পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচন আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে এখনো স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। পাবনা জেলা নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে শামসুল হক টুকুকে অনুরোধ করার পরও সেটি তিনি আমলে নিচ্ছেন না।
এদিকে পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এক মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থককে হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু।
গত পরশু শুক্রবার সকালে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা পশ্চিমপাড়ার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল বাতেনের সমর্থক, আওয়ামী লীগ কর্মী ইয়ামিন আলী। এ সময় তিনি পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর সামনে পড়েন। তখন ইয়ামিনকে শামসুল হক ‘আমি মায়াদয়া করব না কিন্তু। পিষে দেব।’ বলে হুমকি দেন।
বেড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শামসুল হক টুকুর ছেলে আসিফ শামস।
এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন শামসুল হকের সহোদর আবদুল বাতেন এবং ভাইয়ের মেয়ে সাদিয়া ইসলাম। আবদুল বাতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমানে বেড়া পৌরসভার মেয়র। সাদিয়া ইসলাম শামসুল হকের বড় ভাই বদিউল আলমের মেয়ে।
একই পরিবারের তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী হওয়ায় বেড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। নিজের সন্তানকে ভোটে জেতানোর জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এলাকায় অবস্থান করছেন শামসুল হক। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হুমকি ও এলাকাছাড়া করার অভিযোগও উঠেছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইয়ামিন আলীকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন শামসুল হক। আবদুল বাতেনের পক্ষ নেওয়ায় ইয়ামিনকে হুমকি দিয়ে শামসুল হক বলেন, ‘ওখানে যাবি না। তোগোরে পুলিশ দিয়ে মারতেও আমার ভয় লাগে, খারাপ লাগে। যে কয়টাকে মারবনে, চার-পাঁচটাকে...একটা আমিনুল, দেহিসনে কী অয়।’
নারকেলগাছ প্রতীকের প্রার্থী আবদুল বাতেনের নির্বাচনী ক্যাম্পে না যেতে নির্দেশ দিয়ে শামসুল হক বলেন, ‘যাবি, না যাবি না? আজকে নৌকার মিছিল করবি। নৌকা হলো জাতির প্রতীক। আর ওই শালা খেজুরগাছ সেদিন ছিল আউয়াল আজ হলো বাতেন (এ সময়ে পাশ থেকে একজন বলেন, খেজুরগাছ নয়, নারকেলগাছ)।...ওখানে বসবি ক্যা? মালপাতি দেয়?’
হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়ামিন বলেন, ‘আমি শুক্রবারই পরিবারসহ এলাকার বাইরে চলে এসেছি। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল বাতেন বলেন, ‘আমার কর্মী ও সমর্থকদের এলাকাছাড়া করার চেষ্টা করছেন সংসদ সদস্য ও তাঁর পুত্র। এলাকায় তাঁদের জনসমর্থন নেই। তাঁরা প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচনে জয়ের চেষ্টা করছেন।’
স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, ‘আমার কর্মীরাও এখন প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে হাঁটতে ভয় পায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকায় অবস্থান করে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। বলছেন যে নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা শ্মশান বানিয়ে দেবেন।’
বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান গত ১৪ নভেম্বর শামসুল হককে একটি চিঠি পাঠান। সেখানে বলা হয়, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বেড়া পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন প্রভাবমুক্তভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান না করার জন্য আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো।’
নির্বাচন কর্মকর্তার চিঠি পাওয়ার পরের দিন ১৫ নভেম্বর সকালে শামসুল হক বৃশালিখা পল্টন সমাজের আয়োজনে এক দোয়া ও আলোচনাসভায় অংশ নেন।
আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানের বিষয়ে শুক্রবার রাতে শামসুল হক টুকু বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাকে চিঠি দিয়ে বলেছে যে ‘আমি যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলি, আর সম্ভব হলে যেন এলাকার বাইরে থাকি।’ কিন্তু আমি তো এলাকার মানুষ, আমি যাবটা কোথায়? আমি এখানকার ভোটার। আমি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কোনো কাজ করব না।”
প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থীর এক সমর্থককে পিষে মেরে ফেলার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, ‘এটা ঠিক না। আমি সেটা বলব কেন? এগুলো মিথ্যাচার।’ পুলিশের ভয় দেখানোর প্রসঙ্গে শামসুল হক বলেন, ‘আমার তো কর্মী বাহিনীই আছে। পুলিশ লাগবে কেন?’
নিকটাত্মীয়দের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, ‘এটাই তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই দেখা যাচ্ছে।’
জানতে চাইলে বেড়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উনাকে এরই মধ্যে আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করি, উনি আজ এলাকা ছেড়ে যাবেন। না হলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব।’