রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বন্যহাতি ও কৃষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব: ৮ বছরে ২৩ জন মানুষ ও ২৫ হাতির মৃত্যু
রতন বালো
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:৫০ এএম | অনলাইন সংস্করণ

বন্যহাতি ও সীমান্তবর্তী কৃষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করছে। মানুষ আর হাতির তাণ্ডবে ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত হাতির আক্রমণে ২৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ সময় গারো পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ২৫টি হাতিও মারা গেছে। শেরপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর এবং কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বন্যহাতি বছরের বিভিন্ন সময় লোকালয়ে চলে আসে।

বন্যহাতির কারণে গত ১০ বছরে এসব এলাকায় প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, ফল-ফসল ও বসতভিটার ক্ষতি তো হয়েছেই। দ্বন্দ্বে অবশ্য মানুষ অপেক্ষা বন্যহাতির মৃত্যু ঘটেছে তুলনামূলকভাবে বেশি। হাতির তাণ্ডব থেকে নিজেদের ফসল বাঁচাতে সীমান্ত এলাকা কৃষকরা রাত জেগে মশাল জ্বালিয়ে ও ঘণ্টা বাজিয়ে পালাক্রমে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। নিজেদের শত শত একর ফসল রক্ষার্থে  নিজেদের জীবন বাজি রেখে হাতির আক্রমন রুখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটেছে অন্যখানে। বিশেষ করে গারো পাহাড়ে হাতি চলার পথ দখল করে মানুষ অবৈধ বসতি গড়ে তুলে সবজি ও ফসল চাষ করছে। মানুষের এই অবৈধ বসতি যা হাতি চলার পথে বাঁধাগ্রস্ত করছে। ফলে ক্রমান্নয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে হাতির দল। এসব কারণে হাতি আর কৃষকের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করছে।

এদিকে নিজেদের ফসল রক্ষায় কৃষকরা এসব হাতির পাল ঠেকাতে নিজেদের ফসলে বীষ ছিটিয়ে রাখে। আবার কখনও কখনও বাসিন্দারা অবৈধভাবে জিআই তারের ঘের দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়। এসব সংযোগে আক্রান্ত হয়ে হাতিদের মৃত্যু ঘটে থাকে বলে জানা গেছে।

শেরপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মানুষ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর নানা চেষ্টা করে। তবে এমন কোন চেষ্টাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না যার ফলে হাতি মারা পড়ে। বন বিভাগকে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হাতি বা অন্য কোন বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে আসার প্রয়োজন না হয়। বনে খাদ্যের জোগান নিশ্চিত হলে তাদের লোকালয়ে আসার প্রয়োজন পড়বে না। এজন্য নির্বিচারে বন ধ্বংস বন্ধ করা জরুরি। বন্যপ্রাণীর জন্য আর কিছু করতে হবে না, মানুষ যেন বন ধ্বংস না করে সেটা নিশ্চিত করলেই চলবে। তাহলে খাবারের জন্য হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের আর লোকালয়ে আসতে হবে না। বনই তাদের খাবারের জোগান দেবে বলে বন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

তারা বলেছেন, মানুষ ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর নানা চেষ্টা করে। তবে এমন কোন চেষ্টাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না যার ফলে হাতি মারা পড়ে। বন বিভাগকে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে হাতি বা অন্য কোন বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে আসার প্রয়োজন না হয়। বনে খাদ্যের জোগান নিশ্চিত হলে তাদের লোকালয়ে আসার প্রয়োজন পড়বে না। এজন্য নির্বিচারে বন ধ্বংস বন্ধ করা জরুরি। বন্যপ্রাণীর জন্য আর কিছু করতে হবে না, মানুষ যেন বন ধ্বংস না করে সেটা নিশ্চিত করলেই চলবে। তাহলে খাবারের জন্য হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের আর লোকালয়ে আসতে হবে না। বনই তাদের খাবারের জোগান দেবে।

