প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রথমে শনাক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর নতুন এই ভাইরাসটিতে দ্রুত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা মানুষরা এই ভাইরাস বহন করে নিয়ে আসছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
রবিবার নেদারল্যান্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ১৩ জনের শরীরে ওমিক্রন ভাইরাস পাওয়া গেছে। জার্মানিতে মোট তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। সকলেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন। শনিবার একজন ওমিক্রন-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। তিনিও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন। এছাড়া বাভারিয়াতে দুইজন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্য আগেই জানিয়েছিল, তাদের দেশে কয়েকজন ওমিক্রন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এবার চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ইতালি ও ফ্রান্স জানিয়েছে, তাদের দেশেও ওমিক্রনে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা আটজন ওমিক্রন ভাইরাসে আক্রান্ত।
এদিকে ওমিক্রন শনাক্তের পরে যুক্তরাজ্যে এখন দোকানে যেতে হলে বা যানবাহনে চড়তে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাছাড়া মঙ্গলবার থেকে যারা যুক্তরাজ্যে যাবেন, তাদের করোনা পরীক্ষা করা হবে। সেই রিপোর্ট যতদিন না আসছে, ততদিন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
জার্মানির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, মানুষ যেন সতর্ক থাকেন। না হলে আবার লকডাউনের মুখে পড়তে হবে।
অন্যদিকে, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইইউ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর ‘ট্র্যাভেল ব্যান’ জারি করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা অন্যায্য। এটা একেবারেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। তাই তিনি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানিয়েছে, এই ভাইরাস এখন অনেক দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। তাই শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা ঠিক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে একই সুরে কথা বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। তিনি এই পদক্ষেপে ‘গভীর হতাশা’ ব্যক্ত করে একে অন্যায় আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার করে তাগিদ দিয়েছেন।
ইসরায়েল তাদের দেশে বিদেশিদের ঢোকা বন্ধ করে দিয়েছে। সুইজারল্যান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যুক্তরাজ্য, ইতালি, চেক প্রজাতন্ত্র, নেদারল্যান্ডস, মিশরের মতো দেশগুলো থেকে কেউ এলে আগে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, যারা ওমিক্রন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের শরীরে ব্যথা থাকছে। রোগীরা অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কিন্তু তারা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন না। তাদের দাবি, এখন সবে মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে যুবকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে আরও পরীক্ষার পর গবেষকরা এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন।