অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে: অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস
প্রকাশ: বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ
বর্তমান সময়ে যে দুর্যোগ চলছে সেটা কোনভাবে করোনা দুর্যোগের থেকে কম নয় বিশেষ করে যারা নিজেদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, লালন পালন করে। কারণ যে রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়েছিল চার স্তম্ভের উপর তার অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। যারা আসলে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙা সৃষ্টি করে তাদের আসলে কোন ধর্ম নেই। তারা চায় দেশে অসান্তি সৃষ্টি করতে এবং নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করতে। বাংলাদেশের মুসলমানদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো কে কোন ধর্মের তা তারা বিচার-বিবেচনা করে না; হোক সে হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান। বরং একইসঙ্গে চলা, খাওয়া এবং পারস্পরিক সদাচার ও সদ্ভাবের সঙ্গে তারা এক অপূর্ব সহাবস্থানের মধ্যে বসবাস করছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৯৭তম পর্বে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংগীত শিল্পী অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং লেখক মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল, গৌরব ৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশকিছু স্থানে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে চলেছে। যারাই ধর্ম অবমাননা করেছে (সে যে ধর্মেরই হোক) সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সবোর্চ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আর এ তদন্তের জন্যও সময় দেওয়া দরকার। হুট করেই কাউকে দোষী বলা যায় না বা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো যায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। এ দেশে সকল ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন-এটা সংবিধানেই বলা আছে। আবার সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবেন সেটাও উল্লেখ আছে সংবিধানে। জাতির পিতাই এটা করে গেছেন। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ২৩ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষের রক্তের মিলিত স্রোতধারায় এই বাংলার জমিন রক্তাক্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের আক্রমণের প্রধান দুটি টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগ ও হিন্দু সম্প্রদায়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর র্যাব, পুলিশ, বিজিবি নামিয়ে হিন্দুদের পূজার নিরাপত্তা বিধান সব বাঙালির জন্য, বিশেষ করে মুসলমানের জন্য বড়ই লজ্জার! বাংলাদেশ কোনও একক জনগোষ্ঠীর নয়। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘এই দেশ হিন্দুর না, এই দেশ মুসলমানের না। এই দেশকে যে নিজের বলে ভাববে, এই দেশ তার। এই দেশের কল্যাণ দেখে যার মন আনন্দে ভরে উঠবে এই দেশ তার। এই দেশের দুঃখে যে কাঁদবে এই দেশ তার। এবং এই দেশ তাদের যারা এই দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দিবে।’ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। তবে সব কিছুর আগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। যাতে করে আর একটি স্থাপনাতেও হামলা না হয়। আর একজন নাগরিকও নিজের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এই দেশে বিপন্ন বোধ না করে।