ডিসেম্বর মাস আমাদের জন্য একটি আনন্দের মাস: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ
প্রকাশ: বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:০৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আমরা ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি। কিন্তু আমরা জানি যে আমাদের চূড়ান্ত অভিযানটা হয়েছিল তেসরা ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাঙালির বীরত্বের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই ডিসেম্বর মাসটা ছিল একটি চূড়ান্ত মাস। সে জন্য স্বভাবতই এই মাসটা আমাদের জন্য একটি আনন্দের মাস।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৪০তম পর্বে বুধবার (১ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (নীলদল) সাবেক সভাপতি, লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি। কিন্তু আমরা জানি যে আমাদের চূড়ান্ত যে অভিযান টা হয়েছিল সেটা ছিল তেসরা ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমাদের মুক্তিবাহিনী যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তখন একটা মিত্র বাহিনীর আবির্ভাব আমরা দেখেছিলাম। মিত্র বাহিনী গঠনের পরে পাকিস্তানের যে সামরিক নীতি আছে সেটার মধ্যে তারা একটা পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। সেটিকে তারা মাথায় নিয়ে ৩ ডিসেম্বর ভারতের ছয়টি এয়ারপোর্টে তারা বোমা হামলা চালায় এবং সেখানে আক্রমণের সাথে সাথে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তখন থেকেই আমাদের মিত্র বাহিনী, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ও ভারতীয় বাহিনীর সম্মলিতভাবে অগ্রাভিজান শুরু করে। সেই অগ্রাভিজান কিন্তু এই মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু করে এবং আমরা এর চূড়ান্ত জয় দেখেছি ১৬ ডিসেম্বরে। তবে আমাদের এই বিজয়ের মধ্যে আমরা যেটা দেখতে পাই, যেমন ভারতের সহযোগিতা আমাদের সাথে ছিল ঠিক তেমনি অনেক দেশের সমর্থন ছিল আমাদের উপর। বাংলাদেশের যে সরকার গঠন হয়েছিল এপ্রিল মাসে সেই সরকারকে যে স্বীকৃতি দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল বিজয়ের মাসে। সেখানে অনেক দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মৌন সম্মতি দিয়ে রেখেছিল। যার ফলে প্রথম আমরা স্বীকৃতি পেলাম ভারতের কাছ থেকে ৬ ডিসেম্বরে এবং ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে আমরা একসাথে সব দেশেরই স্বীকৃতি পাওয়া শুরু করলাম। সেটি ছিল বাংলাদেশের জনগণের বিজয় এবং এটি একটি ন্যায্য যুদ্ধ ছিল। যে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য যে একটি যৌক্তিক এবং ন্যায্যযুদ্ধ এবং হানাদার বাহিনীরা বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছিল সেটির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন দেশ আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল কিন্তু জনগণের উপরে আমাদের বিষণ ধরনের সমর্থন ছিল। এই যে হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই ডিসেম্বর মাসটা ছিল একটি চূড়ান্ত মাস। সেজন্য স্বভাবতই এই মাসটা আমাদের জন্য একটি আনন্দের মাস।