বেসরকারি খাতে দেশের বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও রেলপথ ব্যবস্থাপনা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেই সাথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বিদ্যমান চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীত এবং সড়কপথের ওপর অতিনির্ভরশীলতা কমিয়ে নৌপথের দিকে বেশি নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘লজিস্টিকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির’ দ্বিতীয় সভায় ব্যবসায়ীরা এসব পরামর্শ দেন।
লজিস্টিকস বা ব্যবসার আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিল্ড যৌথ উদ্যোগে লজিস্টিকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে। এতে যৌথ সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান লজিস্টিকস খাতের সমস্যা সমাধানে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে লজিস্টিকসকে শিল্পনীতিতে একটি খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। এ ছাড়া বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও রেলপথের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে কনটেইনার প্রবেশ ও বের হওয়া এবং ট্রাক রাখার বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। এ সমস্যা নিরসনে একটি কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন করা প্রয়োজন। সড়কপথের ওপর অতিনির্ভরশীলতা কমিয়ে নৌ যোগাযোগের দিকে বেশি নজর দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট কমাতে সড়কটিকে আট লেনে রূপান্তরের পরামর্শ দেন।
বৈঠকে জানানো হয়, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অবকাঠামোসহ আনুষঙ্গিক সুবিধায় অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ টানতে হলে লজিস্টিকস বা আনুষঙ্গিক সুবিধায় সরকারের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো লজিস্টিকস পরিবেশ উন্নয়নে তাদের মোট জিডিপির ৯ থেকে ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করছে। লজিস্টিকস উন্নয়নের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশের লজিস্টিকস ব্যবস্থার প্রধান সমস্যাগুলো নিরসন করতে সংস্কার আনার তাগিদ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে একটি অর্থনৈতিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে বেসরকারি খাতকে সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। বেসরকারি খাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লজিস্টিকস অবকাঠামো। বর্তমানে দেশের লজিস্টিকস ব্যয় অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এ সমস্যা সমাধানে আমাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামগ্রিক সাপ্লাই চেইন নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’
অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ পানগাঁও বন্দর যথাযথ ব্যবহারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, পানগাঁও বন্দরকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে লজিস্টিকস ব্যয় ২৫ শতাংশ কমে আসবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর লজিস্টিকস ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর যদি আমরা জিএসপি প্লাস পরিস্থিতিকে অতিক্রম করতে না পারি তাহলে আমাদের প্রায় ১২ শতাংশ এমএফএন শুল্ক (মোস্ট-ফ্যাভরড নেশন ডিউটি) পরিশোধ করতে হবে।