কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু, সাবেক অর্থ সম্পাদক এ এস এম মাকছুদ খান, সাবেক সহ-সভাপতি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী ও সাবেক সদস্য মো. মিজানুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দায়িত্ব গ্রহন করেন তারা।
ভোমরা স্থল বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নেতৃত্ব প্রত্যাশি হাতে গোনা ২/৩ জন ব্যক্তি সমগ্র স্থল বন্দরকে জিম্মি করে রেখেছে। সাধারণ কেউ এখানে ব্যবসা করতে আসলেই তাকে নানাভাবে হয়রানী করা হয়। কতৃপক্ষও তাদের ইশারায় নানা আইনের বেড়াজালে ফেলে এইসব সাধারণ ব্যবসায়ীদেরকে হয়রানী করে। এরফলে বর্তমানে হাতে গোনা ১৫/২০জন সিএন্ডএফ এজেন্ট ছাড়া অধিকাংশ ব্যবসায়ী অন্য বন্দরে চলে গেছেন। এরমধ্যে আবার একটু প্রভাব নিয়ে চলতে পারেন এমন ৫/৭ জন ছাড়া অন্যদের তেমন কোন ব্যবসা নেই।
সূত্রটি আরো জানায়, আরাফাত-নাসিমের নেতৃত্বাধীন সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ব হতেই ভারতের ঘোজাডাঙ্গা স্থল বন্দর থেকে সেখানকার একটি প্রভাবশালী চক্র বাংলাদেশে কোন ট্রাক কখন ঢুকবে তার সিরিয়াল নির্ধারণের দায়িত্ব নেয়। জনৈক বারেক গাজীর নেতৃত্বাধীন ঐ চক্রটি ভোমরার দু’একজন সিএন্ডএফ নেতাকে ম্যানেজ করে ওপারে প্রতি ট্রাক ৩০ হাজার টাকা হারে চাঁদা নির্ধারণ করে। চাঁদা না দিলে ঐ ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে না দিয়ে ঘোজাডাঙ্গায় দীর্ঘদিন আটকিয়ে রাখা হয়। ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি পরিহার করতে আমদানীকারকরা বারেক গাজীর নেতৃত্বাধীন ঐ চক্রকে ট্রাক প্রতি ৩০ হাজার টাকা দিয়েই এখানে মালামাল আমদানী করে থাকে। এই টাকা বাংলাদেশের আমদানীকারকদেরই পরিশোধ করতে হয়। এরফলে আমদানী খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার অনেকেই এই বন্দর ত্যাগ করে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কতিপয় নেতা ওপারে প্রতিদিন ট্রাক থেকে আদায়কৃত ৫০/৬০ লাখ টাকার একটি ক্ষুদ্র অংশ কমিশন পাওয়ায় এবং তাদের আমদানীকৃত মালামালের ট্রাকে বিশেষ ছাড় পাওয়ায় সম্পূর্ণ এই অবৈধ ব্যবসা অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মুখবুজে হজম করাতে বাধ্য করছে।
এদিকে গত ৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে নির্বাচনী সাধারণ সভায় অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজু-নাসিমের নেতৃত্বাধীন কমিটি গঠন হওয়ার মাত্র দুইদিন পর ৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে এসোসিয়েশনের ব্যাংক হিসাব থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে নেয় সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম। ৮ অক্টোবর ২০২১ তারিখে অবৈধ কমিটির সভায় উক্ত ১০ লাখ টাকার বিষয় অন্য সদস্যরা উত্থাপন করলে তড়িঘড়ি করে সেটাকে মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমের ব্যক্তিগত ঋণ হিসেবে দেখানোর অনুরোধ জানানো হয়। অপরদিকে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিল অব এন্ট্রি প্রতি এসোসিয়েশনের চাঁদা দুই শত টাকা থেকে বাড়িয়ে হটাৎ চারশত টাকা করা হয়েছে। এসব নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে এডহক কমিটি গঠন সংক্রান্ত গত ৩০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে বিভাগীয় শ্রম পরিচালকের আদেশে বলা হয়েছে, গত ৯ অক্টোবর ২০২১ তারিখে ভোমরা কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশন এর কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। এসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শ্রম দপ্তরের তত্ত্বাবধানে দ্রুত ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, ভোমরা স্থল বন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের গত ৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সাধারণ সভা সম্পর্কে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের দুই জন কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। উক্ত প্রতিবেদন হতে জানা যায়, ট্রেড ইউনিয়নের ২০১৯ ও ২০২০ সালের আয় ব্যয়ের উপস্থাপিত হিসাব বিবরণী সভায় অনুমোদিত হয়নি।
সভায় গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ ও নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়নি। সভায় পরবর্তি তিন বছরের জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের নাম ঘোষণা করার উক্ত প্রক্রিয়া ট্রেড ইউনিয়নের বিদ্যমান রেজিস্ট্রিকৃত গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।
আদেশে আরো বলা হয়েছে, ভোমরা কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু উল্লিখিত সময় অতিবাহিত হলেও ইউনিয়ন কর্তৃক কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়নি এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি মর্মে নথিদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়।
বিভাগীয় শ্রম পরিচালকের আদেশে আরো বলা হয়, মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রীট পিটিশন নম্বর ৯৭৯৯/২০২১ এর আদেশে পরিচালক ও রেজিস্টার ইউনিয়ন, খুলনাকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক একটি পত্র নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
বিভাগীয় শ্রম দপ্তর খুলনার আদেশে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে নবগঠিত এডহক কমিটিকে নির্বাচন সংক্রান্ত সাধারণ সভা আহবানসহ নির্বাচনী সকল কার্যক্রম পরিচালক রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়নের তত্বাবধায়নে অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর ২০২১ ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের নির্বাচনী সাধারণ সভায় কোনরকম নির্বাচন ছাড়াই কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাচন না করে কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হতে পারে বলে পূর্বেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এরপরও ঐ অবৈধ প্রক্রিয়া বন্ধ না করে বরং টাকার অংক আরো বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকায় কমিটি বানিজ্য সম্পন্ন হয় বলে পরবর্তীতে খবর প্রকাশিত হয়।