প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১, ৮:১০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মানুষ বড়ো হলে বুঝি
স্মৃতিকাতরতায় ভোগে?
ছেলেবেলা ডেকে যায়?
কৈশোর, যৌবনের দিনগুলি
বারে বারে হাতছানি দেয়?
মুখ টিপে কেউ হেসে বলবে হয়তো
বুড়ো হলে এই রোগে ধরে -
স্মৃতিকাতরতা চেপে বসে।
আমি তা জানি না,
বয়স আমার কাছে সংখ্যা মাত্র।
শুধু যখন আকাশে
ভীষণ মেঘ করে, তখন না
মনটা কেমন করে উঠে
বাতাসের বেগে যেন
মায়ের আঁচল দেখতে পাই।
সদা চঞ্চল সেই আঁচল
এই মেঘলা দিনে তা
আরো চঞ্চল হয়ে উঠতো
উঠানের শুকনো ধান তুলতে
রান্নার লাকড়ি বাঁচাতে
আবার কখনো আমাদের
কাপড় তুলে গুছিয়ে নিতে।
সদ্য মাটির স্পর্শ নেয়া বৃষ্টির পানিতে
আমি যেন সেই আঁচলের গন্ধ পাই
কেমন মা মা গন্ধ
কেমন মায়া লাগা হৃদয় অবসন্ন করা
তেল, ঝাল, নুনের ছিটা লাগা
আঁচলের গন্ধ, যা আঁকড়ে না ধরলে
এক সময় আমি ঘুমাতে পারতাম না।
বৃষ্টির ছপাত ছপাত শব্দ
চোখে ভেসে আনে এক জোড়া
পাম্প সু, বৃষ্টির দিনে পায়ে দিয়ে
এক জোড়া শক্ত সামর্থ্য পা
ঘুরে বেড়াতো পানি ভরা
উঠান দিয়ে।
তার বিশাল ছাতার মতো ছিলো
বিশাল বুক যেখানে আমি
লুটোপুটি খেতাম।
যার মুখ থেকে ভেসে আসতো
সুবাসিত পানের গন্ধ।
বাবা..!
এখন এতো শব্দের মাঝে
খুঁজে ফিরি কারো পায়ে পাম্প
জুতো পরে ছপাত ছপাত শব্দ
আর ভুর ভুর করা পানের গন্ধ।
কিন্তু কোন সুদূরে হারিয়ে গেছে
সেই চঞ্চল আঁচল, সেই সাহসে ভরা
প্রসারিত বক্ষ -
হারিয়ে গেছে অল্পতে অভিমানে
ঠোঁট ফুলানো ছেলে বেলা।
বলতে পারো কোথায় গেলে
খুঁজে পাবো তাঁদের,
সেই গন্ধমাখা দিনগুলো।
ঝড়ের দিনে মায়ের সেই ভয়ার্ত কন্ঠ-
"বাবা, আজান দে, আজান দে"।
কোথায় পাবো গেলে পাবো
বাবার সেই মায়াভরা হাত
যা আশ্বাস দেবে-
ভয় পাস না খোকা
আমি তো আছি!
তোর একদম পাশেই আছি!
লেখক: সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, সাতক্ষীরা