আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আস্ফালন দেখার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য ৩০ লাখ শহীদ আত্মাহুতি দেয়নি। আমরা যুদ্ধ করেছি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। যে সমস্ত মৌলবাদী, ধর্মান্ধ এখনো ধর্মের দোহাই দিয়ে একাত্তরের মতো সমাজে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, যারা এখনো ঘর-বাড়ি জ্বালাচ্ছে তাদেরকে আমরা একাত্তরের মতো প্রতিহত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়বো।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে গৌরব’৭১ আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তান এবং তার মিত্ররা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিলো। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ থেকে শেখ রাসেলও রেহাই পায়নি। ছোট্ট রাসেল মাত্র নয় বছর বয়সে প্রাণ হারিয়েছেন। আজ জীবিত থাকলে ৫৮ বছর বয়স হতো। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ হয়েছেন। জাতির জন্য দিনটি অত্যন্ত কলঙ্কময়।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছে। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্টার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করা হয়েছে। একাত্তরে যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে হত্যা নির্যাতন করেছে তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আজ সেই বীজ থেকে গাছ, আর সেই গাছ লালন পালন করায় বাংলার শিকড়ে চলে গেছে। আমাদের দূর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা যখন এই অনুষ্ঠান করছি সেই সময়ে পুরো জাতি শোকাহত এবং মর্মাহত।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, যে মানসিকতা, নীতি ও চেতনা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম সেই চেতনার উপর আজ আঘাত করা হয়েছে। অন্য ধর্মের মানুষের ধর্ম পালনে বাধা দেয়া হয়েছে। সনাতন ধর্মের মানুষের উপর আঘাত করা হয়েছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এরা কারা? আজকে জাতির সামনে তা পরিস্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, ধর্মের নাম করে যারা এসব কাজ করছে সেই যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদী গোষ্ঠী এখনও তৎপর। এই বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্র, পাকিস্তানের ভাবধারায় তালেবানি রাষ্ট্র বানানোর জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। তারা আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়, সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে চায়। তারা দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এসময় শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় গৌরব’৭১ কে ধন্যবাদ জানান হানিফ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ৭১।
সোমবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে চলে ৪টা পর্যন্ত। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল 'ভোরের পাখি শেখ রাসেল'। তিন বিভাগে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ক বিভাগে ছিল ১ম-৩য় শ্রেণি, খ বিভাগে ছিল ৪র্থ থেকে ৭ম, গ বিভাগে ছিল ৮ম-১০ম শ্রেণি।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক সীমা ইসলাম, চিত্রশিল্পী পাপলু আহমেদ প্রমুখ দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ও গৌরব ৭১’র সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব’৭১ সব সময় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, আজকের আয়োজনে শেখ রাসেলকে ভালোবাসে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের মুগ্ধ করেছ। আমরা আশা করছি, এই শিশুরাই একদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে কাজ করবে।
সাম্প্রতিকালের মন্দিরে হামলা ও মানুষ হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোন ভাবে মেনে নেয়া হবে না। রাজপথে এর জবাব দেয়া হবে। আমরা গৌরব’৭১ আগামী বুধবার (২০ অক্টোবর ) এসব ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিরোধ ও লাঠি মিছিল করবো। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
গৌরব’৭১ এর সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে এবং সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.মশিউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম,আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী, বিবার্তা সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন নাসিরুদ্দিন মিতুল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এই আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ। প্রসঙ্গত, গৌরব’৭১ আয়োজিত এই শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার শেষে সাংস্কৃতিক পর্ব ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান করার কথা থাকলেও বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের খুব শীঘ্রই পুরস্কার নির্দিষ্ট নাম্বার ও ঠিকানায় যোগাযোগ করে পাঠিয়ে দেয়া হবে আয়োজকরা জানিয়েছেন।