ময়মনসিংহে ভেজাল খাদ্য ও পন্যে সয়লাব আকার ধারণ করেছে। মাত্র ৮ দিনে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের ভেজাল বিরোধী অভিযানে মামলা হয়েছে ২৭৫১টি। যা দেশের ভেজাল বিরোধী অভিযানে রেকর্ড বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ উঠেছে, বিএসটিআই ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয় ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর পণ্যকে সনদ দিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই ভেজালের মহোৎসব শুরু হয়েছে। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে খোদ পন্যের মান নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বানিজ্যিক মনোভাব।
নগরীর শম্ভুগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তানভীর আহমেদসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কোন পণ্য কিনতে গেলে মানুষ প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআই লগো দেখে পণ্যের মান নিশ্চিত হত। কিন্তু সম্প্রতি ভেজাল বিরোধী অভিযানে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তাতে এই প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মহলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তি জানান, ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযান চালিয়েও ভেজাল পণ্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এতে ভোক্তা সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফায়দা লুটছে।
জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ জুলাই থেকে ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৮ দিনে ভেজাল বিরোধী অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালতে জেলায় মোট মামলা হয়েছে ২৭৫১টি। এতে অর্থদন্ড করা হয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৮ শত টাকা।
এর মধ্যে শুধূমাত্র ৩১শে জুলাই একদিনের অভিযানে মোট মামলা হয়েছে ২১৩টি। এর মধ্যে জেলা প্রশাসন করেছে ১১৭টি, উপজেলা প্রশাসন ৭৪টি এবং সিটি কর্পোরেশন করেছে ২২টি মামলা। এসব মামলায় মোট অর্থদন্ড আদায় করা হয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ টাকা।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা হক বলেন, বিএসটিআই, সিভিল সার্জন, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর সহ ৫টি দফতর খাদ্য ও পন্যের মান নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত ভেজাল বিরোধী অভিযান চলমান থাকবে।
অভিযোগ উঠেছিলো, খোদ আদালতের দৃষ্টিতেও ময়মনসিংহের বিএসটিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলা হয়েছিলো। ময়মনসিংহে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীতে ভেজালের উপাদান থাকার প্রশ্ন উঠার পর নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বেশ কিছু পন্য। অথচ বিভিন্ন সময় জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতির অভাবের অজুহাত দেখিয়ে দায়সারা মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে তাদের।
জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, মাত্র দশ মাস হয়েছে আমাদের কার্যালয় স্থাপন হয়েছে। কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে দুইশ জন খাদ্য শ্রমিক-মালিককে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার কাজ করছি। চেষ্টা করছি ভেজাল প্রতিরোধে।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৈাশলী নুরুল আমিন কালাম বলেন, ভেজাল প্রতিরোধে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিষ্টানগুলোকে দায়িত্বের পরিধি বাড়াতে হবে। সেই সাথে নাগরিক সমাজকে সচেতনে পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনের। তবেই ভেজাল রোধ করা সম্ভব।
ময়মনসিংহে বিএসটিআই অফিস প্রতিষ্ঠার পর হতে মানুষের মাঝে একটা আস্থার জায়গা হয়েছিল। মানুষ কোন পণ্য বাজারে কিনতে গেলে, সেই পণ্যের প্যাকেটে বিএসটিআই লগো দেখে নিশ্চিত হতো যে সেই পণ্যের মান ভালো রয়েছে। এই আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা ক্ষয়ে তলা নিতে নিয়ে গিয়ে গেছে অফিসটি। মানুষের মাঝে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিএসটিআই অনুমোদনকৃত প্রতিষ্টান গুলোতে পণ্য তৈরিতে নেই উপযুক্ত ল্যাব, কেমিস্ট,স্বাস্থসম্মত স্থান, মোড়কের লেখার সাথে বাস্তবতার মিল নেই,পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। জোড়া তালি দিয়ে তৈরী হচ্ছে পণ্য। এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লক্ষ্য ছিল, পণ্য ও সেবারমান প্রণয়ন, গুণগতমান ও পরিমাপ নিশ্চিত করে মানদন্ডে সেবা গ্রহিতাদের আস্থা তৈরী করা।
সম্প্রতি ময়মনসিংহে ভেজাল বিরোধী ও ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযানে ভেজাল খাদ্যর চিত্রে নগরবাসীর বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িছে।
একটি প্রতিষ্টান বিএসটিআই এর সনদ নিতে গেলে বেশ কিছ ুধাপ অতিক্রম করার কথা। দরখাস্ত জমা প্রদানের পর যাচাই পূর্বক অল্প কিছু দিনের মধ্যে কারখানা পরিদর্শন করা। পরিদর্শন কালে পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল, উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর, কারখানায় বিদ্যমান পরীক্ষণ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত অবস্থা, পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাদি এবং পরীক্ষণ কাজে নিয়ো জিত ব্যাক্তিদের তথ্যাদি সংগ্রহ করবেন তারা। এ সময় বিএসটিআই পরিদর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে পন্যের নমুনা সংগ্রহ করে ও নমুনা পন্য সিল করে দেয়।
পরবর্তিতে সিলকৃত নমুনা বিএসটিআই অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সিলকৃত নমুনা জমা দিয়ে আসতে হয়। সিলকৃত নমুনা ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে লাইসেন্স দেয়া হয়। আর সেই মান বজায় থাকে কিনা তা মনিটরিং করার দায়িত্ব ও তাদের। সচেতন নাগরিকদের ভাষ্য পণ্যে বাজারে ছাড়ার সনদ বেচা কেনা বন্ধ করতে হবে। তাহলে বিএসটিআই এর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরবে। ভেজাল খাবারের দাপট কমবে।
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহের বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী এম,এ হান্নান এর সাথে মুঠো ফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি শাররিক অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
ভোরের পাতা/অ