বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
দেশের চামড়া শিল্পের সংকট ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া
প্রকাশ: রোববার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের চামড়া শিল্প বর্তমানে সংকটকাল অতিক্রম করছে। কয়েক বছর আগেও চামড়া খাত ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি আয়ের খাত। করোনাভাইরাস শুরুর বছর (২০১৯-২০) এ খাতের উৎপাদন ও রফতানি আগের তুলনায় কমে যায় এবং রফতানি আয়ের দিক থেকে চামড়া খাত দ্বিতীয় স্থান হারিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে যায়।

গত সত্তর-আশি বছরে চামড়া শিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। এ শিল্পে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং আরো প্রায় ৩ লাখ মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত। দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জুতা-স্যান্ডেলসহ চামড়াজাত দ্রব্যের চাহিদা মেটানো ছাড়াও বিগত বছরগুলোয় গড়ে সহস্রাধিক মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করে।

বর্তমানে দেশের রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। রফতানি বহুমুখীকরণ ও বৈচিত্র্য আনয়নে চামড়া খাত গুরুপ্তপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বস্তুত গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে ওয়েট ব্লু উৎপাদনের সীমিত পরিসর পেরিয়ে ক্রাশড ও ফিনিশড লেদার, জুতা, ব্যাগসহ অন্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে চামড়া খাতে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিদেশেও পরিচিত পায় এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি পণ্য হিসেবে স্থান করে নেয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাতের রফতানি সর্বোচ্চ ১২৫৮ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। পরবর্তী দুই বছর রফতানি আয় কিছুটা কমলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয় ১২৩৪ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বের সর্বত্র করোনা মহামারী শুরুর পর বাংলাদেশের চামড়া খাতে ব্যাপক ধস নামে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আয় কমে ৭৯৭ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অন্যান্য রফতানি পণ্য ঘুরে দাঁড়ালেও চামড়া খাতে রফতানি  আয় কমে দাঁড়ায় ৭৯৬ মিলিয়ন ডলারে। কয়েক বছর ধরে এ শিল্পে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং সরকারের সঙ্গে নানা দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন।

চামড়া খাতের মূল সমস্যা হলো পরিবেশ দূষণ। ঢাকার হাজারীবাগের ট্যানারির বর্জ্য ও দূষিত পানিতে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়ায় গত শতাব্দীর আশির দশকে সরকার দূষণ নিয়ন্ত্রণে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্কীকরণ নির্দেশ প্রদান করে। পরবর্তী সময়ে সরকার ও চামড়া শিল্পের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়, দূষণ রোধে ঢাকার হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোকে সাভারে স্থানান্তর করা হবে এবং সেখানে পরিবেশসম্মত উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। বর্তমান শতাব্দীর গোড়ার দিকে শিল্প মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সাভারে প্রায় ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ‘ঢাকা ট্যানারি এস্টেট’ নির্মাণ শুরু করে। বেশ কয়েকবার টাকার অংক বৃদ্ধি করে প্রকল্পের কাজের কলেবর বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ওপর। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি), স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ডাম্পিং ইয়ার্ড, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করা জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখে। কিন্তু প্রকল্পের সময় ১১ বার বৃদ্ধি করেও চীনা কন্ট্রাক্টর জেএলইপিসিএলের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে প্রকল্পটি কৃতকার্যতার মুখ দেখেনি। সিইটিপির মাধ্যমে পানি, লবণ, কেমিক্যালস ইত্যাদি কোনোটিই ঠিকমতো পরিশোধিত হচ্ছে না। তাছাড়া সাভার শিল্পনগরীতে স্থানান্তরিত কারখানাগুলো থেকে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হলেও সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা রয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ঘনমিটারের।

প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব, অকৃতকার্যতা এবং প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই হাজারীবাগের শিল্প কারখানা জোরপূর্বক সাভারে স্থানান্তরে ট্যানারি মালিকরা সরকারকে দোষারোপ করে। তবে ১৫৫টি ট্যানারি প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ ও ক্ষতিপূরণ দেয়া সত্ত্বেও স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ধীরগতির ফলে এবং হাজারীবাগের দূষণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের পৌঁছলে পরিবেশবিদ, আইনজীবী, সুশীল সমাজসহ দেশের সচেতন নাগরিকরা ট্যানারিগুলো হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরের পক্ষে অবস্থান নেন। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে সরকার ২০১৭ সালের এপ্রিলে সব ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করে। উপরন্তু চীনা কোম্পানিটির কাজে অবহেলা, ফাঁকি দেয়া এবং মাত্রাতিরিক্ত বিলম্ব করা ছিল সরকারেরও ধারণার বাইরে। বলতে গেলে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিক চীনা

