পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক চরম দুর্ভোগে পড়েছে। দেশব্যাপী পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়া পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ পর্যটক আকাশ পথ ও ছোট যানবাহনে তাদের গন্তবে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, পরিবহণ ধর্মঘটের কারনে কক্সবাজারে আটকে পড়া পর্যটকদের চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে জেলা পুলিশ। আটকে পড়া পর্যটকদের সেবা দিতে ইতোমধ্যে একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগ করে নাম এন্ট্রির মাধ্যমে পর্যটকরা চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, যে সব পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন তাদেরকে জেলা পুলিশের নিজস্ব পরিবহনে বিনা খরচে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, যারা ফিরতে ইচ্ছুক তাদের কক্সবাজার পুলিশ লাইনে এসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, জেলা পুলিশের উদ্যোগে আশপাশে থানা এলাকা থেকে নিজস্ব পরিবহনগুলো পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পর্যটকবাহী পুলিশের গাড়ীগুলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটিতে বৃহস্পতি-শুক্র ও শনিবার হাতে রেখে কক্সবাজার আসেন লাখো পর্যটক। অনেকে পূর্বের নির্ধারিত সময়ানুসারে কক্সবাজার এসেছেন বৃহস্পতিবার। আবার শুক্রবার ভোরেও পৌঁছান অনেকে। যারা শুক্রবার ফিরে যাওয়ার সিডিউলে ছিলেন তারা এসেছিলেন আরও কয়েকদিন আগে। কিন্তু, হঠাৎ যান চলাচল বন্ধের ঘোষণায় পর্যটকরা পড়ে যায় চরম দুর্ভোগে। কিন্তু কিছু কিছু পর্যটক ক্ষুদ্র যানবাহনে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, কক্সবাজারে কোনো পর্যটক আটকা পড়েনি। পড়েছে চরম দুর্ভোগে। এসব পর্যটকদের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষ রুম বুকিংয়ের জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়েছেন। গত দুইদিনে বেশীর ভাগ পর্যটক আকাশ পথ ও বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে চলে গেছে। যেতে পারেনি এরকম ৩০ হাজারের বেশী হতে পারে। তবে এই সংখ্যক পর্যটক সবসময় কক্সবাজারের অবস্থান করে থাকে।
পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে পর্যটন শিল্পের ক্ষতি কথা উল্লেখ করে আবুল কাশেম সিকদার আরও জানান, পূর্ব থেকে হোটেল রুম বুকিং দিয়ে যাদের শুক্রবার বিকালে পৌঁছার কথা ছিল, কিন্তু যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কক্সবাজারে ভ্রমণে আসতে পারেননি। হঠাৎ দূরপাল্লার বাস বন্ধ হওয়াতে পর্যটকরা চরম বেকাদায় পড়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।
কক্সবাজার তাজ করপোরেশন অ্যান্ড ট্রাভেলস সেন্টারের মালিক জানে আলম বলেন, কক্সবাজার থেকে বিমানের ফিরতি টিকেটের দাম হঠাৎ বেড়েছে। অন্য সময়ে তিন হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় যেতে পারলেও শুক্রবার-শনিবার সর্বনিম্ন ৭ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। যার কারণে অনেক পর্যটক টিকিট করতে এসেও সাধ্যের ভিতর না হওয়ায় টিকিট না নিয়ে ফিরে গেছেন।
এদিকে, কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, গণপরিবহন বন্ধের বিষয়টি জাতীয় ইস্যূ। আজ রোববার থেকে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে। তারপরও অসুবিধায় পড়া পর্যটকরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।