গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া চালু করার দাবিতে গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। এরপর সড়কে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পয়লা ডিসেম্বর থেকে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া সুবিধা বাস্তবায়ন করেছে মালিক সমিতি। ফলে শিক্ষাঙ্গনে ফিরে গেছে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।
তবে এরপরও সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল। শিক্ষার্থীদের স্কুলের পোশাক পরে মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কিও হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যায়।
তবে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই স্কুলের পোশাক পরে দুই নারী শিক্ষার্থী কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন। এই দুই শিক্ষার্থী হলেন- সোহাগী সামিয়া ও সেঁজুতি খন্দকার। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক করে।
এরপর সোহাগী সামিয়ার পরিচয় বেরিয়ে আসে। জানা যায়, সে খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী। সে মূলত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা নগরের স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক। সোহাগী সামিয়ার সঙ্গে তার দলের আরও একদল নেতাকর্মীকেও দেখা গেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উসকে দিতে।
বৃহস্পতিবার পুলিশ তাদের চলে যেতে বললে তারা বাসায় ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় সামিয়ার সাথে থাকা সেঁজুতি খন্দকার বলতে থাকে, ‘কেন চলে যাব? শরীরে হাত দেওয়ার কোনো অধিকার আপনাদের (পুলিশ) নেই। এটা পাবলিক প্লেস, আমি এখানে দাঁড়াতে পারি। আমি এই দেশের নাগরিক।’ এসময় তাদের শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র দেখতে চায় পুলিশ। কিন্তু সেটি না দেখিয়ে সেঁজুতি বলে ‘আমি ইউনিফর্ম পরা।’
কিন্তু ইউনিফর্ম পরা থাকলেই যে শিক্ষার্থী হবে- পুলিশ এমনটা চ্যালেঞ্জ করলে তারা স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিতে পুলিশকে পরামর্শ দেন। এসময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী সামিয়া পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আচ্ছা ধরলাম ও (সেঁজুতি খন্দকার) স্টুডেন্ট না, কিন্তু স্টুডেন্ট ছাড়া কি কেউ রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না? আপনারা তো ধাক্কা দিতে পারেন না।’ একপর্যায়ে ‘কেন আপনাদের (পুলিশ) আইডি কার্ড দেখাব? কেন আপনাদের জানাতে হবে আমরা স্টুডেন্ট’ বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন সোহাগী সামিয়া।
এগিয়ে আসতে আসতে সামিয়া বলতে থাকেন, ‘মাত্র দুজন শিক্ষার্থীকে দেখে পুলিশ বাহিনী রাস্তায় দাঁড়াতে দিচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। এটিই প্রমাণ করে রাষ্ট্রের মধ্যে যে ভয় তৈরি হয়েছে, সেই ভয় প্রমাণ করে রাষ্ট্র দুর্নীতি-লুটপাট সব পরিচালনা করছে। যার ফলে রাষ্ট্র সবসময় ভয়ে থাকে।’
এছাড়াও, ২৮ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির রাপাপ্লাজা এলাকাতেও একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে তাদের বিভিন্ন কাজে জড়ানোর জন্য উসকানি দিচ্ছিল এক ব্যক্তি। তার বয়স দেখে শিক্ষার্থী মনে না হওয়ায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাই প্রতিহত করে তাকে। এরপর উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা আটক করে তল্লাশি করে তাকে।
এরপর সে জানায়, তার নাম হাফিজুর রহমান, সে একজন পেশাজীবী। তার পকেটে ইনজেকশন, নগদ টাকা, ঘুমের ওষুধ ও বিএনপির একজন নেতার কার্ড পাওয়া যায়।
এরপর উপস্থিত শিক্ষার্থীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়, ওই ব্যক্তি দুই দিন ধরে সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারাদিন অবস্থান করছিল। এমনকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্থ বিতরণ ও খাবার কিনে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। তবে অপরিচিত হওয়ায় ভয়ে তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করেনি সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা।