কোনো রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সেসব অঞ্চলের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বিংশ শতাব্দীর আশি ও নব্বই দশকে বাংলাদেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বিশেষ তত্পরতা লক্ষ করা যায়। দেশের সড়ক ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি বৃহৎ নদ-নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী তথা দেশের পূর্বাঞ্চলের সহজ যোগাযোগের জন্য যমুনা নদীর ওপর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে সড়ক সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলে এ সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। অবশ্য রেলপথ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন লাইন স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে আরো কয়েক বছর সময় লাগে। যমুনা সেতু নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই উন্নত যোগাযোগের সুফল দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ আপামর জনগণ পেতে থাকে। ওই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ পূর্বাঞ্চলের একটি উন্নত ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৯ সালে একটি প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে জাপান সরকারের সহায়তায় ২০০৫ সালে পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমাপ্ত হলে প্রকল্পটি কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। এরই মধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে ৪ জুলাই ২০০১-এ মাওয়ায় সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন হলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র-নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল-এইকম’কে ডিজাইন পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন, এডিপির সঙ্গে ৬১৫ মিলিয়ন ও জাইকার সঙ্গে ৪৩০ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গেও ১৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা বা ২ হাজার ৯৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুত ঋণের অতিরিক্ত অর্থ (প্রায় ৬১৭ মিলিয়ন ডলার) বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।
উল্লেখ্য, আমি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে যোগদান করি এবং যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে উন্নয়ন সহযোগী, প্যানেল অব এক্সপার্টস, ডিজাইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সেতু প্রকল্পের সব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাই।
২০১০ সালের বিভিন্ন সময়ে মূল সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ, নদীশাসন ও সুপারভিশন কনসালট্যান্সির দরপত্র আহ্বান ও প্রস্তাব গৃহীত হয়। মূল সেতু ও নদীশাসনকাজের কারিগরি মূল্যায়ন ও সুপারভিশন কনসালট্যান্সির প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে শক্তিশালী মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়।
প্রকল্পের এসব কাজের টেন্ডার মূল্যায়ন চলাকালে বিশ্বব্যাংক টিমের সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মতদ্বৈধতা দেখা দিলেও সেগুলো আলাপ-আলোচনা ও চিঠি চালাচালির মাধ্যমে নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সুপারভিশন কনসালট্যান্সির মূল্যায়নের বিষয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ইমেইলে বিশ্বব্যাংকের ইন্টেগ্রিটির ভাইস প্রেসিডেন্সিতে মিথ্যা অভিযোগ করে। বিশ্বব্যাংক যোযোযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ করে যে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল স্থানীয় এজেন্ট হওয়ার জন্য প্রিকোয়ালিফায়েড ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা এবং অভিযোগ অস্বীকার করার কারণে ক্রমান্বয়ে অভিযোগের তীর তার পরিবারের সদস্য, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সচিবের ওপরও নিক্ষিপ্ত হয়। বিশ্বব্যাংক কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে কানাডীয় রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) কাছে অভিযোগ করে। পরে তদন্ত করে আরসিএমপি ওই প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা, একজন বাংলাদেশী কানাডীয় নাগরিক ও বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কানাডীয় আদালতে মামলা করে।
২০১২ সালের ২৮ জুন বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রবার্ট জয়েলিক পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল করেন।
এরই মধ্যে ২০১২ সালের জুলাইয়ে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেন যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টা উদ্যোগ গ্রহণ করলে প্রধানমন্ত্রী অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হন। এর জন্য সরকারকে কিছু কঠিন ও অনৈতিক শর্ত পালন করতে হয়। সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছুটিতে পাঠানো হয়। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করানো হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে। দুদক বিশ্বব্যাংককে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাকে প্রধান আসামি করে কিছু কর্মকর্তা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফরমায়েশি করে। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও প্রতিমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা না করায় বিশ্বব্যাংক অসন্তোষ প্রকাশ করে। মিথ্যা অভিযোগে দুদক আমাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার পর জেলে পাঠায়। সরকার আমাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। ৪০ দিন কারাভোগের পর আমি জামিনে মুক্ত হই।
বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতিমতো ঋণ পুনর্বহাল ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের স্থগিতকৃত কাজে ফিরে আসেনি। শর্তের পর শর্ত দিয়ে কাজ বিলম্বিত করতে থাকে। পরে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরে আসার সময় বেঁধে দেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। দুদক অধিকতর তদন্ত করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মামলা থেকে সব আসামিকে অব্যাহতি দেয়। ২০১৭ সালে কানাডীয় সুপিরিয়র কোর্টও ‘ভিত্তিহীন’ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ করায় মামলা খারিজ করে দেন। বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ‘চ্যালেঞ্জ’ বিজয়ী হয়।
টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সেতু কর্তৃপক্ষ মূল সেতু, নদীশাসন ও সুপারভিশন কনসালট্যান্সি ঠিকাদারদের কার্যাদেশ প্রদান করে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালে নদীর বুকে সেতুর প্রথম স্প্যান স্থাপিত হয়। সর্বশেষ স্প্যানটি ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর স্থাপনের পর সড়ক ও রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। সেতুর স্প্যানের ওপর কংক্রিটের তৈরি রোড স্ল্যাব ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুতে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব ও ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এখন রোডওয়ে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে।
৩১ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগিত ৯৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ। নদীশাসনকাজের বাস্তব অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগিত ৭৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার কাজ আগেই শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৩৮টি সুপার টি গার্ডার এবং ৮৪টি রেলওয়ে আই গার্ডার (অর্থাৎ শতভাগ) স্থাপন করা হয়েছে। কার্পেটিং, লাইটিং ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্ত করে ২০২২ সালের জুনে সড়ক সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
পদ্মা সেতু হবে একটি নান্দনিক দ্বিতল সেতু। নিচ দিয়ে রেল এবং ওপর দিয়ে চলাচল করবে গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন। এ সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হবে।
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণে জানানো হয়েছে, এ সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে প্রসার হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলে ছোটবড় নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, তাতে দেশের সার্বিক জিডিপি বছরে ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে এবং দক্ষিণাঞ্চলের জিডিপি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে।
সেতু নির্মাণের ফলে দেশের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা-যশোর-খুলনা রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ঢাকা থেকে খুলনা, মোংলা, বরিশাল, কুয়াকাটা ইকোনমকি করিডোর স্থাপিত হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে (এন-৮) ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সহজতর হবে। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক স্থাপিত হলে দেশী-বিদশীে বিনিয়োগ আকর্ষিত হবে এবং দেশের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে। পর্যটন শিল্পের প্রভূত উন্নতি হবে এবং মাওয়া ও জাজিরায় নতুন নতুন রিসোর্ট ও হোটেল, শপিংমল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্থাপিত হবে। মোংলা ও পায়রা বন্দর সচল হবে, যেগুলো প্রতিবেশী কয়েকটি দেশও ব্যবহার করতে পারবে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে পদ্মা নদী পারাপার হয়ে দৈনিক যেখানে ১২ হাজার যান চলাচল করে, সেখানে সেতু খুলে দিলেই যান চলাচল দ্বিগুণ হতে পারে এবং প্রতি বছর যানবাহন ৭-৮ শতাংশ বেড়ে ২০৫০ সালে দৈনিক ৬৭ হাজার যানবাহন চলবে। তবে এ সংখ্যা বাড়তেও পারে। কারণ যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের আগে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের যে সম্ভাব্য হিসাব করা হয়েছিল, বর্তমানে প্রায় ২৩ বছর পর এর চেয়ে বেশি যান চলাচল করে। অর্থনৈতিক প্রভাবও অনুমানের চেয়ে বেশি হয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকৃত যানবাহন থেকে টোল আদায় দিন দিন বাড়ছে। পদ্মা সেতুর আদায়কৃত টোলের টাকায় ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণের খরচ উঠে যেতে পারে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্ত উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীরা বুঝতে পারে যে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে তারা ভুল করেছে। এখন উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের আরো বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পে জাপান ঋণসহায়তা দিচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ সরকার, বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ারদের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে। বর্তমানে দেশে যে ১০-১২টি মেগা প্রকল্প চলমান, বলতে গেলে পদ্মা সেতু প্রকল্প এর পথিকৃৎ।
আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। গর্বের সেতু আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও ভাবমূর্তি সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি সাহসী সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে তাকে একজন আত্মপ্রত্যয়ী, দৃঢ়চেতা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগিত, ক্রমাগত জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি আজ আন্তর্জাতকিভাবে স্বীকৃত। এ সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্র্রী, তার পরিবারের সদস্য, অভিযুক্ত মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং আমার নিজের যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সাফল্য সে ত্যাগকে গর্বে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে।
লেখক: সাবেক সিনিয়র সচিব ও সেতু বিভাগের সাবেক সচিব; বর্তমানে জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত