প্রার্থী এবং এমপিরাই নয়, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়ররাও গাড়ি নিয়ে চেয়ারম্যানদের জন্য ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। আচরণবিধিতে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ খুনোখুনি, সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে স্থানীয় নেতাদের লাগামহীন কথাবার্তা নির্বাচনী পরিবেশ দূষিত করছে। ভয় আতঙ্ক উত্তেজনা ছড়িয়ে, রক্ত ঝরিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে নির্বাচনকে। প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেতাদের বিতর্কিত বক্তব্য দেখে মনে হয়েছে রাজনীতি এখন এ কোন নষ্টদের হাতে? এ কোন উন্মাদ দাম্ভিকদের আশ্রয়ে?
গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন নৌকাকে বিজয়ী করতে একে-৪৭ ব্যবহার করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শুধু হুমাইপুরের জনগণের শক্তি নিয়ে ওই দিন (ভোটের দিন) আসব না। শুধু একে-৪৭ নয়, প্রয়োজনে যা করা দরকার সবই করব।’ বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন একটি খুনের মামলায় চার মাস আগে জেল খেটে এখন জামিনে রয়েছেন।
আর লড়াই করে থানাকে হটানোর হুঙ্কার দিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমি রবিউল, আমি কুষ্টিয়া জেলার মাস্তান, আমাকে কুষ্টিয়া জেলা মাস্তানির সার্টিফিকেট দিয়েছে। খোকসা থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত (জেলার দুই প্রান্ত) যত লোক আছে, মাস্তান আছে, আমার হাতে চলে। কিছু ছেলেপেলে আছে। তিনি চাইলে দু-তিন ঘণ্টা থানার সামনে লড়াই করতে পারেন, লড়াই করে থানাকে ‘হটায়ে দিতে’ (হারাতে) পারেন।’
এদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আফজাল হোসেন মোল্লা। শুক্রবার রাতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সূর্যমণি বাজারে নির্বাচনী পথসভায় তিনি বলেছেন, ‘ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে ভোট দিলে কারও বেঁচে থাকার অধিকার নেই। রবিবার থেকে স্টিমরোলার চালাতে বলব, আপনারা চালাবেন। আমি থাকব, দুইডা অস্ত্র লইয়া। নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিলে কারও বাঁচন নাই।’ চিন্তা করা যায় এ কোন মগের মুল্লুক? এমন বক্তব্য দিয়েও তারা জেলের বাইরে। নির্বাচনের ময়দানে! আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড যদি এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেয় তাহলে দলকেই এদের জন্য একদিন মোটা দাগে খেসারত দিতে হতে পারে। তাই যে কোনো মুক্ত নির্বাচন নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচনী সব ভয়ভীতি সন্ত্রাস উত্তেজনা আতঙ্ক দূর করতে হবে। নিরাপদ শান্তির উৎসবের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাইডলাইন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের ইউনিয়ন কমিটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব নিয়ে প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠাবে। একইভাবে মেয়র পদে পৌর কমিটি ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে উপজেলা কমিটি। সেটি কি কার্যকর হচ্ছে? নাকি এমপি ও জেলা নেতাদের খবরদারি চলছে? এখানে দলের সভানেত্রীর সিদ্ধান্ত বা গাইডলাইন কার্যকর করা হলে আর যা-ই হোক মনোনয়ন-বাণিজ্য যেমন হ্রাস পাবে তেমনি এমপি ও জেলা নেতাদের খবরদারিটা কমবে। সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরবে, দলাদলি কোন্দল কমবে। আর এখন সময় এসেছে দলকে বিক্রি করে যারা বাণিজ্য করে অঢেল বিত্ত-বৈভব গড়ে, বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে, আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, শেখ হাসিনার বিশ্বাসকে কবর দিয়ে নিজেদের আখের গোছায়, সন্ত্রাসের পথ নেয়, দলের সর্বনাশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার, দলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।