প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩৯ পিএম আপডেট: ২০.১০.২০২১ ১০:৪১ এএম | অনলাইন সংস্করণ
একমাত্র শিক্ষক ছেলের বিলাশবহুল পাকা বাড়ির পাশে বাবার দোচালা ছোট্ট টিনের ঘর। ছেলের ঘরের সামনের দেয়ালে রং দিয়ে লেখা রয়েছে, মা বাবার দোয়া। মা মোমেনার নামটিও লেখা রয়েছে সেই দেয়ালে। দেয়ালের লেখায় পিতৃ ও মাতৃ ভক্তির প্রকাশ থাকলেও বাস্তব চিত্র উল্টো। নিজ নামীয় জমি ছেলেকে রেজিস্ট্রি করে না দেওয়ায় ক্রমশই কমতে থাকে পিতৃ ও মাতৃভক্তি। এক পর্যায়ে এসে প্রায়শই বাবা মায়ের গায়ে হাত তুলতে থাকেন শিক্ষক ছেলে। মারধোর করতেন মাঝে মধ্যেই। এ শিক্ষক পুত্রের চপোটাঘাতে ইতোপূর্বে শ্রবণ শক্তি ও দাঁত হারালেও লোক লজ্জার ভয়ে তা চেপে থাকেন বৃদ্ধ পিতা। কিন্তু অত্যাচারের মাত্রা বাড়ায় বাড়তে থাকে সাংসারিক অশান্তি। এলাকায় অনেক দরবার, শালিশ বৈঠক হয়। ছেলে মাফ চেয়ে পার পেলেও বদলায় না তার স্বভাব ও সম্পত্তির লোভ।
এই বৃদ্ধ পিতা-মাতা হলেন, পাবনার চাটমোহরের মহেলা গ্রামের আতাউর রহমান (৭৫) এবং তার স্ত্রী মোমেনা খাতুন। এ দম্পতির ছেলে, চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মজনুর রহমান। জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত ১২ অক্টোবর মজনুর রহমান তার বাবাকে লাথি মারাসহ লাঞ্ছিত করেন। এর একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় থানায় ভুক্তভোগী বাবা অপারগ হয়ে থানায় অভিযোগ দিলে ছেলে মজনুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করে। সেই ছেলে এখন কারাগারে।
বৃদ্ধ আতাউর রহমান জানান, উপজেলার মহেলা বাজার পোস্ট অফিসে পোস্ট মাস্টার হিসেবে চাকরি করেন তিনি এবং তার স্ত্রী গৃহিনী। তারা তাদের দুই ছেলে চার মেয়েকে অনেক কষ্টে বড় করে তোলেন। আশা করেছিলেন ছেলেরা বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। নিজের বসত বাড়ি দুই ছেলেকে রেজিস্ট্রি করে দেন কয়েক বছর পূর্বেই। পাশের প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমি দুই ছেলের নামে উইল করে দিয়েছিলেন। বছর তিনেক পূর্বে বড় ছেলে আব্দুল মান্নানের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর থেকে ছোট ছেলে, চাটমোহর সরকারি আরসিএন অ্যান্ড বিএসএন উচ্চ বিদ্যালয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মজনুর রহমান পিতার নিকট থেকে মাঠের অন্যান্য সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। ইতমধ্যে বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে ছেলে মজনুর রহমানকে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন এ পিতা। কিন্তু সব জমি রেজিস্ট্রি করে না দেওয়ায় মাঝে মধ্যেই শিক্ষক ছেলে মজনুর রহমান পিতা মাতাকে মারধোর করতেন। ছেলের মারধোরে শ্রবণ শক্তি ও দাঁত হারিয়েছেন পিতা। ছেলের এহেন আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে আতাউর রহমান বাড়ির পাশের জমির উইল বাতিল করে চার মেয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয় মজনুর রহমান।
কয়েক দিন পূর্বে আতাউর রহমানের অজান্তে ছেলে মজনুর রহমান তার পিতার নামীয় একটি জমি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য ক্রেতার নিকট থেকে অগ্রীম টাকা গ্রহণ করেন। বাবাকে ক্রেতা বরাবর এ জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। পিতা জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে সম্মত না হলে গত মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকাল দশটার দিকে উপজেলার মহেলা বাজার পোস্ট অফিসে গিয়ে কর্তব্যরত পিতাকে গালিগালাজ ও মারধোর করতে থাকেন। এ সময় আতাউর রহমান তার জামাইদের ফোন করার চেষ্টা করলে ফোনটি ছিনিয়ে নেন মজনুর রহমান। এ সময় পোস্ট অফিস এলাকায় ফের পিতা পুত্র ধ্বস্তা ধস্তি হয় যার ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায় মোবাইল ফোনটি নিয়ে ছেলে মোটরসাইকেলে উঠতে উদ্যত হলে তাকে বাধা দেন বাবা। মোবাইলটি ফেরত চেয়ে কখনও ছেলের পা ধরে রাখেন, কখনও তার মোটরসাইকেল টেনে ধরেন। ওই সময় ক্ষুব্ধ ছেলে মজনুর রহমান তার বাবাকে লাথি মারেন। সেইসাথে বাবার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ভুক্তভোগী বাবা গত শনিবার দুপুরে ক্ষোভের সাথে জানান, ছেলের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করিনি। বুকের ব্যথায় এখনো কষ্ট পাচ্ছি। ওর মাকে মারার জন্য গলায় ছুড়ি পর্যন্ত ধরেছিল। বাড়িতে এসে আমাকে বার বার মারে। এমন সন্তান আল্লাহ যেন কারো ঘরে না দেয়। ছেলে জেল হাজতে রয়েছে এতে আমার বিন্দু মাত্র আফসোস নেই। আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। অনেকেই বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলতে বলছেন। কিন্তু আমি চাই এ ঘটনার আইনানুগ বিচার হোক।