এদিকে শেরপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর সীমান্তে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বন্যহাতির তাণ্ডবে কৃষকরা অতিষ্ঠ। কৃষকরা কোন উপায় না পেয়ে ফসল রক্ষায় ও নিজেদের বাঁচতে সীমান্তে বৈদ্যুতিক তার লাগিয়ে আলো দিয়ে হাতি থেকে রক্ষার কৌশলগত চেষ্টা করছেন। কিন্তু বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে সম্প্রতি একটি হাতি মারা গেছে। গত ১৫ দিন ধরে বন্যহাতির তাণ্ডবে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের গ্রামগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ের গ্রামীণ জীবন। হাতি সারাদিন পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে পাহাড় থেকে দলে দলে ধান ক্ষেতে নেমে তাণ্ডব চালাচ্ছে বন্যহাতির দল। এছাড়া বন্যহাতির তাণ্ডবে সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতিবছরই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। স্থানীয় নেয়াবাড়ির টিলা ও পার্শ্ববর্তী মালাকোচা গ্রামের কৃষক লাল চান, রহুল আমীন, মজনু মিয়া, আলাল মিয়া, আবদুর বারিক, সাদা মিয়া, মনিরুল ইসলামসহ গারো পাহাড়ের অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, হাতির আক্রমণে আমাদের ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে কাঁচা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে গেছি। এছাড়াও অসংখ্য কৃষকের সবজি ক্ষেত নষ্ট করে ফেলেছে।

জানা গেছে, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় প্রদেশের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত জনপদ শ্রীবরদীর রাজার পাহাড়, নেওয়াবাড়ি টিলা, ঝোঁলগাঁও, বালিজুড়ি, কোচপাড়া, রাঙ্গাজান, কাড়ামারা, কর্ণজোড়া, বাবলাকোনা, হারিয়েকোনা, পাঁচমেঘাদল, গারোপাড়াসহ ১২-১৫টি গ্রামে বাঙালি ও হিন্দু গারো, কোচ হাজংসহ বিভিন্ন গোত্র মিলে প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। ওই সব এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের ভূখণ্ডে রয়েছে বিশাল বনভূমি। বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপেক্ষাকৃত সমতল। ভারতের গহীন বনাঞ্চলে রয়েছে অগণিত বুনো হাতি। হাতি দল বেঁধে সমতল ভূমিতে চলাফেরা ও আহার করতে সহজ মনে করে থাকে। তাই সময় অসময়ে বুনো হাতির পাল সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওইসব সমতল বনাঞ্চলের আবাসিক ও কৃষিপ্রধান এলাকায় চলে আসে। পাহাড়ে বসবাসরত বাড়িঘর, ফসলাদি জমি ও বিভিন্ন বাগানে বন্যহাতি ঢুকে ধ্বংসলীলা চালায়। আবার ফিরেও যায় হাতির পাল। আদিবাসী নেতা শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, গ্রামবাসীরা হাতির উপদ্রপ থেকে বাঁচতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। তবে এখনও স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি। এজন্য দিনদিন বন্যহাতির তাণ্ডবে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এ বিষয়ে জানান জন্য বন বিভাগের স্থানীয় রেঞ্জার রবিউল ইসলাম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছি, যেন হাতির কেউ ক্ষতি করতে না পারে। হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে নিয়ম অনুযায়ী সহায়তা প্রদান করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বন্যহাতির হামলায় নিহত, আহত, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছি। এছাড়াও স্থায়ীভাবে বন্যহাতির কবল থেকে রক্ষা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

শ্রীবরদী উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. কোহিনুর হোসেন জানান, একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে, ১৯৯৫ সাল থেকে বন্যহাতির আক্রমণ চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শত শত। ক্ষতি হয়েছে বিস্তীর্ণ আবাদি জমির ফসল। গত ৯ নভেম্বর শেরপুরের শেরপুর বন বিভাগের কর্মকর্তারা স্থানীয় শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড়ি বনাঞ্চল বালিঝুড়ি রেঞ্জের মালাকোচা এলাকায় একটি বন্যহাতির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। কয়েক দিন ধরেই সীমান্তে ব্যাপক হাতির উপদ্রপ বেড়েছে।

প্রতক্ষদর্শীরা জানায়, হাতিটি আনুমানিক রাত তিনটার দিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করে সবজির বাগান ধ্বংস করছিল। বন বিভাগের ধারণা সবজির বাগান রক্ষায় বাগানের চারদিক বিদ্যুতায়িত করা তারে বৈদুতিক শকে হাতিটি মারা যেতে পারে। মৃত ওই পুরুষ হাতিটির বয়স ২৫/৩০ বছর হতে পারে।

বালিঝুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ৯ নভেম্বর ওই মৃত হাতি উদ্ধার করা হয়েছে। বাগান রক্ষার জন্য স্থাপিত বৈদ্যুতিক জিআই তারে জড়িয়ে হাতি মারা যেতে পারে। হাতির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে এবং মৃত্যুর আসল ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]