং আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবেই সে বাংলাদেশের জামায়াতের প্রধান হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়। এসবের প্রতিবাদে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে প্রতিবাদ শুরু হয় দেশজুড়ে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সরকার জাহানারা ইমাম ও মুক্তিযোদ্ধাদের দেশাদ্রোহী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করে। খুনি-ধর্ষকদের সর্দার গোলাম আজমের বিচার চাওয়ার দায়ে দেশাদ্রোহী পরিচয় নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।
জিয়াউর রহমানের প্রধানমন্ত্রী ও আরেক কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আরাম-আয়েশ করে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকে।
এদিকে, ২০০১ সালে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া ১৯৭১-এর আল বদর ও আল শামস বাহিনীর দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদকে মন্ত্রিত্ব দেন। বাংলাদেশের পতাকাবাহী গাড়ি থেকে নেমে প্রকাশ্য গণমাধ্যমে মুজাহিদ দম্ভ করে বলে, 'বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নাই।' এসময় দেশের প্রতিটি অঞ্চলে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্রের তকমা পায়।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর, ১৯৭১ সালে গণহত্যা ও ধর্ষণের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া বিভিন্ন জনসভায় এবং দলের বিবৃতিতে নিয়মিত তাদের নির্দোষ বলে দাবি করেন। তাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া থামানোর জন্য আন্দোলনের হুমকি দেন।
এদিকে পাকিস্তানপ্রেমে স্বামীর চেয়ে পিছিয়ে নেই খালেদা জিয়াও। তিনি আরো একধাপ ওপরে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সহিংসতা চালানো পাকিস্তানি কর্নেল জানজুয়া মৃত্যুর খবর পেয়ে, আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। এখানে একটি ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের পর খুন-ধর্ষণ-লুটপাটের মতো ঘৃণ্য কর্মে যুক্তদের বিচারের জন্য ট্রাইবুনাল গঠন করেছিলেন তিনি। বাকিদের লঘু দণ্ড দিয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান বন্দি থাকা দশ হাজারের বেশি খুনি-ধর্ষকদেরও ছেড়ে দিয়ে, তাদের অনেককে নিয়ে বিএনপি গঠন করে। তেমনি ভয়ানক অপরাধে যুক্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরও ১৯৫ জনকে বিচারের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার যে পাকিস্তানি সেনার জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শোকাহত হয়ে পড়েছিলেন, এই জানজুয়া হত্যা-ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানি জান্তার অন্যতম একজন।
দেশজুড়ে জঙ্গিবাদের বিস্তার
২০০১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিকল্প সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলে তার ছেলে ও বিএনপি নেতা তারেক রহমান। হাওয়া ভবনে বসে আন্তর্জাতিক জঙ্গি চক্রের সঙ্গে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয় সে। এমনকি বঙ্গবন্ধুকন্যা ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলার পটভূমি রচনা করে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলায় অংশ নেয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতারা। বিএনপি নেতা ও মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ডিজিএফআই ও এনএসআই-এর তৎকালীন মহাপরিচালক, মাওলানা তাজউদ্দীন, মুফতি হান্নানরা এই হামলার আগে তারেকের সঙ্গে বৈঠক করে। পরবর্তীতে মামলার আসামিরা এসব স্বীকার করেছে।
এমনকি মুফতি হান্নান ধরা পড়ার পর, ডিজিএফআই-এর ক্ষমতা ব্যবহার করে মাওলানা তাজউদ্দীনকে ভিন্ন নামে পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে, বাংলাদেশ ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেয় তারেক রহমান।
বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ও উগ্র রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য হেন কোনো অপচেষ্টা নাই, যা জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান করে নাই। তার খুনি চক্রের একজন মাজেদ ভাট জানায়, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের লোকজনের কাছ থেকে সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছে। জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, তেহরিক-ই-জেহাদ ইসলামি, জয়শ-ই-মোহাম্মদ, আল বদর, হরকাতুল জিহাদ এবং তালেবানের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের পুরো মেকানিজম নিয়ন্ত্রণ করতো তারেক রহমান। পরবর্তীতে আদালতে এসব প্রমাণিত হওয়ায় সেই সময়ের শীর্ঘ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দণ্ডিত হয়েছে। তারেক রহমান পলাতক হিসেবে লণ্ডনে আছে। কিন্তু রাজনৈতিক ডামাডোল সৃষ্টি করে, নিজের এসব অপকর্ম ঢাকা দিয়ে রাখার অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
