হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় এসেছেন তার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। ঢাকায় পৌঁছেই তিনি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচার দিতে ছুটে যান এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়ির (খালেদা জিয়া) কাছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শর্মিলা অভিযোগ করেন- কোকোর মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগ করা সম্পত্তির ৮০ শতাংশই লিখে দেওয়ার জন্য তাকে চাপ দিচ্ছেন তারেক রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি এক নেতা জানান, কোকোর স্ত্রী শর্মিলা এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি চান, কোকোর বিনিয়োগ করা এ সম্পদ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়েই সন্তানদের নিয়ে বিদেশে থাকতে। এমনকি খালেদা জিয়ার অনুমতি পেলে তারেকের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়েও যেতে চান কোকোর স্ত্রী।
ওই বিএনপি নেতা আরো জানান, খালেদা জিয়ার দুঃসময়ে তাকে সঙ্গ দিতে খোঁজখবর নিতে এর আগেও একাধিকবার দেশে এসেছেন শর্মিলা। সেই কারণে খালেদা জিয়া তাকে খুবই পছন্দ করেন। যার ফলে বিএনপির রাজনীতিতে শর্মিলার গুরুত্ব দিন দিন অনেক বেড়েছে। আর দলের অনেকেই মনে করেন, তারেক জিয়া একজন দুর্নীতিবাজ, তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান অহংকারী। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ বা দায়িত্ব নেয়ার জন্য কিছুটা হলেও উপযুক্ত শর্মিলা।
লন্ডনভিত্তিক একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে জানা যায়, ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে অবৈধভাবে উপার্জন করা টাকা তারেক রহমান সুইস ব্যাংকে জমা করলেও তার ছোট ভাই কোকো বিনিয়োগ করেছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানকার পাবলিক ব্যাংক বেরহাদ-এর কুয়ালালামপুর শাখার একটি অ্যাকাউন্টে থাকা ২৫ মিলিয়ন ডলার তারেক নিজস্ব অর্থ বলে দাবি করলে শর্মিলার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যদিও শর্মিলা কোনোভাবেই এ অর্থ হাতছাড়া করতে রাজি নন। প্রয়োজনে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও তারেককে হুমকি দিয়েছেন।
আরো জানা যায়, শর্মিলাকে গত বছরের ২৯ জুন রাতে তারেক তার লন্ডনের বাসায় ডেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে বলেন। তারেক দাবি করেন, ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ব্যবসার খাতিরে ছোট ভাই কোকোকে তিনি ওই অর্থ ধার দিয়েছিলেন। তবে এত বড় পরিমাণ অর্থ লেনদেনের কোনো দলিল বা সাক্ষী না থাকার বিষয়ে শর্মিলা প্রশ্ন তুললে তারেক কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তারেক শেষ পর্যন্ত সেই অর্থের কাস্টোডিয়ান হতে চাইলে শর্মিলা তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
এখন বিএনপিতে গুঞ্জন উঠেছে, ভাসুরের (তারেক রহমান) সঙ্গে সম্পত্তির ঝামেলা মেটাতেই শর্মিলা ঢাকায় এসেছেন। খালেদার হস্তক্ষেপ ছাড়া এ সম্পত্তি হয়তো তিনি রক্ষা করতে পারবেন না। তাই শর্মিলা চাইছেন, শাশুড়ি (খালেদা জিয়া) বেঁচে থাকতেই এ সমস্যা সমাধান করতে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়। গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্ত সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত চার দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। করোনাপরবর্তী জটিলতা নিয়ে তিনি এখন হাসপাতালে ভর্তি।