সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
একাত্তরের বিজয়ের চেতনা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে
#ডিসেম্বর মাস আমাদের জন্য একটি আনন্দের মাস: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ। #বাঙালি জাতি আত্মপরিচিত লাভ করে এই ডিসেম্বর মাসে: অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া। #বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন আমাদের অবশ্যই পূরণ করতে: ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:০৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

আমরা ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি। কিন্তু আমরা জানি যে আমাদের চূড়ান্ত অভিযানটা হয়েছিল তেসরা ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বাঙালির বীরত্বের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই ডিসেম্বর মাসটা ছিল একটি চূড়ান্ত মাস। সে জন্য স্বভাবতই এই মাসটা আমাদের জন্য একটি আনন্দের মাস।

দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৪০তম পর্বে বুধবার (১ ডিসেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (নীলদল) সাবেক সভাপতি, লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।

মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি। কিন্তু আমরা জানি যে আমাদের চূড়ান্ত যে অভিযান টা হয়েছিল  সেটা ছিল তেসরা ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আমাদের মুক্তিবাহিনী যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তখন একটা মিত্র বাহিনীর আবির্ভাব আমরা দেখেছিলাম। মিত্র বাহিনী গঠনের পরে পাকিস্তানের যে সামরিক নীতি আছে সেটার মধ্যে তারা একটা পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। সেটিকে তারা মাথায় নিয়ে ৩ ডিসেম্বর ভারতের ছয়টি এয়ারপোর্টে তারা বোমা হামলা চালায় এবং সেখানে আক্রমণের সাথে সাথে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তখন থেকেই আমাদের মিত্র বাহিনী, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ও ভারতীয় বাহিনীর সম্মলিতভাবে অগ্রাভিজান শুরু করে। সেই অগ্রাভিজান কিন্তু এই মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু করে এবং আমরা এর চূড়ান্ত জয় দেখেছি ১৬ ডিসেম্বরে। তবে আমাদের এই বিজয়ের মধ্যে আমরা যেটা দেখতে পাই, যেমন ভারতের সহযোগিতা আমাদের সাথে ছিল ঠিক তেমনি অনেক দেশের সমর্থন ছিল আমাদের উপর। বাংলাদেশের যে সরকার গঠন হয়েছিল এপ্রিল মাসে সেই সরকারকে যে স্বীকৃতি দেওয়ার একটা প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল বিজয়ের মাসে। সেখানে অনেক দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মৌন সম্মতি দিয়ে রেখেছিল। যার ফলে প্রথম আমরা স্বীকৃতি পেলাম ভারতের কাছ থেকে ৬ ডিসেম্বরে এবং ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে আমরা একসাথে সব দেশেরই স্বীকৃতি পাওয়া শুরু করলাম। সেটি ছিল বাংলাদেশের জনগণের বিজয় এবং এটি একটি ন্যায্য যুদ্ধ ছিল। যে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য যে একটি যৌক্তিক এবং ন্যায্যযুদ্ধ এবং হানাদার বাহিনীরা বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছিল সেটির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন দেশ আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল কিন্তু জনগণের উপরে আমাদের বিষণ ধরনের সমর্থন ছিল। এই যে হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এই ডিসেম্বর মাসটা ছিল একটি চূড়ান্ত মাস। সেজন্য স্বভাবতই এই মাসটা আমাদের জন্য একটি আনন্দের মাস।

অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, আজ থেকে শুরু হচ্ছে আমাদের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বাক্ষর এই বিজয়ের মাস। আমি মনে করি এই যে বিজয়ের চেতনা, বাঙলার স্বাধীনতার বীজ বপন কিন্তু শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের সৃষ্টির লগ্ন থেকেই। অধিকারহারা বাঙালি পাকিস্তান হওয়ার পরও দেখলো যে তাদের বঞ্চনার দখলদারিত্তের কষাঘাত একেবারেই আষ্টেপিষ্টে লেগেছিল। বাঙালি জাতি হাজার বছরের শৃঙ্খল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসে। এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসন, শোসন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ধারাবাহিকভাবে চলে আসা এ আন্দোলন-সংগ্রাম ১৯৭১-এর মার্চে এসে স্ফুলিংয়ে রূপ নেয়। ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে জাতিকে দিকনির্দেশনা দেন। বাঙালির এ স্বাধীনতার আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে থাকে পাকিস্তানি জান্তারা। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বর্বরচিতভাবে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এরপরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। শুরু হয় বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালি নিধন অভিযান। তবে পাকিস্তানের এ বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাংলার সর্বস্তরের মানুষ। হাতে তুলে নেয় অস্ত্র, শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে চলে বাঙালির মরণপণ যুদ্ধ। বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে বাঙালি বিজয়ের দিকে ধাবিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে বাঙালির বীরত্বের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ  করতে বাধ্য হয়।

ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, আজকের দিনটা আমাদের সুবর্ণ বিজয়ের মাস। এই দিনে আমাদের যেমন আনন্দ রয়েছে, ঠিক তেমনি অনেকেরই স্বজন হারানোর বেদনাও রয়েছে। সুতরাং তাদেরকেও আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বিগত ৫০ বছরে যেসব অর্জন আমাদের হয়েছে সেটা যারা স্বাধীনতার পরবর্তী প্রজন্ম আছে তাদের কাছে অনেক কিছু। যারা স্বাধীনতার পূর্বের মানুষ রয়েছে তাদের কাছে এই অগ্রগতিটা বিভিন্ন কারণে হতে পারতো, হয়নি সেটার কারণে পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কারণ, যারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান চায়নি, যারা বাংলাদেশের বিপক্ষ শক্তি ছিল তাদের আস্ফালন আমাদেরকে পদে পদে বাধাগ্রস্ত করেছিলেন। এরপর এই পঞ্চাশ বছরে আমাদের যতটুকু উন্নত হয়েছে সেখানে আমি চারটা বিষয়ের উপর নজর দিতে চাচ্ছি। জিডিপি, মাথাপিছু গড় আয়, জাতীয় বাজেট এবং মানুষের গড় আয়ু। আমরা স্বাধীনতার সময়ে দেখেছি যে আমাদের জিডিপি ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার সেটা বর্তমানে ২৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ গুণ বৃদ্ধি হয়েছে আমাদের। ১৯৭৫ পরবর্তী ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক যে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল সেটা যদি না হতো তাহলে এই বৃদ্ধি আরও ৫০ গুণ ছাড়িয়ে যেতো। এখন যে মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতু দেখতে পারছি, এই উন্নয়নগুলো আরও বেশি হতো যদি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যদি আরও বেশি দেশের ক্ষমতায় থাকতো তাহলে এই অগ্রগতিটা আরও বেশি হতো। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বসনিয়া যারা এই বছরই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি পালন করছে। সেখানে এই দেশটি পশ্চিম আফ্রিকার সবচেয়ে গরিব দেশ ছিল সেখানে বর্তমানে এই দেশটি ছিল সেখানের সবচেয়ে ধনী দেশ। সেখানে তারা উল্লেখ করেছে যে দলটি তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল বিগত ৫০ বছরে সেই দলকে তারা ক্ষমতায় রেখেছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]