শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
অর্থনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রাধান্য পাবে মানুষ
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২১, ৭:০৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসায় মহামারি-উত্তর বাস্তবতা চোখের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে সমঝোতা ও ব্যবস্থাপনার একটি ক্রমঅগ্রসরমান রূপ ফুটে উঠেছে, যা কি না বিকাশমান বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তি।

অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, মন্দার পর আসে চাঙ্গাভাব। ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, অর্থনৈতিক উৎপাদন ও কার্যক্রম চাঙ্গা হচ্ছে ক্রমশ। নজিরবিহীন মাত্রা ও জটিলতার এক টিকাদান কর্মসূচি স্বাস্থ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। রেকর্ড কম সময়ে তা বিপন্নতার মাত্রা কমিয়েছে। বলা যায়, স্বাভাবিকতায় ফিরে এসে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মঞ্চটা এখন তৈরি।
 
এ কারণে এটি ভারতের জন্য এক সুযোগের মুহূর্ত। এই ক্রান্তিলগ্নে ভারত যেসব সিদ্ধান্ত নেবে তা থেকেই ইঙ্গিত মিলবে, অধিকতর সুন্দর এক ভবিষ্যৎ কোথায় নিহিত বলে মনে করছে দেশটি।

করোনাভাইরাস মহামারি দেখিয়েছে, বর্তমানের চেয়ে কম তো নয়ই, বরং আমাদের দরকার আরো আন্ত সংযুক্ত একটি বিশ্ব। অভিন্ন সমস্যাগুলোর অবশ্যই অভিন্ন সমাধান থাকা দরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত কয়েক মাস ধরে জি-৭, জি-২০, কপ-২৬, প্রথম কোয়াড শীর্ষ সম্মেলন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি, ব্রিকস এবং সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন কাউন্সিলে মহামারি-পরবর্তী বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থার রূপকল্প তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চের মাধ্যমে একগুচ্ছ কৌশল এবং লক্ষ্য তুলে ধরেছেন, যা ভারতের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে সবার জন্য ভালো এক আগামীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করবে। ভারত জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড় ধরনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের ব্যাপারে নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা প্রদানে ভূমিকা রেখেছে। উন্নয়নমূলক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছি।

সাম্প্রতিকতম ঘটনায় গ্লাসগোতে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘পঞ্চামৃতের’ মাধ্যমে ভারতের জলবায়ু ভাবনার রূপরেখা দিয়েছেন। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের অজীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা ৫০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করা এবং নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শক্তির চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করার পথ ত্বরান্বিত করবে। পাশাপাশি ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ এক বিলিয়ন টন হ্রাস ও কার্বনের তীব্রতা ৪৫ শতাংশের নিচে আনা হবে। আর কার্বন নিঃসরণ ২০৭০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’তে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়ন এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়েও তাদের তৎপরতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারতের সূচনা করা দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স এবং কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং অভিযোজন প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই সংস্থাগুলোর অধীন বৈশ্বিক পর্যায়ে আন্ত সংযুক্ত সৌরশক্তি অবকাঠামোর জন্য ‘এক সূর্য, এক বিশ্ব, এক গ্রিড’ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ প্রতিরোধী অবকাঠামোর জন্য ‘ঘাতসহ দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য অবকাঠামো’ কর্মসূচি চালু করেছেন।

ভারত জাতীয় হাইড্রোজেন মিশনের অধীনে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদন ও রপ্তানির এক বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ারও চেষ্টা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে টেকসই জীবনাচরণের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি যে বক্তব্য দিয়েছেন, রোমে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে তা প্রশংসিত হয়। তিনি ‘লাইফ’ (Life) নামে এক শব্দের এক বিশ্ব আন্দোলনেরও প্রস্তাব করেছেন। এর মূল বিষয় হচ্ছে, পরিবেশ অনুকূল জীবনধারা। টেকসই জীবনধারার ব্যাপারে ভারতের নিজস্ব উদাহরণ বৈশ্বিকভাবে গ্রহণ করা গেলে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লড়াইকে আমূল বদলে দেবে।

করোনা মহামারি সরবরাহ চেইনকে ঝুঁকিমুক্ত ও আরো স্থিতিশীল করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও তুলে ধরেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের সরবরাহ চেইন উন্নত করার জন্য তিনটি মূল বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন : বিশ্বস্ত উৎস, স্বচ্ছতা ও নির্ধারিত সময়সীমা।

‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ কর্মসূচি স্থিতিস্থাপকতা এবং নির্ভরযোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে। এটি ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহ চেইন হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়।

এটি আর্থিক সহায়তা, তারল্য সরবরাহ, শিল্পের জন্য আর্থিক সহায়তা, ব্যবসা করার পদ্ধতি আরো সহজ করা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানোর বৃহত্তর নীতি কাঠামোরই একটি অংশ।

একটি উৎপাদনসংক্রান্ত বিশেষ প্রণোদনা স্কিম বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে। এটি দেশীয় উৎপাদন বাড়াচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় সক্ষম ভারতীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। মহাকাশ, প্রতিরক্ষা এবং পারমাণবিক শক্তির মতো এত দিনের নিয়ন্ত্রিত খাতগুলোতে বেসরকারি অংশগ্রহণের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির আওতায় একুশ শতকের উপযোগী কর্মশক্তি গড়ে তোলা ও ভারতকে বৈশ্বিক শিক্ষা ও দক্ষতা তৈরির কেন্দ্রে পরিণত করার কাঠামো তৈরি হচ্ছে।

ভারত তার অবকাঠামোর উন্নতিতেও বিশাল সরকারি বিনিয়োগ করছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘গতি শক্তি’ কর্মসূচি (মাল্টিমোডাল সংযোগ বিষয়ক জাতীয় মাস্টারপ্ল্যান) সারা দেশকে সংযুক্ত করবে। এটি সংযোগের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি আনার পাশাপাশি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষকে এক ছাতার নিচে আনবে।

ভৌত অবকাঠামোর উন্নতির পাশাপাশি থাকবে ডিজিটাল সংযুক্তি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ইমিউনাইজেশনের মতো উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া। বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি ‘জন ধন’ ও আধারের মতো বিশ্বেও বৃহত্তম বায়োমেট্রিক কর্মসূচি সরাসরি সহায়তার অর্থ সরবরাহকে ব্যাপকভাবে এগিয়ে নিয়েছে। এটি এখন অর্থ-প্রযুক্তিগত বিপ্লবে গতি সঞ্চার করছে। জয় জীবন ও আয়ুষ্মান ভারত সবাইকে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মাধ্যমে জীবনকে বদলে দিচ্ছে।

এসডিজি-৩-এর আওতায় আমাদের ওপর সব বয়সের সবার স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করার দায়িত্ব অর্পণ করেছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের জন্য ‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য’ বিষয়ে সামগ্রিক রূপকল্প তুলে ধরেন।

করোনাভাইরাস মহামারি আন্তর্জাতিক কর্মপ্রক্রিয়াকে ডিজিটাল পরিসরে নিয়ে গেছে। দক্ষ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালিত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচির পোর্টাল কোউইন থেকে শুরু করে ডিজিটাল ভারত উদ্যোগ, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রমাণ করছে ভারত নিজেকে অনেকটাই ডিজিটাল করে নিয়েছে।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভারত অনেক উন্নয়নমূলক সমস্যার জন্য উপযুক্ত সমাধানগুলো তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এ দেশ উন্নয়নের এক প্রমাণস্থল। ভারতের সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতার বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশকে তারা অনেক ধারণা দিয়ে সহায়তা দিতে পারবে। এর আগে জি-৭ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতের তৈরি ওপেন সোর্স ডিজিটাল সলিউশনগুলো সবাইকে উপকৃত করবে।

করোনা মহামারির অন্ধকারতম দিনগুলোতেও ভারত ভুলে যায়নি যে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি অংশ। সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে ভারত দেড় শতাধিক দেশে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। এর বিনিময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে সবার সমর্থনও পেয়েছে ভারত।

নিজ দেশে সফল টিকাকরণ অভিযান চলমান অবস্থায় ভারত তার প্রতিবেশী এবং অংশীদারদের কাছে আবার টিকা রপ্তানি শুরু করেছে। এগুলোসহ আরো অনেক উদ্যোগের মাধ্যমে ভারত আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম এক নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরিতে অন্যতম এবং গঠনমূলক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। সে হবে এমন এক বিশ্বব্যবস্থা, যা নিছক অর্থনীতির সীমা ছাড়িয়ে মানুষ ও তার মঙ্গলকেই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হিসেবে দেখবে।

লেখক:  ভারতের পররাষ্ট্র সচিব



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]