শহীদ শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শহীদ শেখ রাসেল স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও ভাস্কর শিল্পী রাশা, সহ-সভাপতি শাহীন মাতবর, নূরে আলম সরদার, কামরুজ্জামান রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন স্বাধীনসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
শহীদ শেখ রাসেল স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন শেষে আলোচনা সভার বক্তব্যে ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, "আঠারো অক্টোবর মানবতার প্রতীক শিশু শেখ রাসেলের জন্মদিন। গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাঁকে আমরা স্মরণ করছি।
আমাদের প্রয়োজন, ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের মানবতাবোধ, ছোট বয়সেই নেতৃত্বসুলভ আচরণ, পরোপকারী মনোভাবগুলো—আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এবার সেটা দল কিংবা সরকারের পক্ষ থেকেই হোক, পাঠ্যপুস্তক কিংবা অন্য কোনও মাধ্যমেই হোক, এটি গবেষণা করেই তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছি।"
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, "শহীদ শেখ রাসেল দিবসের আহবান, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ আমরা শহীদ শেখ রাসেলকে স্মরণ করছি। সেই ছোট্ট বয়স থেকেই রাসেলের ছিল অসাধারণ নেতৃত্বসুলভ আচরণ। ঢাকায় তার তেমন কোনও খেলার সাথি ছিল না, কিন্তু যখন পরিবারের সঙ্গে টুঙ্গিপাড়ায় বেড়াতে যেতেন, সেখানে তার খেলার সাথির অভাব হতো না। রাসেল নিজেই বাচ্চাদের জড়ো করতেন, তাদের জন্য খেলনা বন্দুক বানাতেন, আর সেই বন্দুক হাতেই তাদের প্যারেড করাতেন। আসলে রাসেলের পরিবেশটাই ছিল এমন। রাসেলের খুদে ওই বাহিনীর (বন্ধু) জন্য জামা-কাপড় ঢাকা থেকেই কিনে দিতেন। প্যারেড শেষে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করতেন। আর বড় হয়ে তুমি কী হবে—এমন প্রশ্ন কেউ করলে, রাসেল বলতো ‘আর্মি অফিসার হবো’।"
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বলেন, "আজ শহীদ শেখ রাসেল এর ৫৮তম জন্মদিন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ শহীদ শেখ রাসেল এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। শিশু শেখ রাসেল হত্যাকাণ্ড ছিল মানবতার চরম লঙ্ঘন। ১৮ অক্টোবর শহীদ শেখ রাসেল দিবস জাতীয়ভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
শিশু রাসেলের জন্মের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে নানান কারণে জেলবাস করতেন। তাই ছোট্ট রাসেলের ভাগ্যে তার বাবার সান্নিধ্য খুব কমই হয়েছে। রাসেলের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ছিল তার হাসুপা (শেখ হাসিনা)। তার সমস্ত সময় জুড়েই ছিল হাসুপা। রাসেল হাসুপা’র চুলের বেণি ধরে খেলতে পছন্দ করতো। সে চুল ধরে নাড়াতো আর ফিক ফিক করে হাসতো। রাসেলের হাঁটা শুরুও হয়েছে তার প্রিয় হাসুপা’র হাত ধরে, তাও আবার একদিনেই। এটি একটি বিরল ঘটনা। আসলে রাসেলের সবকিছুই একটু ব্যতিক্রম ছিল, আর থাকবে নাই বা কেন? সে যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। তাঁর মন-মগজ আর শরীরের প্রতিটি শিরায় উপ-শিরায় বহমান ছিল ব্যক্তিত্ব, মানবতাবোধ আর ভিন্নতা, যাতে অনায়াসেই রাসেলের ভক্ত হয়ে যেতো যে কেউ।শিশু রাসেলের জন্মের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে নানান কারণে জেলবাস করতেন। তাই ছোট্ট রাসেলের ভাগ্যে তার বাবার সান্নিধ্য খুব কমই হয়েছে। রাসেলের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ছিল তার হাসুপা (শেখ হাসিনা)। তার সমস্ত সময় জুড়েই ছিল হাসুপা। রাসেল হাসুপা’র চুলের বেণি ধরে খেলতে পছন্দ করতো। সে চুল ধরে নাড়াতো আর ফিক ফিক করে হাসতো। রাসেলের হাঁটা শুরুও হয়েছে তার প্রিয় হাসুপা’র হাত ধরে, তাও আবার একদিনেই। এটি একটি বিরল ঘটনা। আসলে রাসেলের সবকিছুই একটু ব্যতিক্রম ছিল, আর থাকবে নাই বা কেন? সে যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র। তার মন-মগজ আর শরীরের প্রতিটি শিরায় উপ-শিরায় বহমান ছিল ব্যক্তিত্ব, মানবতাবোধ আর ভিন্নতা, যাতে অনায়াসেই রাসেলের ভক্ত হয়ে যেতো যে কেউ।"
আল মামুন আরোও বলেন, "শহীদ শেখ রাসেলকে নিয়ে আমাদের বিশেষ কোনও গবেষণা নেই। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝেও শেখ রাসেলের ছোট বয়সের ব্যক্তিত্ব, মানবতাবোধ আর উপস্থিত বুদ্ধির বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরতে পারিনি। শেখ রাসেলের প্রিয় হাসু আপা অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণমূলক বই "আমাদের ছোট রাসেল সোনা" এখনও পর্যন্ত আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার গীতালি দাশগুপ্তা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পড়াকালীন ছাত্র রাসেলের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন মজার কথাগুলোও আমরা আজও ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার বা অ্যাপস আকারে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে-হাতে পৌঁছাতে পারিনি।
খুনিরা ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর ও নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে শিশু রাসেলকেও হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বুলেটের আঘাতে একবারই হত্যা করেছে। কিন্তু শিশু রাসেলকে বুলেটের আঘাতে হত্যা করার আগেই কয়েকবার হত্যা করেছে। এগারো বছরের শিশু রাসেল আতঙ্কিত হয়ে কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’। পরবর্তী সময়ে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন, ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দিন’ বলে। পৃথিবীতে যুগে যুগে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কিন্তু এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড আর কোথাও ঘটেনি। মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিতে-নিতে শিশু রাসেলকে প্রতিটি লাশের সামনে মানসিকভাবেও খুন করেছে। একান্ত আপনজনের রক্তমাখা নীরব, নিথর দেহগুলোর পাশে নিয়ে গিয়ে শিশু রাসেলকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল, জঘন্য কর্মকাণ্ডের দৃশ্যগুলো দেখিয়ে তাকে ভেতর থেকেও হত্যা করে সর্বশেষে বুলেটের নির্মম আঘাতে রাসেলের দেহ থেকে অবশিষ্ট প্রাণ ভোমরাটিকেও চিরতরের জন্য নীরব-নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল বর্বর খুনিরা। ব্রিটিশ দার্শনিক, পরমাণু যুদ্ধবিরোধী বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্ত বাট্রান্ড রাসেল এর নাম অনুসারে বঙ্গবন্ধু তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল এর নাম রেখেছিলেন। বাট্রান্ড রাসেল বঙ্গবন্ধুর একজন প্রিয় লেখক ছিলেন।"