টেকসই কৃষি উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২১ সময়ের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় লাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণের অগ্রযাত্রায় কৃষি। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্য শস্যের উৎপাদন (৪৩২.১১ লাখ মেট্রিক টন) এর লক্ষ্যমাত্রা (৪১৫.৭৪ লাখ মেট্রিক টন) ছাড়িয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া বর্তমান সরকারের ২০১৮ নির্বাচনী ইশতেহার, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)-২০৩০, রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), ডেল্টাপ্লান-২০২১ এর আলোকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাঙলা বাস্তব রূপ পাবে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হবে কৃষি। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞ মহল।
তারা বলেছেন, পুরানো আমলের চাষাবাদ প্রণালি পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সর্ম্পকে কৃষকদের কৃষি বিশেষজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা তাদের এ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। এছাড়া খাদ্য শস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান ও রফতানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। সব মিলিয়ে লাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণের অগ্রযাত্রায় কৃষি অবদান রাখছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কৃষি ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য শস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। আর সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
কৃষির উন্নতি সাধিত হলে কৃষকের দুর্দশা লাঘব হবে এসব বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষকদের মধ্যে চেতনাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। পুরানো আমলের চাষাবাদ প্রণালি পরিবর্তন করে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সর্ম্পকে কৃষকগণদের কৃষি বিশেজ্ঞ ও কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা তাদেরও এ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি জানান, দেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। ভুট্টা উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪৬ লাখ মে. টন। নিবিড় চাষের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। সবজি উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত এবং বিশ্বে সপ্তম। গত বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ মেট্রিক টন। দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারায় অষ্টম। আম উৎপাদন প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আলুসহ বিভিন্ন সবজি, ফল ও ফুল রফতানি সম্প্রসারণের নিমিত্ত উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নসহ কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। যশোরের গদখালির পলিহাউসে রফতানিযোগ্য ফুল এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনের উদ্যোগ দেশি-বিদেশি মহলে প্রশংসিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষিবিদরা জানান। ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টা চাষ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সহায়তা অব্যাহত আছে। এছাড়াও কাজু বাদাম, কফি ইত্যাদি অর্থকরি ফসল চাষ ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষক পর্যায়ে ডিএপি সারের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে, কৃষকদের জন্য এটা ছিল গত বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেরা উপহার বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
কৃষি মন্ত্রনালয় সূত্র আরও জানান, পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০০৮-০৯ অর্থবছর হতে এ পর্যন্ত ৯৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৮৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৪ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩৩ কোটি ১৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা কৃষি উপকরণ ও আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। ফসলের উন্নত ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে অভূতপূর্ণ সাফল্য এসেছে। ২০১৮-১৯ সনে অবমুক্তকৃত উদ্ভাবিত জাত ১২টি, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ৯৫টি, এবং নিবন্ধিত জাত ২৬টি। গম ও ভুট্টার গবেষণা সম্প্রসারণের জন্য সরকার ২০১৮ সালে গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি সেক্টরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮০২ নারিকেল, তাল, খেজুর ও সুপারি চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছে। মাল্টা, রামবুতান, ড্রাগন প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের অপ্রচলিত ও বিদেশি ফল চাষে উৎসাহ প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৮-১৯ সম্প্রসারিত সেচ এলাকা ২২ হাজার ৮৪০ হেক্টর। সরবরাহকৃত সেচ যন্ত্র ৫৪৭টি এবং স্থাপিত সোলার প্যানেলযুক্ত সেচযন্ত্র ৯৫ টি। ৪৮০টি সেচ অবকাঠামো, ৫৮১ কিলোমিটার খাল-নালা খনন, ৬৮২ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ (বারিড পাইপ) সেচনালা এবং ৮ কিলোমিটার ভূ-উপরিস্থ সেচনালা, ২৪ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় কৃষকের জন্য ৭০শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০ শতাংশ হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩২২ কোটি ৮০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এজন্য নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।