কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে পুরান ঢাকার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশাসনের প্রচেষ্টায় নানাবিধ সমস্যা উত্তরণ করে নতুন রূপে আবর্তন করতে শুরু করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার নিয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ, আছে নিয়মের গ্যাড়াকল। এসকল সমস্যার কারণেই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রতি শিক্ষার্থীদের অনীহা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে বই নিয়ে প্রবেশ করা যায় না, ক্যাটালগ থেকে বই খুজতেই ২০-২৫ মিনিট সময় পার, বিভাগ ভিত্তিক বই সাজানো থাকে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডে প্রবেশ করা যায় না, অতিরিক্ত লাইব্রেরী কার্ড দেখাতে হয়, গ্রন্থাগারের কর্মচারীদের রূঢ় ব্যবহার, ক্যাটালগে বই এর নাম থাকলেও সেল্ফ এ বই খুজে পাওয়া যায় না, জায়গা সংকুলান। একে তো বই নেই তার উপর গ্রন্থাগারেও বই এর সংকট।
লোক প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাটালগ থেকে বইয়ের প্রথম অক্ষর অনুসারে অনেক বই থেকে নিজের পছন্দের বইয়ের নাম বের করে ওটার ক্যাটালগ নাম্বার লিখে গ্রন্থাগারে গিয়ে জমা দেয়া। তারপর সেখানে কর্মচারীরা ক্যাটালগ অনুসারে বই খুঁজে দেয়া। অথচ শিক্ষার্থীদের সরাসরি বই নেওয়াতে এক্সেস থাকলে সুবিধা হতো। এত প্রসিডিওরে সময়ও নষ্ট হতো না আর কষ্টও লাঘব হতো। অনেক সময় তো ক্যাটালগে বই থাকলেও বই খুজতে গিয়ে ৩০-৪০ মিনিট পার করে এসে দায়িত্বরতরা বলেন বই নেই।
গ্রন্থগারের নিয়মিত একজন শিক্ষার্থী জানান, আমাদের লাইব্রেরীতে পর্যাপ্ত বই নেই, আমাদের ও বই নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না, এজন্য আমরা অনেক সময় বই কয়েকটি ভাগে কেটে নিয়ে গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে হয়।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে গিয়ে জানা যায়, এখানে মোট পুস্তক সংখ্যা ৩১ হাজার ৬০০ যা প্রয়োজনের তুলনায় অপার্যপ্ত। সুনামধন্য ৮ টি পাবলিশার্স এর প্রকাশনায় ই-বুকস এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৪০০। ই-জার্নালের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১০০। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ই-লাইব্রেরি সেবা চালু হয় ২০১৫ সালের ৩ মার্চ। এবং ই-লাইব্রেরির জন্য ল্যাপটপ আছে ১০৩টি। গবেষণা কাজের জন্য প্রিজার্ভ পত্রিকা ৯টি। রেফারেন্স বই ১ হাজার ৪৮০ টি, পিরিউডিক্যাল বই ২ হাজার ৪০৫ টি। রেফারেন্স শাখায় জার্নাল ১ হাজার ১০১টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১ হাজার ৬৭২টি। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদের ৩৮টি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি গবেষণা কক্ষ এবং ৩৫০ টি আসন আছে।
পর্যাপ্তসংখ্যক বই কেন নেই এমন প্রশ্নের জবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারিক এনামুল হক বলেন, বই কেনার এখতিয়ার আমাদের আছে তবে এখানে বই কেনার বাজেট ডিপার্টমেন্ট গুলোতে ভাগ করে দেওয়া হয় সেখান থেকে প্রতি বিভাগ থেকে ৩ কপি কেনা হয় এবং আমাদের দুই কপি বা এক কপি দেওয়া হয় তবে অনেক সময় আমরা তাও পাই না।
গ্রন্থাগারে বই নিয়ে প্রবেশের নিয়মের ব্যাপারে তিনি বলেন, কোন একাডেমিক লাইব্রেরীতেই বই নিয়ে প্রবেশের নিয়ম নেই, তবে আমাদের যদি অন্য কোথাও আলাদা জায়গা দেওয়া হয় তাহলে আমরা বই নিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে পারি।
লাইব্রেরী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের রূঢ় ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি জানান, লাইব্রেরীর সংশ্লিষ্ট কেউ যদি কোন শিক্ষার্থীর সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকে আমাদের জানানো হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।
লাইব্রেরীর সার্বিক ব্যাপারে তিনি বলেন, ২০১২ সাল থেকে লাইব্রেরী অটোমেশনের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, আশাকরি খুব দ্রুতই আমাদের সেই কার্যক্রম শুরু হবে। ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা যাতে ই-লাইব্রেরী এক্সেস করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। আধুনিকায়ন হলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা ৯০ শতাংশ কমে যাবে বলে তিনি আশা করেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরীমুখী করার জন্য আমরা আগামীবছর থেকে লাইব্রেরী কতৃক ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক নতুন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন এর ব্যবস্থা করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আমার সাথে এসব বিষয় নিয়ে লাইব্রেরিয়ান এর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে, আমরা চেষ্টা করব নিয়মের মধ্যে থেকে বিষয় গুলো সমাধান করার।
এই বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক বলেন, লাইব্রেরি আধুনিকায়ন কাজ অব্যাহত আছে। শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি মুখী করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির বাজেট বাড়িয়েছি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে একাডেমিক বই কেনার ব্যবস্থা করছি৷ যার এক কপি বই থাকবে ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে আর এক কপি থাকবে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে৷
শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি মুখী না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিসিএস কেন্দ্রীক হওয়ায় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে কম অগ্রসর হয়।