রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
জেল হত্যা বাঙালির কলঙ্কিত অধ্যায়
#৩ নভেম্বর ও ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্ধকারতম অধ্যায়: ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। #জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগ বাঙালি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে: ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। #৩ নভেম্বর ও ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা: ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১, ১০:৩১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

জেল হত্যার নিহত চার নেতাকে স্মরণ করতে হলে যেমন বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে হয়, ঠিক তেমনি একইসাথে একাত্তরে সকল শহীদদের স্মরণ করতে হয়। কারণ এই সকল ঘটনাগুলো একইসূত্রে গাঁথা। তারা মূলত ভেবেছিল যে এই চার নেতা যদি জীবিত থাকে তাহলে তারা আবার নেতৃত্বে ফিরে আসতে পারে এবং ভবিষ্যতে এই বিশ্বস্ত সহচর আবার সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারে, এইজন্যই মূলত তারা আবার এই নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস রচনা করে।

দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫১৩তম পর্বে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন,  প্রথমে আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি তেসরা নভেম্বরে যে চার জাতীয় নেতা প্রাণ হারিয়েছেন এবং সেই সাথে আমি আরও স্মরণ করছি ১৫ আগস্টে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সেদিন তার পরিবারের যেসকল সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। আসলে জেল হত্যার নিহত চার নেতাকে স্মরণ করতে হলে যেমন বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে হয়, ঠিক তেমনি একইসাথে একাত্তরে সকল শহীদদের স্মরণ করতে হয়, কারণ এই সকল ঘটনাগুলো একইসূত্রে গাঁথা। যদি খুব সংক্ষেপে বলি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বাধীন বাংলাদেশে অভ্যুদয় হয়েছিল তা দ্বিজাতি তথ্যের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের জন্য একটা বড় পরাজয় এবং সেই বাঙালি যখন সফল হয় সেই পাকিস্তানীদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। যে কারণে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে যে পরাজয় পেয়েছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সেটা শুধু তাদের রাষ্ট্রের পরাজয় ছিল না, এটা তাদের দর্শনেরও পরাজয় ছিল। তারা আসলে এই পরাজয় মেনে নিতে পারেনি যে কারণে তাদের মূল টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা। বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে নৃশংসভাবে তার পুরো পরিবারসহ হত্যা করা হয়েছে, সেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল কারণ পৃথিবীতে অনেক ক্যু হয়েছে, সামরিক শাসনের সময় অনেক দেশের জাতির পিতারা প্রাণ হারিয়েছেন, জেলের প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব থেকে আদরের ছোট্ট সন্তান শেখ রাসেলকে পর্যন্ত তারা যেভাবে হত্যা করেছে সেটা আসলেই পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর অনুপুস্থিতিতে যারা একাত্তরের ৯টি মাস বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই চার নেতাকেও কিন্তু খুব নির্মমভাবে হত্যা করে হয়েছিল।

অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করার পর মাত্র আট দিন পর জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি এতটাই বিশ্বস্ত ছিলেন এবং এখান থেকে আমরা যারা তরুণ প্রজন্ম বেঁচে আছি আমাদের এখান থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। এইরকম বিশ্বস্ত সহচর পৃথিবীর আর কোথাও কেউ হয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। এই চারজন নেতা কখনোই বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বেইমানি করেননি তাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এই জন্যই পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা যেটাকে আমরা জেলখানা বলি সেখানেই এই চার নেতাকে সেই ১৫ আগস্টের মতো নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতা লাভের পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত চারজনই এমন সজ্জন ও নির্বিরোধ প্রকৃতির বিশিষ্ট ভদ্রলোক ছিলেন যে, তাদের সঙ্গে কারও শত্রুতার প্রশ্নই আসে না। তাদের মতো নির্দোষ প্রকৃতির ও অক্ষতিকর মানুষ রাজনীতিকদের মধ্যে কমই দেখা যায়। তাদের সরল জীবনযাপনও ছিল মুগ্ধ করার মতো। ভাষা আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে শোষণবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় এই চার নেতা তখন থেকে সেই আন্দোলনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তাদের ছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হলে এই চার নেতাই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় চালিকাশক্তির ভূমিকায় ছিলেন। মোশতাকের সঙ্গে আপস-সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় এই চার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা মূলত ভেবেছিল যে এই চার নেতা যদি জীবিত থাকে তাহলে তারা আবার নেতৃত্বে ফিরে আসতে পারে এবং ভবিষ্যতে এই বিশ্বস্ত সহচর আবার সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারে, এইজন্যই মূলত তারা আবার এই নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস রচনা করে।  

ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সেই যে পাকিস্তানের দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রকল্প শুরু হয়েছিল, তা যেমন সেদিনও সমাপ্ত হয়নি আজও কিন্তু তা সমাপ্তের মুখ দেখেনি। ১৫ আগস্টের বেদনাদায়ক অধ্যায়ের আড়াই মাস পর তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একই বছরের ৩ নভেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। নির্মম এই ঘটনার ঠিক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ এই চার সহকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। চার নেতার হত্যাকাণ্ডের মতো নৃশংসতার ঘটনা ইতিহাসের বিরল। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে বাঙ্গালির হাজার বছরের ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক চেতনা এবং মূল্যবোধের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হয়ে পুরো চিত্রটি পাল্টে দেয়। তারা আবারো পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশ পরিচালনা করতে শুরু করে। রাতারাতি ‘বাংলাদেশ বেতার’ হয়ে যায় ‘রেডিও বাংলাদেশ’। ‘জয় বাংলার’ বদলে চলে আসে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। জেলখানার কোনো জাতীয় নেতাকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা বিশ্ব রাজনৈতিক ইতিহাসে নজীরবিহীন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা হচ্ছে একই বছরের ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ড। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে যে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল তা পরবর্তীতেও অব্যাহত রয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর বোমা হামলাসহ বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার যে সব চেষ্টা চালানো হয়েছে তা সেই ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা। ঘাতকচক্র জানত, শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই তাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হবে না। ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। কিন্তু তার সুযোগ্য সহকর্মীরা জনগণকে নিয়ে ৯ মাসের যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। এটাও ছিল বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]