শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সারাদেশে নিহত ৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

তৃতীয় দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও, নরসিংদী, নীলফামারী, মুন্সিগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

রোববার (২৮ নভেম্বর) ১ হাজার ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ৩৩ ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হয়। প্রতিনিধিরা জানান-

মুন্সিগঞ্জ

নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বাংলাবাজার ও পঞ্চসারে দুজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন। রোববার সন্ধ্যার পর এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাংলাবাজারের কাচিকাটা গ্রামের হারুন মোল্লার ছেলে শাকিল এবং পঞ্চসারের গোসাইবাগ এলাকার মৃত আলতাফ উদ্দিন শেখের ছেলে রিয়াজুল শেখ।

স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার বাংলাবাজারের কাইজ্জার চর এলাকায় নির্বাচনের ফলাফল পক্ষে না যাওয়ায় সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার (বই প্রতীকের) প্রার্থী আরাফ বেগমের কর্মী সমর্থকদের হামলায় জয়ী হওয়া (কলম প্রতীকের) মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগমের ভাগনা শাকিলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এদিকে একই সময় শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসারের গোসাইবাগ এলাকায় জয়ী হওয়া আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলম মোস্তফার কর্মী সমর্থকদের হামলায় অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী টেলিফোন প্রতীকের মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই রিয়াজুল শেখ নিহত হন। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কেন আর কীভাবে এসব ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব বলেন, বাংলাবাজারে দুই মহিলা প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া পঞ্চসার ইউনিয়নের‌ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনার পর মারা যান। পরবর্তীতে নিহতের লোকজন বলেছে নির্বাচনী সহিংসতায় ওই‌ ব্যক্তি মারা গেছেন।

ঠাকুরগাঁও

ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় শাহপলি আহমেদ (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আরো চারজন আহত হয়েছেন।

রোববার (২৮ নভেম্বর) রাত ১০টায় পীরগঞ্জ উপজেলার ৩ নং খনগাও ইউনিয়নের ঘিঢোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহপলি ওই ইউনিয়নের হাবিবপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।

ঘটনার সময় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত ছিলেন চৌকিদার খগেন। তিনি বলেন, ভোট শেষ হওয়ার পর ফলাফল ঘোষণা করতে বেশ দেরি করছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে চশমা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুজ্জামানের সমর্থকদের বিতর্ক হয়। পরবর্তীতে প্রিসাইডিং অফিসার নৌকার প্রার্থী শহীদ হোসেনকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন।

ফলাফল ঘোষণার পর উত্তেজিত কিছু এলাকাবাসী ভোটকেন্দ্র অবরুদ্ধ করে। এ সময় প্রিসাইডিং অফিসার পালিয়ে যান। তবে একটি কক্ষে তিনজন পুলিশ সদস্যসহ ১৫-১৬ জন আনসার সদস্য আটকা পড়ে।

খগেন আরো জনান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সদর উপজেলার ইউএনও আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান পুলিশ ও ২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য নিয়ে উপস্থিত হয়। নিয়ন্ত্রণ অনুকূলে না থাকায় ক্ষিপ্ত এলাকাবাসীর আক্রমণের শিকার হয়ে গুলি ছোড়েন বিজিবি সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলে একজন নিহত ও চারজন আহত হয়।


ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা কোনোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলেন না। নিজেদেরই হামলার শিকার হতে হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সদস্যদের ছোড়া গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।

নরসিংদী

নরসিংদীর রায়পুরায় নির্বাচনী সহিংসতায় ফরিদ মিয়া (৩২) ও আরিফ মিয়া (২৪) নামে দুজন নিহত হয়েছেন। রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফরিদ মিয়াকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

রোববার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উত্তর বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। নিহত ফরিদ মিয়া (৩২) উত্তর বাখরনগর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে।
 
স্থানীয়রা জানায়, উত্তরবাখর নগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গণনার সময় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এর আগে, সন্ধ্যায় একই উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরিফ মিয়া নামে আরো একজন মারা যান।

নীলফামারী

নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্রে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মো. রুবেল (৩৫) নামে বিজিবির এক সদস্য নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আওয়াল ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভোট গণনার সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামেন। সংঘর্ষে নায়েক রুবেল নিহত হন।

ওসি জানান, গারাগ্রামে লাঙ্গল প্রতীকে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টির মারুফ হাসান অন্তিক। এই কেন্দ্রেই আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছিলেন জনাব আলী। ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিকেলে যখন ভোট গণনা শুরু হয়, তখন জানা যায়, জনাব আলী ৫৪ ভোটে এগিয়ে আছেন।

তখনই অন্তিকের সমর্থকরা জনাব আলীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় একদল লোক প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্রে হামলা চালান। রাত ৯টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ হামলায় মো. রুবেল নামে বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে নিহত হন।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ললিত চন্দ রায় বলেন, ভোট গণনার পর জনাব আলীকে বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলে অন্তিকের সমর্থকরা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওই কেন্দ্রে আটকে রাখেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেষ্ট হলে তাদের সঙ্গে মারুফ হোসেন অন্তিকের সমর্থকদের সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে বিজিবি সদস্য রুবেল নিহত হন।

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় সাজ্জাদ হোসেন সজিব (২৫) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। রোববার (২৮ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ঢাকায় নেওয়ার পথে চাঁদপুরে অ্যাম্বুলেন্সে তার মৃত্যু হয়।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল হাসান ফয়সাল মাল ও সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান মঞ্জু ওই নেতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত সজিব উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি। তিনি ইছাপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী শাহিনুর আক্তারের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বে ছিলেন। ১৫ নভেম্বর সাবেক কমিটি বিলুপ্তির পর তাকে সভাপতি করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউনিয়নের নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিকেল ৩টার দিকে বিদ্রোহী প্রার্থী আমির হোসেন খানের (আনারস) লোকজনের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর কর্মীদের সহিংসতা হয়। এতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাজ্জাদ গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। বিদ্রোহী প্রার্থী আমির হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি। দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করায় ১৬ নভেম্বর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নিহত সাজ্জাদের এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মঞ্জু বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। হঠাৎ বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ মারা গেছেন। আমরা কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে এসেছি।

বক্তব্য জানতে প্রার্থী আমির হোসেন খানকে কল দিলে অন্য এক ব্যক্তি তা রিসিভ করেন। এ সময় ওই ব্যক্তি ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন। নয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মাঞ্জুর এলাহি বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে কোনো বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেনি। বাইরে কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]