বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসানোয় আপত্তি তোলা ভুল ছিলো জানিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন রাজশাহীর কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস আলী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লাইভে এসে তিনি তার বক্তব্যের বিষয়ে ক্ষমা চান।
আব্বাস আলী বলেন, ম্যুরাল নিয়ে ছড়ানো অডিওটা একটি ঘরোয়া আড্ডার। সেখানে আমি গল্পে কিছু কথা বলেছি, কিন্তু বাস্তবে আমি ম্যুরালের বিরোধিতা করিনি... এটি আমি ভুল করে থাকতে পারি। মানুষই তো ভুল করে। এ জন্য আমি ক্ষমা চাই, কিন্তু আমাকে এ জন্য যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে তা অনেক বেশি।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে মেয়র আব্বাসের একটি অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তাতে আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, সিটি গেট আমার অংশে…ফ্রার্মকে দিয়েছে তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দিবে; ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা, কিন্তু একটু থেমে গেছি, গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে…যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর, সেটা ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না (রাখবো না), সব করবো, তবে শেষ মাথাতে যেটাওটা (ম্যুরাল)।
এটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে শুরু হয় সমালোচনা। ২৩ নভেম্বর রাতে এক ফেসবুক পোস্টে আব্বাস দাবি করেন, ওই অডিও এডিট করা।
মেয়র আব্বাসকে বুধবার দুপুরে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার তার ওপর অনাস্থা জানান পৌরসভার সব কাউন্সিলর। তাকে আওয়ামী লীগের পদ ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবিতে শুক্রবার দিনভর রাজশাহী নগরীতে চলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ-সমাবেশ।
ওই অডিও রেকর্ডের বক্তব্যের বিষয়ে লাইভে আব্বাস বলেন, ম্যুরাল নিয়ে আমার কিছু কথা এখানে বলার আছে। কাটাখালীতে দুটি গেট করার জন্য আমি ভিডিও আপলোড দিয়েছিলাম। সবার মতামত চেয়েছিলাম। এখানে যে বিচ্যুতিটা আমার ঘটেছে, যে জিনিসটা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি একটা মানুষ, একটা দল করি, কিন্তু আমি মুসলমান। আমাদের এখানে একটা মাদ্রাসা আছে।
‘ম্যুরালের বক্তব্যটা নিয়ে যে কথা আসছে, ওই মাদ্রাসার যে বড় হুজুর, মাঝেমধ্যেই জানাজা বা অনুষ্ঠানের কারণে আমার যাওয়া হয়...মানুষটা বড় হুজুর, জামাল উদ্দিন মাহমুদ সন্দিপি... আমি মাদ্রাসায় বসেছি, কথা তুলতে তুলতে ভিডিওটা তো দেখলাম, ম্যুরালটার বিষয়ে কোনো চেঞ্জ আনা যায় না? কী সমস্যা? উনি ব্যাখা দিলেন। বোঝালেন। আমি শুনেছি। আমি তো মানুষ, আমি তো একটা মুসলমান। আল্লার কথায় আসলে কে না দুর্বল হয়। আমিও একটু দুর্বল হলাম। আমি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করিনি। বলেছি, আমি ম্যুরালটা করলে ইসলামে ঠিক হবে না। এটা পাপ হবে। আড্ডার মধ্যে অনেক গল্পই তো করে। আমিও হয়তো করেছি। হয়তো ভুল করেছি, কত বড় ভুল করেছি?
তিনি দাবি করেন, ওই অডিও ভাইরালের জেরে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর কাউন্সিলরদের হুমকি দিয়ে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাতে বাধ্য করা হয়। তার কাটাখালীর দোকানে হামলা হয়। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানাননি, কার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছেন।
আব্বাস বলেন, আমি তো মানুষ। আমি তো ভুল করতেই পারি। তার জন্য ক্ষমা চাই। তারপরও মনঃপূত না হলে বহিষ্কার করবেন, আমার নামে মামলা দিবেন যতোটুকু ভুল করেছি, তার জন্য, কিন্তু একের পর এক অত্যাচার জুলুম। আমার অসুস্থ মা তিন-চার দিন না খেয়ে আছে... ‘... আমি কী এতো বড় অন্যায় করেছি? অন্যায় করলে তো আইন আছে। এভাবে এতো কিছু করা ক ঠিক?... আমাকে বলা হচ্ছে, আমি দলের অনুপ্রবেশকারী। আমি যদি আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোনো দল জীবনে থাকি তাহলে সব শাস্তি মাথা পেত নেবো... কেউ প্রমাণ করতে পারলে সুইসাইড করবো।
লাইভে তিনি সবার কাছে সাহায্য চেয়ে বলেছেন, যদি আমি মনে করেন, বড় অন্যায় করেছি, আমার পাশে দাঁড়ানোর দরকার নাই। যদি অন্যায় না হয় আমার পাশে দাঁড়ান, অনেক সহযোগিতা চাই। আমার অসহায় মাকে দেখতে দিন। কয়দিন আগে চিকিৎসা করিয়ে এসেছি। চার মাসের বাচ্চার কাছে যেতে চাই। আমার পাশে একটু দাঁড়ান প্লিজ। আল্লার ওয়াস্তে দাঁড়ান। আমি ভুল করেছি, তার জন্য আইন আছে। আমি আজ কয়েক দিন ধরে না খেয়ে আছি। আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাকে হেল্প করুন। আমাকে বাঁচান প্লিজ।
ভাইরাল ওই অডিও রেকর্ডের জেরে মেয়র আব্বাসের নামে গত বৃহস্পতিবার রাতে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। এর আগে দলীয় কার্যালয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে বুধবার দুপুরে আব্বাসকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে কেন দলীয় সদস্যপদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে না, জানতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আব্বাস আলী রাজশাহীর কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।