রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন, সড়কে কর্মমুখী অসহায় মানুষ
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১০:৫০ এএম | অনলাইন সংস্করণ

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন বন্ধ রেখেছে মালিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মমুখী মানুষ।

বুধবার (০৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। এরপরই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পরিবহন মালিকরা তেলের দাম কমানো বা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন।

বাস চলানো বন্ধ রাখায় শনিবার সকালে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাস না পেয়ে অফিসমুখী অসহায় মানুষদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, লেগুনা চলাচল করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ সুযোগে এসব যানবাহনে নেয়া হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায়ই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভ্যান, কাভার্ডভ্যানে চড়েও যাচ্ছেন কর্মস্থলে ও গন্তব্যে।

তবে মাঝে মাঝে দেখা মিলছে বিআরটিসির বাসের। বাস আসলেই শত শত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অনেকেই কোন যানবাহন না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন।

ঢাকা-আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছেন অফিসগামীরা। পরিবহনের দেখা না পেয়ে অনেকেই হেঁটে রওনা দিয়েছেন কর্মস্থলের উদ্দেশে। কেউবা ছুটছেন ভ্যান, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে। যেভাবেই হোক সকাল ৮টার আগেই পৌঁছাতে হবে কর্মস্থলে।

পোশাকশ্রমিক আহমেদ বলেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনা করে দাম বাড়ানো হলে আমরা আর ভোগান্তিতে পড়তাম না। শুধু ভোগান্তিই নয়, ঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে না পারলে হাজিরা বোনাস প্রায় ৫০০ টাকা কাটা যাবে। তার ওপর রিকশাভাড়া দ্বিগুণ দিয়ে অফিসে পৌঁছাতে হচ্ছে। একদিকে ভোগান্তি, অন্যদিকে হাজিরা বোনাস কাটাসহ অফিসের লোকদের মন্দ কথা শুনতে হবে। আর পরিকল্পনা করে তেলের দাম বাড়ালে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

কর্মস্থলে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন পোশাকশ্রমিক বিউটি বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী চাকরি করেন জিরানী বাজার। সেখানেই আমি স্বামীর সঙ্গে থাকি। প্রতিদিন সকালে উঠে বাসার কাজ শেষে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অফিসের উদ্দেশে রওনা হই। আজও তাই করেছি। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে দেখি গাড়ি নেই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম কিন্তু গাড়ি আসল না। পরে জানতে পারলাম ধর্মঘট চলছে। আমি ধর্মঘটের খবর শুনিনি। শুনলে হাতে একটু সময় নিয়ে বের হতাম।

যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে সকালে দেখা যায়, হাজার হাজার যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন। কোন বাস নেই। সিএনজিচালিত অটোরিকশা আসলেই দাম-দর করতে অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন, বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া হাঁকছেন চালকরা।

মালিবাগে একটি অফিসে চাকরি করেন শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, অফিস খোলা যেভাবেই হোক অফিসে যেতে হবে। সিএনজি অটোরিকশায় ৫০০ টাকা চাইছে, ভাড়া ২০০ টাকাও না। বাস ধর্মঘট এদের ঈদ নামিয়ে দিয়েছে।

গুলিস্তানে একটি মার্কেটের বিক্রয়কর্মী মাসুম মিয়া। তিনি বলেন, অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়াইয়া আছি। বাস ধর্মঘট কিন্তু অফিস-মার্কেট সবই তো খোলা। মানুষের কষ্টের শেষ নাই। ঝুঁকি নিয়া কয়েকবার পিকআপে ওঠার চেষ্টা করছি পারি নাই। বিআরটিসিতেও উঠতে পারি নাই। মার্কেটে কেমনে যামু জানি না।

মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাইনুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেউ চাইলো আর বাস বন্ধ করে বসে থাকল। এটা কোন কথা? এ দেশে কী সরকার বা কোন নিয়ম-কানুন আছে? থাকলে হয়তো এভাবে অরাজকতা হতো না। এত মানুষের ভোগান্তি কেউ দেখছে না!

রাজধানীর খিলগাঁও বাসস্টপেজে পরিবার নিয়ে মিরপুর ২ যাবেন বলে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন সালাহউদ্দিন নামের এক যাত্রী। তিনি জানান, প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কোনো গাড়ির দেখা পাচ্ছি না। ধর্মঘট অমান্য করে যে কয়েকটি গাড়ি চলছে তাতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। 

কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা যাবেন রাবেয়া, তিনি বলেন, কল্যাণপুর থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। এখন বাধ্য হয়ে আমাকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে হবে।

কুষ্টিয়া যেতে গাবতলীতে মিনিট্রাকে উঠে পড়েন চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসা রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া বাসে আরাম করে গেলেও ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। এখন মিনিট্রাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি ৪০০ টাকা ভাড়ায়। 

এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির আশুলিয়া অঞ্চলের সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, আসলে তেলের দাম বাড়ানোর আগে এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কতিপয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ানোয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি সাধারণ জনগণের বিষয় মাথায় রেখে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান হবে।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তারপরও বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা।

তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার শেষ বেলায় আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন মালিক নেতারা। আমরা সেটি গুরুত্ব দিয়ে রোববার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছি। এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তারা ধর্মঘট পালন করে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করতে পারেন না।

পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বাস মালিক দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, আমরা আসলে সমাধান চাই। তেলের দাম বাড়লে ভাড়াও বাড়াতে হবে। আর সেটা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। তানাহলে তেলের দাম কমাতে হবে। দাবি মেনে না নিলে পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ যুগান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি সমাধানে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবারই এর সমাধান করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তারা দীর্ঘসূত্রতা করেছে। এ কারণে ভোগান্তি হচ্ছে। এর দায় মালিকদের নয়। তবুও অনিচ্ছাকৃত এ ভোগান্তির জন্য আমরা দুঃখিত।

তিনি বলেন, সরকার হঠাৎ করেই প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়তি দামে তেলে গাড়ি চালালে প্রতি প্রতি ট্রিপে লোকসান গুনতে হবে। তাই সারা দেশে সব বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া কীভাবে তাদের গাড়ি চালাতে বলব।

তবে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করতে বিআরটিসির বাস ও ট্রাক চলাচল করেছে বলে জানিয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে বিআরটিসি এক হাজার ১০০ বা ও ৫০০ ট্রাক চলাচল করেছে। বর্তমান ভাড়ায় এসব বাস যাত্রী বহন করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যখন বাসের ভাড়া বাড়াবে, তখন বিআরটিসির বাসের ভাড়া বাড়বে। সরকার ভাড়া না বাড়ালে বর্তমান ভাড়ায় যাত্রী বহন করা হবে।



ভোরের পাতা/কে 






« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]