মানুষের সমস্যা দেখলেই এগিয়ে যাই, এটি ছোটবেলার অভ্যাস। মানবিক কাজ আমাকে মন থেকে টানে, সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু করার চিন্তা থেকেই করোনাকালীন সময়ে মানুষের অসহায়ত্ব দেখে তাদের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে শুরু করি টিম পজিটিভ বাংলাদেশ (টিপিবি) নামে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যেখানে কোনো ব্যক্তি পরিচয় থাকবেনা, সবাই 'সদস্য' হিসেবে ইতিবাচক চিন্তাধারা থেকে দেশ ও দশের তরে ভালো কাজ করে যাবে। আমার মনে হয়, এত অল্প সময়ে মধ্যে এতো মানুষের কাছে আর কোনো সংগঠন পৌঁছাতে পারেনি, যতোটা আমরা পেরেছি। আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন ‘টিম পজিটিভ বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা গোলাম রাব্বানী।
হাতিরপুল পরীবাগ এলাকায় দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত বসবাস করে আসছে আক্তার হোসেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আক্তার হোসেন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। গতমাসে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রিকশাটি চুরি করে নিয়ে গেলে উপার্জনের মাধ্যম হারিয়ে স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর পরিস্থিতিতে পরে। খবর পেয়ে ১০ নভেম্বর নতুন রিকশা উপহার দিতে হাজির হয় টিম পজিটিভ বাংলাদেশ। নিজের বাইক পুড়িয়ে ফেলার সেই আলোচিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে সেটি দেখে তাকে বাইক উপহার দেয়, টিম পজিটিভ বাংলাদেশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার এক সাবেক ছাত্রনেতা অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় ইট ভাঙ্গার কাজ শুরু করলে টিপিবি গতমাসে তাকে জীবিকার জন্য একটি নতুন ইজিবাইক উপহার দেয়। হালের গরুর অভাবে নওগাঁর মান্দা উপজেলার এক হতদরিদ্র কৃষক তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে দিয়ে হাল চাষ করছেন জেনে, টিপিবির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ নতুন পাওয়ার টিলার উপহার দেন গোলাম রাব্বানী ও টিমের সদস্যগ্ণ। কিছুদিন পূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিনে ৭৫ জন অসহায় কর্মহীন নারীকে জীবিকার জন্য সেলাইমেশিন উপহার দেয় টিপিবি। লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকচাপে আত্মহত্যা করা নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার এক অসহায় ছাত্রলীগ কর্মীর সেই ঋণও শোধ করেছে রাব্বানীর সংগঠন।
গত আড়াই বছর যাবত এমন শত-সহস্র ইতিবাচক কাজ করে নিয়মিত আলোচনায় এসেছে এই ভিন্নধর্মী মানবিক সংগঠনটি।
করোনাকালীন সময়ে লক্ষাধিক মাস্ক-সেনিটাইজার বিতরণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা, দরিদ্র অসহায় পরিবারকে নিয়মিত খাদ্য ও বস্ত্র সহায়তা, বন্যার্ত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা, শহরে ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূলদের খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে চিকিৎসা সেবাতেও টিম পজিটিভ বাংলাদেশ ছিল এবং এখনও সক্রিয় আছে। নিয়মিতভাবে রক্তদান কর্মসূচি, সেলাইমেশিন বিতরণ, মসজিদ মাদ্রাসায় কার্পেট, ফ্যান ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ ভুক্তভোগীদের আইনী ও প্রশাসনিক সহায়তাসহ প্রায় সব ধরণের ইতিবাচক কাজের সাথে সম্পৃক্ত অনন্য এই মানবিক প্লাটফর্মটি।
আর্তমনবতার সেবার কথা বলে অর্থ সহায়তা নিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল প্রথম অক্ষর ফাউন্ডেশন নামে একটি নামধারী সংগঠন, টিম পজিটিভ বাংলাদেশ এর তথ্যের ভিত্তিতে নিজ কার্যালয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয় সেই নামধারী প্রথম অক্ষর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান-মহাসচিব। ঘটনাস্থলে থাকা টিম পজিটিভ বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা গোলাম রাব্বানী বলেন, পথে একদিন তাদের সংগঠনের ছেলেমেয়েদের টাকা তুলতে দেখি, আমি নিজেও সহায়তা করি। ভালো কাজের প্রচারণার জন্য সংগঠনটির কিছু স্বেচ্ছাসেবী সদস্যকে আমার অফিসে ডাকি। তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা ও তথ্যে নানা অসঙ্গতিতে বুঝতে পারি, এটা প্রতারণার ফাঁদ। পরে আমরা ডিবি পুলিশকে তথ্য দিলে তারা সত্যতা নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালায়।
মানবতার কথা বলে যারা এমন অমানবিক এবং অসামাজিক কাজ করে, তাদের অপকর্ম প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের জন্য কাজ করে তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনি মনে করেন? গোলাম রাব্বানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজে অসংখ্য ইতিবাচক মানুষ ভালো কাজের সাথে জড়িত’ একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবাইকে এককাতারে ফেলা উচিৎ নয়, তবে যারা অর্থ সহায়তা নিয়ে কাজ করে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গাটা পরিস্কার করাটা অত্যন্ত জরুরী। সামাজিক বা রাজনৈতিক, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হলো রাষ্ট্র পরিচালনা ও সুশাসনের মূলনীতি। আমি মনে করি, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হবে না, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, যেটা আমরা চেষ্টা করি এবং দেশের অনেক সংগঠনই করে।
গোলাম রাব্বানী আরও বলেন, যেসব অদম্য তরুণ ভালো কাজের সাথে থাকতে চায় তাদের জন্য, টিম পজিটিভ বাংলাদেশ (টিপিবি)'র দরজা সবসময় খোলা, যে কেউ কোনো সময় আমাদের সাথে কাজ করতে পারে, আমাদের সহায়তা নিতে পারে। খুব শীঘ্রই আমাদের সংগঠনকে একটি প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল সংগঠন হিসেবে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিব, ইতোমধ্যে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ থেকে অনেকে সহায়তা পাচ্ছে। '১৬ ডিসেম্বর' আমরা মোবাইল এ্যাপস উন্মুক্ত করবো যার মাধ্যমে খুব সহজে প্রয়োজনীয় সেবা পাবে মানুষ।
সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাব্বানী বলেন, আমরা মানুষের জন্য কাজ করি আর আরো বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে উদ্যমী তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলবো আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সমাজের সর্বস্তরে ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের অভিপ্রায়ে আমাদের এই অহর্নিশ পথচলায় সকলের দোয়া-ভালোবাসা-সমর্থন আর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ প্রত্যাশা চাই।