স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। একমাত্র দেশ হিসেবে তিনটি মানদণ্ডই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা বললে আসলে এতো অল্প সময়ে বলে শেষ করা যাবে না। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গাঁথা, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই সূত্রে গাঁথা।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫৩৫তম পর্বে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সংসদ সদস্য, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর বজলুর রশীদ বুলু। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা বললে আসলে এতো অল্প সময়ে কথা বলা শেষ হবে না। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের অনুমোদন পাওয়ার মধ্য দিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের এ সময়ে এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন নিঃসন্দেহে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিন মানদণ্ডে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। এই তিনশর্তই পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এটি একটি আনন্দের খবর, সাফল্যেরও খবর আমাদের জন্য। বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল আজ বাংলাদেশ। সদ্য যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ দূরদৃষ্টির মাধ্যমে মাত্র ২ বছরের মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়ত এই উন্নয়ন আরো আগেই সম্ভব হতো। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়নে ভীত হয়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ও দেশের অভ্যন্তরে থাকা খন্দকার মোশতাক-জিয়াউর রহমানদের বিশ্বাস ঘাতকতার শিকার হন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে তুলনা করা হচ্ছে গত শতকের সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে। বিশ্বের বুকে সর্ব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিস্ময়। আর বিস্ময়ের সূচনা জাতির পিতার হাত ধরে এগিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণে বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের যত উন্নয়ন তা শেখ হাসিনার অবদান। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মত অন্তর দিয়ে এ দেশের মানুষকে ভালোবাসে তাই যে কোনে অর্জন শেখ হাসিনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেন। শেখ হাসিনার অধীনেই বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বনির্ভর হয়ে ওঠা এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের আরেকটি বড় চাবিকাঠি হলো খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যার উন্নয়নে কাজ করা হয়নি। বাংলাদেশকে বর্তমানে বিশ্বে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। একমাত্র দেশ হিসেবে তিনটি মানদণ্ডই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভায় বুধবার এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্রাজুয়েশনের মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল। সিডিপি একইসঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ ইতোমধ্যে সিডিপির সুপারিশ অনুমোদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এগুলো স্পর্শ করতে পারেননি। এ অর্জন অনন্য ও অতুলনীয়। তিনি টানা ৪০ বছর দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সভাপতি। ১৭ বছরের বেশি সময় চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বিপন্ন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইতিহাসের সঠিক ধারায় এনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৩১টি বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন এবং চল্লিশটির অধিক বই লিখেছেন। বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামো উন্নয়নে এক নবজাগরণ ঘটিয়েছেন। ১২ বছর আগের মাথাপিছু আয়কে চারগুণ বাড়িয়ে ২২২৭ ডলারে উন্নীত করেছেন। দেশের রিজার্ভকে সর্বকালের রেকর্ডে উন্নত করে ৪৮.৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ, স্যানিটেশনসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। যার স্বীকৃতি দিয়ে চলছে বিশ্ব সম্প্রদায়ও। এসডিজি বাস্তবায়ন অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জনে যুক্ত হচ্ছে নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ পৌঁছে যাচ্ছে এক সমৃদ্ধ মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে অনন্য উচ্চতায়। তাইতো তিনি আজ জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী।
বজলুর রশীদ বুলু বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গাঁথা, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একইসূত্রে গাঁথা। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ হিসেবে জাতিসংঘ নির্ধারিত তিনটি মানদণ্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং আরও অধিকতর উন্নয়নের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন অগ্রগতির সব সূচকে যুগান্তকারী মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বসভায় উন্নয়নের রোল মডেল। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের বেশির ভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করছে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। একসময়ের তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে অপার বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর,কর্ণফুলী ট্যানেল, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়নে রোল মডেল বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং মহাকাল তাঁর নেতৃত্বকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।