কনস্টেলশন এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির নামে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রহমান একজন নারীতে বুদ থাকা ব্যক্তি হিসাবেই পরিচিত বলে অভিযোগ করেছেন তার অফিসের লোকজনই। এমনকি সন্ধ্যার পরই তার আসল অফিস শুরু করেন। নারী আর মাদক নিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকদের মনোরঞ্জন করাটাই যেন তার কাজ। এই ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে রমরমা প্রতারণা ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন অনিক ইসলাম নামের একজন। এই শাকিল রহমান ও অনিক ইসলাম ওরফে বাবু মিলে প্রতারণা করতে গিয়ে ধরাও খেয়েছিলেন।
ভোরের পাতার অনুসন্ধানে জানা গেছে, কনস্টেলশন এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির নামে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রহমান ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মাস্টার প্লান তৈরি করার একটি প্রকল্প বাগিয়ে নেয় অনিক ইসলাম বাবু। মোট ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার কাজের মধ্য থেকে কোনো কাজ না করেই বিল হিসাবে দেড় কোটি টাকারও বেশি উত্তোলন করেছেন এই শাকিল-অনিক গং। এরপর চলতি বছরের মে মাসে অনিককে কাজ না করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে রাখা হয়। সেখান থেকে তার আত্নীয় স্বজনরা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে কোনোভাবে বুঝিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে আসেন। ওই টাকা থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকে এফডিআরও করছেন এই অনিক। এমন খবরও নিশ্চিত করেছে তারই ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।
সূত্র আরো জানিয়েছে, শুধু গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাজটি বাগিয়ে নিতে নিজের অফিসের একজন কর্মচারীর ভোটার আইডি কার্ড চুরি করে তাকে না জানিয়ে একসেক লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খুলেন। প্রতারাণা করে ওই ব্যক্তির নাম ব্যবহার করার বিষয়টি বেরিয়ে আসলে এ নিয়ে অনিক এবং ওই কর্মচারীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে ব্যক্তিটি চাকরি ছেড়ে দেন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজউকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে এবং মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করেই প্রায় দেড় কোটি টাকা বিল আদায় করে নিয়েছে। এখনো বাকি ৩ কোটি টাকা বিল আদায়ের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে। কিন্তু কোনো কাজ না করে এমন বিল আর উত্তোলন করার সুযোগ দেয়া হবে না বলে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন গাজীপুর সিটির মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এই অনিক ইসলাম বাবু এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন।
এদিকে, মনোরঞ্জনের মাধ্যমে কনস্টেলশন এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির নাম ভাঙিয়ে রমরমা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন শাকিল রহমান। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনেও নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন শাকিল। এক্ষেত্রে দুদকের অসাধু কর্মকর্তাদের নানা অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ারও অপচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন এই শাকিল রহমান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করছেন শাকিল রহমান। এমনকি বিদেশী অনেক ফান্ডের টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ছোট ছোট অংকে ডিপোজিট এবং উত্তোলনের মাধ্যমে অবৈধ অর্থকে বৈধ টাকায় পরিণত করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কনস্টেলশন এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিরি একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, গুলশান এবং বনানীতে দুইটি অভিজাত ফ্লাটে অফিসের পাশাপাশি সকল ধরণের অনৈতিক কাজও চলে। গুলশান ২ এর ৫৮ নম্বর রোডের বাড়ি নং ৩/বি এর এপার্টমেন্ট ২০২ এবং বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউর ৪৯ নম্বর রোডের সিডাব্লিউএন (এ) ৩/এ এর ১২ তলাতে বিভিন্ন কায়েন্টদের ডেকে এনে নারী, মদ দিয়ে মনোরঞ্জন করা হয়।
এমনকি আনিসা নামের একজন সাবেক সহকর্মীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগও রয়েছে কনস্টেলশন এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রহমানের। যদিও এই আনিসা আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকার একটি অবৈধ আয়কে বৈধ করার কাজ এনে দিয়েছিলেন এই শাকিলকে। পুরোপুরি এই টাকা আত্নসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাকিল রহমানের উদ্যোগ জানার পর আনিসা সেখান থেকে টাকা সরিয়ে নেন এবং চাকরি ছেড়ে দেন।
এছাড়া শাকিনা হোসেইন নামের আরো একজন নারীকে কনস্টেলশন এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির রিসার্চ এনালিস্ট হিসাবে নামে মাত্র নিয়োগ দিয়েছেন শাকিল রহমান। কিন্তু তার কাজ হচ্ছে বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ী ও আমলাদের মনোরঞ্জন করা।
এমনকি, তার অফিস ঘুরে দিনের বেলায় মাত্র ৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারী দেখা গেছে। মূলত সেখানে অফিসের নামে রাতের রানীদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, আমলাদের মনোরঞ্জন করা হয়। বিতর্কিত মডেল পিয়াসা থেকে শুরু করে নাবিলা, তন্বী নামের আরো কয়েকজনের মাধ্যমে অল্প বয়সের নারীদের সেখানে নিয়ে আসতেন শাকিল রহমান।
এদিকে, শাকিল রহমানের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করে জানিয়েছে, সুন্দরী আনিসা চলে যাওয়ার পর বৃষ্টি নামের এক মেয়েকে নিয়ে আছেন শাকিল। তাকে দিয়ে মনোরঞ্জন থেকে শুরু করে সকল ধরণের অপকর্ম গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কনস্টেলশন এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে প্রতিবেদক একটি ক্ষুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠালেও তিনি তার প্রতি উত্তর দেননি।
এমনকি শাকিল রহমানের মতোই তার অপকর্মের সহযোগী অনিক ইসলাম বাবুর কাছেও এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তারও কোনো জবাব দেননি। তবে শাকিল রহমান বিভিন্ন সাংবাদিকদের দিয়ে তার বিরুদ্ধে নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করিয়েছেন।
চলবে...