ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমেটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
রাজধানীর ভাটারা থানা পুলিশ ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমেটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সাইফুল ইসলাম সাদ (২৩) নামে এক যুবককে গত ৫ নভেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। সাদের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। সাদ পুলিশকে বলেছে চট্টগ্রাম-১২ আসনের (পটিয়া) সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং তার ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী ওরফে শারুণের নির্দেশে এই হত্যাকান্ডের ঘৃণ্য পরিকল্পনা নেয়া হয়। এজন্য শারুন সাদকে কিছু নগদ অর্থ ও একটি আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন। সাদকে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এবিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে দেশ বরেণ্য সাংবাদিক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা, অ্যাটকোর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ডেইলী অবজারভার এর সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমি প্রথমত এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি মনে করি এটা একটা বড় ধরনের ষড়যন্ত্র। যেহেতু পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে আশা করা যায় এর সুষ্ঠ সমাধানও হবে। এবং দায়ীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।
এছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি তো শুধু একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তাই নন। তিনি একজন শীর্ষ ব্যবসায়ীও। এমন কি সায়েম সোবহান আনভীর একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ। দেশের একটি বড় ক্রীড়া ক্লাবের তিনি চেয়ারম্যান। ফলে এমন একজন ব্যক্তিকে যারা হত্যার পরিকল্পনা করেন অবশ্যই তারা দুস্কৃতিকারী। এছাড়া কোন ব্যক্তিকেই হত্যার হুমকি দেওয়া বা হত্যার পরিকল্পনা করা আমি সমর্থন করিনা। এক্ষেত্রেও আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা রাখি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত কারণ ও অপরাধীরা চিহ্নিত হবে এবং এর একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে তিনি মনে করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘গণমাধ্যমের একজন মালিক ও একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতিকে হত্যার চেষ্টা আমাদের জন্য উদ্বেগ ও আতঙ্কের। শুধু তিনি কেন, যেকোন নাগরিককে হত্যাচেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ফৌজদারি অপরাধ। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনায় একজন গ্রেফতার হয়েছে, তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে । পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বের করা উচিত এর নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে কারা আছেন। নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই। পাশাপাশি হত্যা চেষ্টার ঘটনায় থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তাকে হত্যা চেষ্টা অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার, আমি এঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে যারা আছেন তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি প্রত্যাশা করছি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার এমডি ন্যায় বিচার পাবেন।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ বলেন, ‘এঘটনায় থানায় একটি এজহার দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন মামলাটির সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। ’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘আমরা এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানাই। এই ঘটনায় থানায় একটি এজহার দেওয়া হয়েছে। আসামী রিমান্ডে আছেন। আমরা আশা করবো পুলিশ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সহসভাপতি ওসমান গনি বাবুল বলেন, ‘গণমাধ্যমের একজন মালিককে হত্যার চেষ্টা আমাদের জন্য উদ্বেগ ও আতঙ্কের। আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই এবং থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠ ও নিরক্ষে তদন্তের জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মিজান মালিক বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে একজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুসন্ধরা গ্রুপের একজন কর্মকর্তা থানায় এজহার দিয়েছেন। এজহারের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ বলেন, ‘ আমি এঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সায়েম সোবহান আনভীর বাংলাদেশে প্রথম সারির একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তা। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার অধীনে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালেরকন্ঠ, ডেইলী সান, নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশন, বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর, তিতাস টিভি ও ক্যাপিটাল রেডিওর মতো সাতটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম পরিচালিত হচ্ছে। এসব গণমাধ্যমে ক্র্যাবের অনেক সদস্য কর্মরত আছেন। তার মতো একজন গণমাধ্যম উদ্যোক্তকে হত্যা চেষ্টার ঘটনা আমাদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ ও আতংকের পরিস্থিতি তৈরি করে। এই ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর (অব.) মিজানুর রহমান থানায় একটি অভিযোগ করার বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা চাই ঘটনার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।’