কোম্পানি জেএলইপিসিএলের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। মাত্র ১৩০-১৩৫টি কোম্পানি সাভারে তাদের কারখানা স্থানান্তর করতে পেরেছে। জমি বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেক ছোট ছোট ট্যানারি মালিক অর্থাভাবে সাভারে ট্যানারি শিল্পনগরীতে কারখানা নির্মাণ করতে পারেনি।

দৈনিক কী পরিমাণ বর্জ্য পরিশোধনের জন্য পাওয়া যাবে, এ ব্যাপারে চীনা প্রতিষ্ঠান এবং বুয়েট বিশেষজ্ঞদেরও অনুমান পরিমাপের ঘাটতি ছিল। যেখানে ২৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা সিইটিপিতে রাখা হয়েছে, সেখানে সব কারখানা পুরোমাত্রায় উৎপাদনে থাকলে এর প্রায় দ্বিগুণ বর্জ্য উৎপাদিত হওয়ার কথা। সিইটিপির ত্রুটি, ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত বর্জ্য সিইটিপিতে আসার ফলে কারখানার বর্জ্য ও পানি অপরিশোধিত অবস্থায় ধলেশ্বরী এবং বংশী নদীতে মিশে যাচ্ছে। এ দুটি নদীর সঙ্গে কালীগঙ্গা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর সংযোগ থাকায় ছয়টি নদীর পানিই দূষিত হচ্ছে। এসব নদ-নদীর মাছ ও জলজ উদ্ভিদের অস্তিত্ব বিপন্নপ্রায়। তাছাড়া সিইটিপিতে কঠিন বর্জ্য পৃথককরণ ও পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। এসব নদীতীরবর্তী জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য, কৃষি ও জীবনযাত্রা দূষণের শিকার হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর বেশ কয়েক বছর ধরে ট্যানারির দূষণ সম্পর্কে আপত্তি দিয়ে আসছে। এরা বিসিক ও ট্যানারি মালিকদের বিরুদ্ধে জরিমানার আদেশ দিয়েছে। গত ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সাভারের চামড়া শিল্পনগরী বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়। কিছু বড় বড় শিল্প-কারখানাকে এর আগে পরিবেশগত ছাড়পত্র দিলেও বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর আর কোনো কারখানাকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না, যাদের আগে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে তাদের ছাড়পত্র নবায়নে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।

বর্তমানে দেশের ট্যানারি ও চামড়া শিল্প মহাসংকটের মধ্যে পড়েছে। নানা সমস্যার কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় বিদেশী গ্রাহকরা ক্রমান্বয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া এ শিল্পের মূল চ্যালেঞ্জ হলো কমপ্লায়েন্স। পরিবেশগত, সামাজিক এবং গুণগত—এ তিনটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ট্যানারি ও চামড়া শিল্পের ঘাটতি দীর্ঘদিনের। ফলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ক্রেতা আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ‘লেদার ওয়ার্ক গ্রুপ’ (এলডব্লিউজি) সনদ পাচ্ছে না বিধায় এ শিল্পের অবাধ রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ট্যানারি শিল্পের উৎপাদন ও চামড়া প্রক্রিয়াকরণ বন্ধ করে দেয়া হলে চামড়া শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবে। শুধু আমদানি করা চামড়ায় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না।

ট্যানারি শিল্প বন্ধ করে দেয়া পরিবেশ দূষণ রোধে কোনো বাস্তব সমাধান নয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ে গঠিত চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্ট টাস্কফোর্সের গত ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় এ শিল্পের বর্তমান অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শিল্পমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর অভিমত প্রকাশ করা হয়, ট্যানারি শিল্পনগরী বন্ধ করা যাবে না বরং সিইটিপি কার্যকর, সঠিকভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশসম্মত উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এপেক্স ও বে ট্যানারিদ্বয়কে আলাদা ইটিপি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। আরো কয়েকটি বড় ট্যানারি নিজ উদ্যোগে ইটিপি স্থাপনের অনুমতি নিয়ে কাজ শুরু করলে সিইটিপির ওপর চাপ কমবে। তবে স্থাপিত সিইটিপির ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ঠিক করা এবং কার্যকর পরিশোধনের ব্যবস্থা করা জরুরি।


