সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
যত দ্রুত সম্ভব ড্যাপের গেজেট করা উচিত: বসুন্ধরা চেয়ারম্যান
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২১, ৯:০৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

যত দ্রুত সম্ভব ড্যাপের গেজেট করা উচিত বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএ) সভাপতি ও দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আজকে মন্ত্রীকে ধন্যবাদ এই জন্য যে, ড্যাপকে একটি সেমিনার পর্যায়ে আনতে পেরেছেন।

শনিবার (২০ নভেম্বর) হোটেল সোনারগাঁওয়ে খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-ড্যাপ (২০১৬-২০৩৫) চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে এসব কথা বলেন আহমেদ আকবর সোবহান।

তিনি ড্যাপ নিয়ে যেসব অংশীজন কথা বলতে চেয়েছেন, তাদের কাউকে মানা করেননি। আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব ড্যাপের গেজেট করা উচিত।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ২০১০ সালের ড্যাপ দেখে মনে হয়েছিল, বেসরকারিখাতকে একবারে নিশ্চিহ্ন করে করে দেওয়া হবে। তখন যিনি পূর্তমন্ত্রী ছিলেন, তার একটাই উদ্দেশ্যে ছিল বেসরকারিখাত বলতে কোনো জিনিস থাকবে না। সবকিছু করবে সরকার। তখন সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন রিহ্যাবের সভাপতিসহ আমরা প্রতিবাদ করলাম। আমি প্রতিবাদ করলাম। আমার সঙ্গে বাদ-প্রতিবাদ অনেক কিছু হলো। পরে এ নিয়ে অনেক তর্কাতর্কি হলো। তখনকার এক প্রখ্যাত প্রকৌশলী, বাংলাদেশের গর্ব ছিলেন, তিনি নিজেও স্বীকার করলেন ওই ড্যাপে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। ড্যাপে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়েছে। সেই ভুল ত্রুটি নিয়েই ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে। গেজেট করতে হবে এবং সেটাই সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই শুধু রাজউক, সরকারিখাতই ল্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট বা আবাসন যাই বলেন, সবই করবে রাজউক ও সরকার।

আহমেদ আকবর সোবহান আরও বলেন, তখন রিহ্যাবের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সেখানে সবাই বললেন যে ড্যাপ হচ্ছে, তা তো দেশকে ধ্বংস করে দেবে। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি ড্যাপ রিভিউ কমিটি করে দিয়েছি। তখন তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী রিভিউ কমিটি গঠন করেছিলেন সাতজন মন্ত্রী, ২১ জন সচিবকে নিয়ে। সেই রিভিউ কমিটি ড্যাপ পর্যালোচনা করে, যারা শুদ্ধ তাদের নতুন করে অনুমোদন দেওয়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল না থাকলে আজকে আবাসন খাতের ঢাকার দুই হাজারসহ সারাদেশের ২০ হাজার ডেভেলপার নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন রাজনীতিবিদ না। তিনি আমাদের চেয়ে অনেক বড় প্ল্যানার। তিনি আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দূরে দেখেন। আমরা যেটি আজ ভাবি, তিনি তা আগামীকালের জন্য চিন্তা করেন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী যদি এই দূরদর্শী ভূমিকা না নিতেন, আজকে হয়তো বাংলাদেশ এই পর্যায়ে আসতো না।

আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আজকে মন্ত্রীকে ধন্যবাদ এই জন্য যে, ড্যাপকে একটি সেমিনার পর্যায়ে আনতে পেরেছেন। তিনি ড্যাপ নিয়ে যেসব অংশীজন কথা বলতে চেয়েছেন, তাদের কাউকে মানা করেননি। আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব ড্যাপের গেজেট করা উচিত। রিহ্যাবের যারা ডেভেলপার তারা হাজার হাজার চুক্তি করে রেখেছেন। কিন্তু তারা কোথাও ডেভেলপমেন্ট করতে পারছেন না। ঢাকায় ৫০ হাজার প্ল্যান পাস হচ্ছে না ড্যাপের কারণে। এই ড্যাপ নিশ্চয়ই এমন কোনো জিনিস না যে, এটা পরিবর্তন হবে না। নিশ্চয়ই ড্যাপের রিভিউ কমিটি থাকবে। যাদের যেখানে অসুবিধা হবে, সমন্বয় হবে। কিন্তু আমার মনে হয় এটাই সময়। এখন গেজেট না হলে আর কোনদিনই সম্ভব হবে না।

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আগের ড্যাপের গেজেটে যেসব হাউজিং প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিল, সেসব যেন ঠিক থাকে। কিছু জিনিস আমার দুঃখ লাগে যে, প্রেসিডেন্ট গেজেট করে দিয়েছেন, তার ওপরে দেখি রাজউকের বেশ কিছু অফিসার হাত বোলান। প্রেসিডেন্ট যেখানে সই করেছেন, সেখানে রাজউকের একটা ক্লার্ক বলেন, এই গেজেট মানি না। তাহলে কোথায় আমরা আছি!

তিনি বলেন, রাজউককে অবশ্যই ডিজিটালাইজড করতে হবে। প্ল্যানের ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করতে হবে। মানুষের ভোগান্তিুও কমাতে হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামবলেন, ঢাকাকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে দেওয়া হবে না।

ড্যাপ চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, নগর পরিকল্পনাবিদ, আবাসন ব্যবসায়ী, স্থপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অবাসযোগ্য নগরীতে রূপান্তর করতে পারি না। সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার উন্নয়ন ও মৌলিক বিষয়গুলো এবারের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, পেশাজীবী, পরিবেশবাদী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরসহ সকল পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া, পরিকল্পনা তৈরির সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উচ্চপর্যায়ের নীতিমালার পরিকল্পনাগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ঢাকাকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন, বসবাসযোগ্য করতে নানা উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শহর তৈরির লক্ষ্যে পরিকল্পনায় অনেকগুলো ইকো পার্ক, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ এবং রিং রোডের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ড্যাপের আহ্বায়ক জানান, আমরা কেউ সুউচ্চ ভবনের বিপক্ষে নই। এমনকি আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেও উঁচু ভবনের পক্ষে। কিন্তু এটি করার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে ইউটিলিটি সার্ভিস, রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, খেলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে তা করতে হবে।

পাঁচ-সাত কাঠা জমির উপর উঁচু ভবন এবং যেগুলো নিয়ে অসামঞ্জস্য রয়েছে সেগুলো রিভিউ করা হবে। আর এ পরিমাণ জায়গাতে কতটুকু উঁচু ভবন করা যায় সেটা আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আমরা শহরটাকে বসবাসের অযোগ্য বানাতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, যে সব আবাসিক এলাকায় পূর্বেই শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলো যদি পরিবেশবান্ধব হয়, জনমানুষের ভোগান্তির কারণ না হয়‑ তাহলে সেই এলাকাকে মিশ্র এলাকা হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়‑ এসব এলাকায় অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে এই সেমিনারে সকল পক্ষের এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা বসবো এবং যৌক্তিক বিষয়গুলো অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এসব পরামর্শ ও মতামত আমাদেরকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে এবং কাজ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দেশের সকল গুণী মানুষের মেধা-বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকলে বঙ্গবন্ধুর দর্শন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়।

অনেকেই বলেন‑ পরিকল্পনা করা সহজ, বাস্তবায়ন অনেক কঠিন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পনা করা খুব সহজ নয়। পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন দুটিই চ্যালেঞ্জিং কাজ। সবার হাতকে একত্র করতে পারলে সকল চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব।

মন্ত্রী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে তারা দেশকে নিয়ে ভাবেনি। তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরিকল্পনা ছিল না। তাদের শাসনামলে দেশটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার জন্য ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি বলেন, ড্যাপের চ্যালেঞ্জ হলো বাস্তবায়নে। আশা করি, ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে পারবো। রাজধানীকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। রাজউকের বিরুদ্ধে আমরা অনেক অভিযোগ পাই। রাজউককে দ্রুত ডিজিটালাইজ করা দরকার। রাজউক চাইলে দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, উন্নত শহর গড়ার সব উপাদান নিয়ে ড্যাপ করা হয়েছে। তাই সবাই মিলে কাজ করলে ড্যাপ বাস্তবায়ন সম্ভব। এফবিসিসিআই সব অংশীজনদের নিয়ে ড্যাপ বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ করবে। বেসরকারিখাতকে সঙ্গে নিয়েই ড্যাপ বাস্তবায়নে সরকারকে এগুতে হবে। এবারের ড্যাপ যেন বাস্তবায়নযোগ্য হয়, এফবিসিসিআই সেই উদ্যোগ নেবে।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, ড্যাপের সঙ্গে বাংলাদেশের যার এক ইঞ্চি জমি আছে, তারও ভাগ্য জড়িত। ড্যাপের দুই হাজার পৃষ্ঠার ডুকেমেন্টস পড়ে বুঝতে সময় লাগবে। কারণ, এবারের ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে হলে, ঢাকা থেকে ৫০ লাখ লোক বের করে দিতে হবে। ইতোমধ্যে ড্যাপের বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেছে। ২০৩৫ সাল নাকি ৪০ সালে ড্যাপের বাস্তবায়ন হবে, আমি তা নিয়ে সন্দিহান। ৫৩ সংস্থার সম্মিলিত সমন্বয় ছাড়া ড্যাপ বাস্তবায়ন সম্ভব না। এর আগে ড্যাপ দিয়ে বেসরকারিখাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এখন ড্যাপ জনগণকে কী বার্তা দেবে, সেটাও সরকারকে ভাবতে হবে। আমি এটুকু বলতে পারি-ড্যাপে ডেভেলপাররা ধ্বংসের মুখে পড়বেন।



ভোরের পাতা/কে 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]