প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ২:২৯ এএম আপডেট: ০২.১২.২০২১ ২:৩১ এএম | অনলাইন সংস্করণ
করোনার কারণে বিশ মাস বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে আবারও চালু হচ্ছে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেন। এটি ঢাকা-যশোর-বেনাপোল রুটে চলাচল করবে। এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত বলেন, ভারত ভ্রমণপ্রিয় যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা আজ থেকে চালু হচ্ছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় রেলওয়ে অচিরেই আন্তর্জাতিক-বিশ্বমানের রেল পরিবহনে পরিণত হবে, এ লক্ষে রেলওয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে বলে রেলওয়ের ডিজি জানান। গতকাল বুধবার রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছর ৫ এপ্রিল থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার কমে আসায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচলকারী ট্রেনটি পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
মিহির কান্তি গুহ জানান, বর্তমানে প্রতিদিন বেনাপোল-আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ৩ হাজার যাত্রী ভারতে যাতায়াত করছেন। করোনার আগে টুরিস্ট ভিসা চালু থাকায় প্রতিদিন ১২ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করতো বেনাপোল দিয়ে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ যাত্রী যান চিকিৎসার কারণে। বাকিরা ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিজনেস ভিসা চালু থাকলেও ট্রেনের সুবিধা না থাকায় দুর্ভোগে ছিলেন যাত্রীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫ থেকে ৬ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যাতায়াত করে থাকে। করোনাকালীন দেশের সব ট্রেন বন্ধ হলে বেনাপোল-ঢাকাগামী আন্তঃনগর এ ট্রেনটি সরকার বন্ধ করে দেয়। তবে বেশ কিছুদিন আগে সরকার সব ধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও চালু হয়নি বেনাপোল এক্সপ্রেস। ফলে কষ্ট এবং দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভারতে যাতায়াতকারী অসুস্থ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আবারও চালু হচ্ছে বেনাপোল এক্সপ্রেস। দেরিতে হলেও ট্রেনটি চালু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি কমবে বলে মনে করছেন তিনি। রাজীব নামের এক যাত্রী গতকাল কমলাপুরে বেনাপোল এক্সপ্রেসের টিকেট কাটতে এসে জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় তিনি বেশ অসুবিধায় পড়েন। তাকে যশোর নেমে বেনাপোল যেতে হচ্ছিল। এখন সরাসরি বেনাপোল যাওয়া যাবে বলে তিনি রেলওয়েকে ধন্যবাদ দেন।
জানা যায়, বেনাপোল থেকে ঢাকায় যেতে পরিবহনে সময় লাগে ১২-১৪ ঘণ্টা। সড়কে যানজট বা আবহাওয়া খারাপ হলে অনেক সময় দ্বিগুণ সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে ট্রেনে নির্বিঘেœ মাত্র সাড়ে সাত ঘণ্টায় বেনাপোল থেকে ঢাকায় পৌঁছানো যায়। সপ্তাহে প্রতি বুধবার ট্রেনটির বিরতি। বাকি ৬ দিন প্রতিদিন দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ছড়ে আসে এবং রাত সাড়ে ১০টায় কমলাপুর থেকে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বেনাপোল থেকে ঢাকা যাত্রী প্রতি এসিতে ভাড়া ১ হাজার ১১৬ টাকা, নন এসিতে ৪৮৫। ঢাকা থেকে এসি শ্লিপার ভাড়া ১ হাজার ৭৮১ টাকা, নন এসিতে ভাড়া ৪৮৫ টাকা। এদিকে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে রেলওয়ের পরিচ্ছন্নতা অভিযান, চলবে এক সপ্তাহ। এ উপলক্ষে গতকাল সকালে কমলাপুরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজের মান দেখতে যান রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত। এসময় তিনি বলেন, রেলওয়ে যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করা ও রেলওয়েকে যাত্রীবান্ধব করার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোকে মানোন্নয়ন করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে অত্যাধুনিক বগি ও ইঞ্জিন। রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলো ডাবল লাইন তৈরি করছে যাতে আরো বেশি ও দ্রতগতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারে। এসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় রেলওয়ে অচিরেই আন্তর্জাতিক-বিশ্বমানের রেল পরিবহনে পরিণত হবে, এ লক্ষে রেলওয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বেনাপোল-ঢাকা রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি উদ্বোধন করেন। ৮৯৬ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি চলাচল করছিল। শুধুমাত্র রেলে যাত্রীবহন বাবদ গত এক বছরে ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ট্রেনটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। করোনার কারণে দেশের সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হলে গত বছরের ৫ এপ্রিল থেকে ঢাকা-বেনাপোল রুটে আন্তঃনগর এ ট্রেনটিও বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বেনাপোল রুটে বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস বেনাপোল এক্সপ্রেস। সপ্তাহে ৬ দিন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে এই ট্রেন। বেনাপোল এক্সপ্রেস (ট্রেন নাম্বার ৭৯৫/৭৯৬) ১২টি কোচের ৮৯৬ যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। বিরতিহীন এই ট্রেন সার্ভিসে ঢাকা থেকে বেনাপোল যেতে সময় লাগবে মাত্র আট ঘন্টা। ভারতগামী পর্যটকদের জন্যে খুবই সহজ হবে বেনাপোল দিয়ে ভারত যাওয়া। যাত্রীরা ঢাকা থেকে রাতে রওনা দিয়ে সকালে বেনাপোল পৌঁছে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে রাত সোয়া ১১টায় বেনাপোল ছেড়ে যাবে এবং সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে বেনাপোল পৌঁছবে। বেনাপোল থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছবে। বেনাপোল থেকে ঢাকা আসার সময় যশোরে পৌঁছে ১০মিনিটের বিরতি দিবে যাত্রী উঠানো এবং ইঞ্জিন ঘুরানোর জন্যে। আবার ঈশ্বরদী এসে ১৫ মিনিটের বিরতি থাকবে ট্রেনের চালক ও অপরেশনাল কর্মীদের বদলের জন্যে। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার আগে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রী নামানোর জন্যে কিছুক্ষণ দাঁড়াবে।