কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও মানবসম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শেষ পর্যন্ত ওই নিয়োগ পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে, এটা বলা যাবে না। তবে জালিয়াতিতে সহায়তার তথ্য পাওয়ায় তদন্ত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নথিপত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিসিটিভি অপারেটর পদের ২৬টি শূন্য পদের জন্য ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ এই পদের জন্য লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়, তবে করোনার কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়। এরপর গত বছরের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৭০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অংশ নেন ১৪২ জন। উত্তীর্ণ হয় ২১ শতাংশ।
উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের তথ্য যাচাইকালে আবু বকর সিদ্দিক নামে একজন পরীক্ষার্থীর হাতে লেখার গরমিল ধরা পড়ে। অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র ও নিজের হাতের লেখার মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আবু বকর সিদ্দিক স্বীকার করেন, তাঁর পক্ষে অন্য কেউ পরীক্ষা দিয়েছেন।
এরপর ১৩ জানুয়ারি বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, আবু বকর সিদ্দিকের পরিবর্তে নেত্তানন্দ পাল নামে একজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় এমন অনিয়মের পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ। আর আবু বকর সিদ্দিক ও আবদুল্লাহ আল মাবুদের সঙ্গে নেত্তানন্দ পালের যোগাযোগ করিয়ে দেন অপর যুগ্ম পরিচালক মো. আলমাছ আলী। এ জন্য আলমাছ আলীর হিসাবে ২ লাখ টাকা জমা দেন আবু বকর সিদ্দিক।
আর আলমাছ আলী তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান, সেই দুই লাখ টাকা লিখিত পরীক্ষায় অংশ দেওয়া নেত্তানন্দ পালকে দেওয়া হয়েছে। আর আবদুল্লাহ আল মাবুদ মৌখিক পরীক্ষার দিন আবু বকর সিদ্দিকের জন্য একাধিক কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করেন।
নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ জুন দুই যুগ্ম পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাবুদ ও মো. আলমাছ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য পদের নিয়োগেও বিভিন্নভাবে জালিয়াতি হয়েছে। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে কোনো তদন্ত না হওয়ায় জড়িত ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন।