বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়: সৈয়দ আহমেদ সেলিম
প্রকাশ: রোববার, ৭ নভেম্বর, ২০২১, ১১:০০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
যে উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে এবং যারা করেছিলেন যে সব শক্তি যারা এর পেছনে ছিল ঠিক তারাই একই উদ্দেশ্যে ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড একইসূত্রে গাঁথা। সংবিধানকে অস্বীকার করে এর পরিপন্থী কাজ শুরু হয়েছে ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে। তারপর একই ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটা মূলত করা হয়েছে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা না বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল যে আদর্শের উপর সেই আদর্শকে হত্যা করার জন্যই।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫১৬তম পর্বে রোববার (৭ নভেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ, জার্মান আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আহমেদ সেলিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সৈয়দ আহমেদ সেলিম বলেন, আমার পূর্ববর্তী বক্তা মে. জে. (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ যেভাবে আজকের দিনটির তাৎপর্য নিয়ে বিশ্লেষণ করলেন সেখানে এই দিনটিকে নিয়ে যারা এতদিন ইতিহাস বিকৃতি করে আসছে সেখানে আজ এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলও যে এই দিনটি আসলেই মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবরে হত্যার মধ্য দিয়ে যে বিয়োগান্ত রাজনৈতিকধারার সূচনা হয়, এর ধারাবাহিকতায় সে বছরের নভেম্বরে ঘটে আরও কিছু হত্যাকাণ্ড। ৩ নভেম্বর জেলখানায় বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। যারা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ। তার অনুপস্থিতিতে এই চার জনই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতায় আসেন। তবে খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ আগস্টের ঘটনার মূল নায়করা। এ দিনটিকে জাতীয় সংহতি ও বিপ্লব দিবস হিসেবে পালন করে স্বৈরাচার ও খুনি জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি। এটি জাতির সঙ্গে একটি নির্মম তামাশা। ১৫ আগস্টের বর্বরতার পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য ৩ নভেম্বর যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তারা, সেই উদ্যোগের অপমৃত্যু ঘটে। এরপর হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার না করে, উল্টো খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে দেয় জিয়া। মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাযুদ্ধের রণাঙ্গনের শ্রেষ্ঠ অধিনায়কদের রক্ত ও লাশের ওপর দিয়ে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে সে। পরবর্তীতে প্রথমে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও পরে সেনাপ্রধান থাকা অবস্থাতেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয় রাজাকার শিরোমণি শাহ আজিজুর রহমানকে। মূলত ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনাঅধিনায়কদের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের পথ রুদ্ধ করতেই দিনটিকে সংহতি ও বিপ্লব দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান।যা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক হত্যার মিশনের প্রথম ধাপ। বাঙালি জাতির জীবনে কলঙ্কস্বরূপ। পাকিস্তানী প্রেতাত্মা চক্রের ক্ষমতার দখলের দুরভিসন্ধি তথা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র।