সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নানাখাতে অতিরিক্ত ফি আদায়, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ না করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ এবং অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের অদক্ষতা ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সাধারণ অভিভাবকরা। পাশাপাশি অধ্যক্ষের পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে।
বুধবার ( ১৭ নভেম্বর ) সকাল ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রতিবাদ ও দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অভিভাবক নেতা আনিসুর রহমান আনিস। এসময় অন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মৌসুমী অহিদ, হারুন অর রশিদ, হাসান রহমান, মো. নোমান, কাওসার মাহমুদ সহ শতাধিক অভিভাবক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা আধিদপ্তর (মাউশি) টিউশন ফি ছাড়া কোনো ফি ধার্য না করার নির্দেশ দিয়েছে এবং ২০২০ সালে যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছে তা ফেরত দিতে বা পরবর্তী বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। অথচ ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার তা অমান্য করেছেন। অধিকন্তু ২০২১ সালের ৩ হাজার টাকা করে সেশন চার্জ আদায় করেছেন সরকারি আদেশ অমান্য করে।
এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। তাই আমরা এ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করছি।’ এছাড়াও সেশন চার্জের নামে অতিরিক্ত ফি আদায়, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবকদের সন্তানদের টিউশন ফি মাফ না করা, টিউশন ফি না দিলে পরবর্তী ক্লাশে উত্তীর্ণ না করার জন্য ছাত্রীদের মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আনিসুর রহমান আনিস।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, প্রতি শুক্র ও শনিবার কর্মচারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনি বা নিয়োগ পরীক্ষা উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষ ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করা হচ্ছে। এই সমস্ত নির্বাচনী পরীক্ষায় শিক্ষক, পরিদর্শক ও কর্মচারী যথাসম্ভব কম সংখ্যায় নিয়োগ করতে বাধ্য করেন এবং তাদেরকে সম্মানী বাবদ কম টাকা দিয়ে বিরাট অংকের উদ্বৃত্ত টাকা তিনি নিজে আত্মসাৎ করে, যার পরিমান পরীক্ষা প্রতি প্রায় এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা।
প্রতি পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের অর্ধেক এবং এক চতুর্থাংশ সংখ্যক কর্মচারী নিয়োজিত করে তাদের উপর অধিকতর শারীরিক ও মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় অধ্যক্ষ বেছে নিয়েছেন মূল দিবা শাখা প্রধান শাহ আলমকে। যিনি প্রতি পরীক্ষায় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। প্রতি ডিউটিতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্মানী যথাক্রমে ১০০০ টাকা এবং ৪০০ টাকা মাত্র। যার ফলে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। শাখাপ্রধান হিসেবে মেয়াদ তিন বছর হলেও শাহ আলম প্রায় চার বছর ধরে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও বলা হয়, অধ্যক্ষের এই আত্মসাতের ব্যাপারে সহায়তা করছেন অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষের পিএ দিলরুবা খাতুন। অবসরে যাওয়ার পরও দিলরুবা বিনা বেতনে প্রতিদিন অফিস চালিয়ে যাচ্ছেন শুধুমাত্র অধ্যক্ষের সকল অনৈতিক কার্যকলাপ গোপন ও আড়াল রাখার জন্য।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদের সভায় স্কুলের বেইজমেন্টে গাড়ি পার্কিং এর সঠিক হিসাব পরিচালনার জন্য প্রি-পেইড কার্ড সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে অধ্যক্ষ তার নিজের ইচ্ছেমত স্কুলের স্টাফদেরকে দিয়ে বেইজমেন্টে পার্কিং দৈনিক ভাড়া দিচ্ছেন। ফলে আর্থিক অস্বচ্ছতা প্রতীয়মান হচ্ছে। অধ্যক্ষ অধিকাংশ অভিভাবকদের সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। বেতন মওকুফের বিষয়ে কোনো অভিভাবক তার সঙ্গে দেখা করলে তিনি অসৌজন্য আচরণ ও দুর্ব্যবহার করেন। এছাড়া তিনি স্কুল খোলা থেকে ছুটি পর্যন্ত কখনই অফিস করেন না। যা সিসি টিভি ফুটেজ দেখলেই প্রমানিত হয়।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে স্কুলের শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র পালকে হাই কোর্টের আদেশে অপসারণ করা হলেও তাকে স্বপদে বহাল রাখারও অভিযোগ আনা হয় কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে।
অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের এসব অনিয়ম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। অতীতে তার অশ্রাব্য ও ভয়ংকর অডিও ভাইরাল হওয়ায় দেশ-বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ও সুনাম অনেকাংশে ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা এসব অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অবসান করে স্কুলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।