বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর ধরে সমালোচনা করে আসছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ সমালোচনা জোরালো হয়েছে। গত ৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত ‘মানবাধিকার চর্চার ওপর দেশভিত্তিক প্রতিবেদন ২০২০’-এ বাংলাদেশে নির্বাচনগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম, গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকার চর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতা অনেক কম। বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ‘আংশিক স্বাধীন’ দেশগুলোর তালিকায় আছে।
পলিটিকোর ফাঁস করা তালিকা এবং দেশ বা সরকারগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই তালিকায় ফ্রান্স, সুইডেনের মতো পরিপক্ব গণতন্ত্রের দেশ যেমন আছে, তেমনি আছে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির কারণে বিতর্কিত ফিলিপাইন ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোও। এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাদ পড়েছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমন্ত্রিতদের মধ্যে আছে ইসরায়েল ও ইরাক। তবে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র মিসর ও ন্যাটো শরিক তুরস্ককেও গণতন্ত্র সম্মেলনে ডাকছে না।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো গণতন্ত্র প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা একই সঙ্গে চীনের কৌশলগত প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের ছাড় দেওয়ারও সমালোচনা করেছে। বিশেষ করে, তারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রশ্নে ভারতের মতো সমালোচিত কিছু দেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোয় প্রশ্ন তুলেছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বাইডেনের সম্মেলনে এমন অনেক দেশের আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, যাদের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়েও নাজুক। চীনকে মোকাবেলার বিষয়টি মাথায় রেখে যদি সম্মেলন আয়োজন করা হয়, তাহলে তা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন থাকবে। এটি স্পষ্ট হলে দেখা যাবে অনেক দেশ শীর্ষ পর্যায়ের বদলে মন্ত্রী বা কর্মকর্তা পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করাচ্ছে।
ইমতিয়াজ আহমেদ আরো বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমন্ত্রণ পেলে বাংলাদেশ যাবে। আমন্ত্রণ না পেলেও এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরই এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেক সমস্যা আছে।’
শেষ পর্যন্ত যদি গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো হয়, তাহলে তা এ দেশের জন্য কোনো বার্তা কি না—এ প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এর মধ্যে হয়তো কোনো বার্তা থাকতে পারে। আবার আমন্ত্রণ না জানানো হলে এর পেছনে কোনো পক্ষের ‘লবিং’ (তদবির) কাজ করেছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। সারা বিশ্বেই এখন গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিরাও নির্বাচিত হন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ডাকা হবে না, এমন তথ্য এখনো আমরা জানি না। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন ভালো। আসলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চালানো হয়। অনেকেই দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন।’