কিলোমিটার প্রতি ৬০ পয়সা করে বৃদ্ধির কারণে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ১২শ টাকা পর্যন্ত বাড়ছে লঞ্চের ভাড়া। এক্ষেত্রে তৃতীয় অর্থাৎ ডেক শ্রেণির যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে মাথাপিছু দেড়শ টাকারও বেশি। ৬শ থেকে ১২শ টাকা বেশি দিতে হবে সিঙ্গেল এবং ডবল কেবিনের যাত্রীদের। ভিআইপি ও বিজনেস ক্লাসসহ উচ্চবিত্তদের জন্য নির্ধারিত আসনের ভাড়া কত বাড়বে সে ব্যাপারে অবশ্য এখনই কোনো ধারণা মিলছে না। তবে এসব শ্রেণির ভাড়াও সমানুপাতিক হারে বাড়বে বলেই আভাস দিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। সারা দেশের যাত্রীবাহী লঞ্চের কেবিনের ভাড়ার সঠিক কোন নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছে মালিকরা। ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চের ৭০০ টাকা সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। ডাবল কেবিনের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৪শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা।
অনেক সময় টাকা বেশি নিয়ে বুকিং কেবিনও টাকার বিনিময়ে অন্যদের দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে লঞ্চ স্টাফদের বিরুদ্ধে। যদিও বলা হয় ডেকে ভাড়া চারগুণ কেবিনের ভাড়া হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে আরও বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাত্রীবাহী লঞ্চ ভাড়া একবারে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ লঞ্চ যাত্রীরা। সরকার এক সঙ্গে এত টাকা লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করার অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে ডেক যাত্রীরা। তাই অনেক রুটে বাধ্য হয়ে কম ভাড়া নিচ্ছেন এমন দাবি লঞ্চ মালিকদের।
জানা গেছে, এক সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নৌপথ। যাত্রাপথে দীর্ঘ সময়ের কারণে দিন দিন যাত্রীবিমুখ হয়ে পড়ছে এই নৌপথ। এর মধ্যে আবার প্রতি কিলোমিটারে ৬০ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এতে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে ঢাকা-বরিশাল বিভিন্ন রুটের লঞ্চে। লঞ্চের ভাড়া ও সময় বেশি লাগার কারণে অনেকেই সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে দেখা গেছে।
মাহমুদুল হাসান নামে বরিশালের এক যাত্রী জানান, লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘণ্টা। কিন্তু বাসে সময় লাগে ৩-৫ ঘণ্টা। তুলনামূলক বাসের ভাড়াও কিছুটা কম। এছাড়া লঞ্চে কেবিনের ভাড়াও অনেক বাড়ানো হয়েছে। তাই বরিশালগামী বাসের যাত্রী আগে থেকে বাড়ছে। এছাড়া পদ্মা সেতু হয়ে গেলে লঞ্চে যাত্রীই পাবে না। তাই যাত্রীদের সুবিধার্থে লঞ্চের ভাড়া কমানোর দাবি জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে যাত্রীবাহী লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার থেকে তা কার্যকর করা হয়েছে। লঞ্চ নতুন ভাড়ায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪০ পয়সা স্থলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই ভাড়াও আদায় করতে পারছে না লঞ্চ মালিকরা।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক (নৌ-ট্রাফিক) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, লঞ্চ মালিকদের চাহিদা ছিল ১০০ শতাংশ ভাড়া বাড়নোর। সরকার তা নাকচ করে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা প্রতিযোগিতার কারণে তা আদায় করে না। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগেই ২৫০ টাকা ভাড়া নিতো ২০০ টাকা। এখন একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই অনেক মালিকরা কিছু টাকা কম নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে বেশি নেওয়ার অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যাত্রীবাহী লঞ্চে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লঞ্চের কেবিনের ক্ষেত্রে ডেকের ভাড়া চারগুণ নির্ধারিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশি নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিআইডব্লিউটিএ ২০১৩ সালের ভাড়া তালিকা অনুযায়ী ঢাকা-বরিশালের দূরত্ব ১৬১ কিলোমিটার। নতুন ভাড়ায় রুটের ডেকের ভাড়া হয় ৩৫২ টাকা, যা আগে ছিল ২৫৫ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চাঁদপুরে আগে ভাড়া ছিল ১১৫ টাকা। এখন তা ১৫৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু অনেক লঞ্চ মালিক ১৫০ টাকা নিচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।
আক্তার হোসেন নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, সাড়ে ৩০০ টাকা লঞ্চে ডেকের ভাড়া। একটি পরিবারে ৪ জন সদস্য হলে তাদের ভাড়া হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা। সাধারণ গরিব পরিবারের পক্ষে ১ হাজার ৪০০ টাকা দেয়া কষ্টকর।’ তাই লঞ্চের ভাড়া কমানোর দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নিচ্ছে। অনেকেই আবার নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু যাত্রীরা তা দিতে চাচ্ছে না। নির্ধারিত ভাড়া বেশি নেয়ার তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। এভাবেই লঞ্চমালিকদের পক্ষে আরেক প্রস্থ সুনাম গাইলেন সরকারের এই কর্মকর্তা।