৫০ বছরের মধ্যে ১৫ বছর ধরে নৈরাজ্য চালায় বিএনপি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে, প্রথম ২০ বছরের মাত্র সাড়ে ৩ বছর ছিল গণতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, টানা ১৫ বছর জিয়াউর রহমান ও এরশাদের মতো সামরিক শাসকদের হাতে জিম্মি হয়েছিল এই দেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এই একনায়কতন্ত্রের পতন ঘটান এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র ফিরলেও, ক্ষমতায় বসেন খালেদা জিয়া। সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমানের পাকিস্তানি ভাবধারার আদর্শে হৃষ্ট-পুষ্ট এই নাম-কা-ওয়াস্তের গণতন্ত্র আরো বেশি ক্ষতির কারণ হলো। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মোট দুই মেয়াদে, বিএনপির ১০ বছরে, দেশে উগ্রবাদী গোষ্ঠী পাকাপাকিভাবে খুঁটি গেড়ে বসে। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের মধ্যে ২৫ বছরই ক্ষমতায় ছিল জিয়া-এরশাদ-খালেদা-তারেক চক্র। আর তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল খুন ও ধর্ষণের মাস্টারমাইন্ড স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ঘৃণিত নেতাকর্মীরা।
কিন্তু গত এক যুগ টানা সরকারে থেকে দেশকে তাদের হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যেভাবে সোনার বাংলা গড়োর উদ্যোগ নিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছেন। মানুষের অর্থনৈতিক জীবন যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি ভূলুন্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে এই সময়ে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের স্বাধীনতার চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ৈ এখনো নোংরা রাজনীতি করে যাচ্ছে বিএনপি। অথচ স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে, জিয়া পরিবারের নেতৃত্বে, বিএনপি ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ- হাজার বছরের বাঙালি সংষ্কৃতি- অসাম্প্রদায়িকতা- শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছিল। তাদের হাত রঞ্জিত হয়েছে শত শত মুক্তিযোদ্ধার রক্তে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ও জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল তারা।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর রাতারাতি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে যে, সেই ব্যক্তির নাম জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে যায় জিয়া গং। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে নিজেকে সেনাবাহিনীর প্রধান ও উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সে। মূলত তখন থেকেই বন্দুক হাতে রাষ্ট্র চালাতে শুরু করে জিয়া। ১৯৭৭ সালে সে দখল করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ। এরপর দীর্ঘ মেয়াদে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য, ১৯৭৮ সালে সেনানিবাসে বসে গঠন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নিজেকে সবসময় একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করলেও, স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান তার দলটি গঠন করে কুখ্যাত রাজাকার ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে সঙ্গে নিয়ে। এরপর আমৃত্যু বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে গেছে সে।
শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একই পথে হেঁটেছেন, দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানোর সুযোগ করে দিয়েছেন জামায়াত ও উগ্রবাদী দেশবিরোধী গোষ্ঠীকে। এমনকি তাদের ছেলে তারেক রহমান ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো বাবা-মাকেও। আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশকে অস্থির করে তুলেছিল সে। এমনকি এখনো বিদেশে বসে দেশ নিয়ে নোংরা খেলায় মেতে ওঠে এই বিএনপি নেতা। বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করে জাতীয়ভাবে ধিক্কৃত হয়ে; নিজের দুর্নীতি, জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতা ও হত্যার মিশনগুলো চাপা দিতে; বিএনপি তথা রাজনৈতিক নেতার পরিচয় ব্যবহার করে লন্ডনে ফেরার হয়ে আছে সে। দলটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের ঢাল হিসেবে, এখনও তারা সেই কাজই করে যাচ্ছে!