সাভারের ঢাকা ট্যানারি এস্টেটের আরো বেশকিছু অসুবিধা রয়েছে। শিল্প-কারখানার মালিকরা এখনো বিসিকের কাছ থেকে বরাদ্দ করা প্লট বা জমির লিজ দলিল বুঝে পাননি। ফলে জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাংকঋণ নিতে অসুবিধা হচ্ছে। অন্যদিকে চুক্তির শর্ত মোতাবেক জমির নির্ধারিত মূল্য বুঝে না পেয়ে বিসিক লিজ দলিল রেজিস্ট্রি করছে না।

ট্যানারি মালিকদের মধ্যে যাদের হাজারীবাগে জমি রয়েছে তারা এ জমি বিক্রিও করতে পারছেন না। কারণ পরিত্যক্ত ট্যানারি এলাকাকে সরকার ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ছোট ছোট ট্যানারি মালিকরা অর্থাভাবে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর বা নতুন স্থাপনা তৈরি করতে পারেননি। এ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৩০টি। সাভারের জমি পায়নি এ ধরনের ট্যানারির সংখ্যাও কম নয়। অনেকগুলো এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

ট্যানারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা এ দেশেরই সন্তান। তারা কোনো ভিনগ্রহ থেকে আসেনি। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জরিমানা আদায় এবং শিল্প-কারখানা বন্ধ করে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়ে এর কোনো সমাধান করা যাবে না।


বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের যে উত্থান ও সম্প্রসারণ হয়েছে, এর পেছনে সরকারের ব্যাপক নীতি ও আর্থিক সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ ও অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা কাজ করেছে। করোনাকালে এ শিল্পকে যথেষ্ট প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হয়েছে। চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে এবং পরিবেশসম্মত উপায়ে ট্যানারি প্রক্রিয়াকরণ ও চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে সরকারের এরূপ বড় উদ্যোগ প্রয়োজন। অবশ্য বর্তমান শতাব্দীর গোড়া থেকে এ পর্যন্ত চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগ ও সদিচ্ছার কমতি ছিল না। তবে এ কথা স্বীকার্য, এ বৃহৎ শিল্পটি সম্পূর্ণ স্থানান্তর করে এক জায়গায় নিয়ে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থা করার জন্য যে সামর্থ্য ও দক্ষতার প্রয়োজন, তা বিসিকের ছিল না। সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়েরও অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

চামড়া ও ট্যানারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণে জর্জরিত। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য চামড়া শিল্পের খেলাপি ঋণ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলীকরণসহ আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত করোনাকালীন সুনির্দিষ্ট ‘প্রণোদনা’ ট্যানারি ও চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা নানা শর্ত ও জটিলতার কারণে গ্রহণ করতে পারেনি। উপরন্তু করোনা মহামারী তাদের ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে এসেছে। দেশে-বিদেশে অব্যাহত লকডাউনের কারণে উৎপাদন, বিক্রয় ও রফতানি দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে এবং প্রায় চার-পাঁচ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ শিল্পকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কেউ কেউ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে চামড়া শিল্প কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেছেন। বর্তমান সিইটিপি সচল এবং পরিবেশসম্মত উপায়ে পরিশোধন উপযোগী করার জন্য কোনো অভিজ্ঞ ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা যেতে পারে। আর এটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ওপর অর্পণ করা যেতে পারে। একটি সিইটিপিতে সব কারখানার বর্জ্য পরিশোধন সম্ভব নয় বিধায় দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে সরকারি জমিতে পিপিপি উদ্যোগে আরো একটি সিইটিপি স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে।

তৈরি পোশাক শিল্পে যেসব সরকারি নীতি সহায়তা যেমন—ব্যাক টু ব্যাক এলসি, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ, সহজ শর্তে ঋণ, নগদ সহায়তা ইত্যাদি দেয়া হয়েছে। রফতানিমুখী চামড়া শিল্পের জন্যও অনুরূপ সহায়তা দেয়া হলে এ শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

লেখক: সাবেক সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]