প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ১১:১৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আজকের ভোরের পাতা সংলাপের যে আলোচ্য বিষয় সেটা হলো- ধর্ম যার যার বাংলাদেশ সবার। এই আলোচ্য বিষয় নিয়ে যখন আমি কথা বলতে যাই তখন আমার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মনে পড়ে যায়। এই যে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার এটা আসলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভাবনা, ধর্মনিরপেক্ষতার ভাবনা। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, সেই স্বপ্ন নিয়ে ৭ মার্চে সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৫০৪তম পর্বে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ, সংগীত শিল্পী, সেক্টর কমান্ডরস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ একাত্তরের কেন্দ্রীয় নারী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস, জার্মান আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাহাবউদ্দিন মোহাম্মদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
শাহাবউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে স্লোগান এনেছেন- ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। এ স্লোগানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দেশের সাধারণ মানুষকে সব ধর্মের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শনে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে থাকা কিছু অশিক্ষিত বকধার্মিক মোল্লারা এটাকে বিকৃত করে মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। আমি তাদের উদ্দেশ্য বলতে চায় ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, জমিন যার যার রাষ্ট্র সবার, দোকান যার যার কাস্তমার সবার। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ আরও কিছু মূল নীতির উপর। তবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে এসেও আমাদের দেশে এখনও কেন সংঘটিত হচ্ছে পায়ে পা বাধিয়ে সংখ্যালঘুর উপর সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস! কুমিল্লার একটি ঘটনার পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ ধর্মীয় ‘সংখ্যালঘু’ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলছে। কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসবের সময় তাদের ওপর নির্যাতন, ভাঙচুর এবং সংঘষের্র ঘটনা ঘটেছে। এই সহিংসতায় মানুষ নিহত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা কোনোটাই বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন করে না। এটি বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর আগেও অতি তুচ্ছ ঘটনায় বার বার হামলার লক্ষ্যবস্তু হয় দেশের ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের মানুষ। গত ১৭ মার্চ যখন দেশব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল, সেদিন সকালে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে ঘটে যায় ন্যক্কারজনক ঘটনা। একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে একযোগে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় ওই গ্রামের ৮৮টি হিন্দু বাড়ি ও পাঁচটি মন্দিরে। তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি স্থানীয় কজন মুক্তিযোদ্ধাও। হিন্দু সম্প্রদায়ের বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব দেবী দুর্গাপূজোতে অন্তত কোনো হিন্দু যুবক-বয়স্ক, কারো দ্বারা হনুমানের কোলে কোরআন যেটি অন্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থ, সেটি রেখে নিজেদের পূজোর পবিত্রতা বিনষ্ট করতে পারে না। তাছাড়া, হিন্দুরাই খুব ভালো জানে কীভাবে তাদের কাউকে পরিকল্পিত অপবাদ দিয়ে বার বার হামলা-লুটপাট, মন্দির, দেবী প্রতিমা ভাঙচুর, মারপিট, ধর্ষণের শিকার তাদের হতে হয়েছে! সুতরাং এ কাজটি কোনো হিন্দু, আদিবাসী বা অন্য কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের দ্বারা করা সম্ভব নয়। একমাত্র যারা ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে, ’৭১- থেকে চেনা সেই ধর্ম-ব্যবসায়ী জামায়াত-হেফাজত এবং এদের নেপথ্যের সূত্রধর অর্থের দ্বারাই এ অপকর্মটি করেছে। জনগণ জানে এ ধরনের হীন কাজ, একটি ধর্ম সম্প্রদায়ের বড় উৎসবকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির দ্বারা সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী সরকার।