প্রকাশ: সোমবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২১, ৮:৪৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আগামীকাল ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দাবার আসর ‘শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক গ্রান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই আসরটি দাবা ফেডারেশনের উদ্যোগে এবং সাইফ পাওয়ারটেকের পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হচ্ছে।
আজ সোমবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আসরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দাবা ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার তরফদার মো. রুহুল আমিন। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন শামীম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোশারফ হোসেন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলমসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক দাবা আসরটি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়; এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। যেখানে প্রাইজমানিই থাকছে পঞ্চান্ন হাজার মার্কিন ডলার। বিশ্বের ১৮টি দেশের ৩২জন গ্রান্ডমাস্টার এতে অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে আন্তর্জাতিক মাস্টারসহ নারী গ্রান্ডমাস্টারও থাকছেন। আজ উদ্বোধন হলেও আগামীকাল ১৯ অক্টোবর থেকে প্রতিযোগীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়বে। প্রতিযোগিতা চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত। ২৮ অক্টোবর সমাপনী এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক গ্রান্ডমাস্টার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের তিনজন গ্রান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান, নিয়াজ মোরশেদ এবং এনামুল হোসেন রাজীব অংশ নিচ্ছেন। ব্যক্তিগত কারণে দেশের বাকি দুই গ্রান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার এবং আব্দুল্লাহ আল রাকিব খেলছেন না। এছাড়া ইউক্রেন, আজারবাইজান, পোল্যান্ড, ইরান, ভারতের মতো দেশ থেকে সেরা দাবাড়–তেও এখানে খেলছেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রেটিংধারী খেলোয়াড় হলেন নেদারল্যান্ডসের তিভিয়াকোভ (২৬০০ পয়েন্ট)। সর্বনি¤œ পয়েন্টধারী খেলোয়াড় বাংলাদেশের সাজিদুল হক (১৭৫৭ পয়েন্ট)। আসরে রেটিং পয়েন্টে সেরা ২০ জনের দলে নেই বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ের নাম। স্বাগতিক দেশের মধ্যে রেটিং পয়েন্টে সবার ওপরে অবস্থান গ্রান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের (২৪৩১ পয়েন্ট)। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে রেটিং পয়েন্ট যেমন বাড়ানোর সুযোগ থাকছে স্বাগতিক খেলোয়াড়দের; তেমনি নর্ম পাওয়ারও দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমানের কথা এখানে উল্লেখ করতে হয়। বর্তমানে ২৩৮৩ রেটিং পয়েন্ট তার। শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় ভালো করলে শুধু ফাহাদের রেটিং পয়েন্টই বাড়বে না; গ্রান্ডমাস্টারের (গ্রান্ডমাস্টার হতে ২৫০০ পয়েন্ট লাগে) পথে এক ধাপ এগিয়েও যাবে। এ বিষয়ে ফেডারেশন সহ-সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘শেখ রাসেল আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য রেটিং পয়েন্ট বাড়ানোর সুযোগ যেমন থাকছে; তেমনি নর্ম পাওয়ারও। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাবেন আমাদের খেলোয়াড়রা। এতে করে তারা অন্যদের সঙ্গে তাদের পার্থক্যগুলোও ভালোভাবে পরখ করে নিতে পারবে। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে দেশের দাবার সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে।’
শেখ রাসেলের নামে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন প্রসঙ্গে তরফদার রুহুল বলেন, ‘আমি সত্যিই ভীষণ গর্ববোধ করছি বাংলাদেশে এত বড় একটি দাবার আস্তর্জাতিক আসর হতে যাচ্ছে। শহীদ শেখ রাসেলের নামে দাবা ফেডারেশনের উদ্যোগে সাইফ পাওয়ারটেকের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি আয়োজিত হচ্ছে। বাংলাদেশেই নয় এশিয়াতেও দাবার এত বড় আয়োজন আগে হয়নি। টুর্নামেন্টের মাধ্যমে আমরা দাবা খেলাটি দেশের সর্বত্র ছোট্ট শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলকে আমরা বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিতে চাই। বাঙালি জাতিকে আগামী প্রজন্মকে জাতির ইতিহাস জানাতে চাই। কিভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো? কিভাবে বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিলেন- শহীদ শেখ রাসেল দিবসে সেই ইতিহাসও আমরা জানাতে চাই।’ রুহুল আমিন আরো যোগ করেন, ‘দাবা একটা মেধা বিকাশের খেলা। আপনারা দেখবেন বিশে^র যে সমস্ত দেশ অর্থনীতিতে উন্নতি করেছে তারা কিন্তু দাবা খেলাতেও বেশ উন্নত। বাংলাদেশের ছোট্ট শিশুরা কিন্তু জন্মের পর থেকে সবার আগে ফুটবল নিয়ে খেলা করে। আপনার আমার সবার ঘরের চিত্র এটি। আমরা ছোট বেলায় ফুটবল খেলেছি। আমরা ছেলে খেলেছে; এখন আমার নাতিরাও ফুটবল নিয়ে খেলে। আমি বাবা-মায়েদের অনুরোধ করব ছোট্ট শিশুদের যেন ফুটবল কিনে দেয়ার পাশাপাশি একটি করে দাবা বোর্ড কিনে দেন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘দাবা ফেডারেশনের সভাপতি আমাদের পুলিশ বাহিনীর প্রধান বেনজীর আহমেদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দাবা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই টুর্নামেন্ট আয়োজন তারই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় দাবার আসর। টুর্নামেন্টটি আরো বেশি আয়োজন সম্ভব হয়েছে ফেডারেশনের সভাপতি তরফদার রুহুল আমিনের কারণে। এখানে তার প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আমি আশা করছি তরফদার রুহুল আমিন ভবিষ্যতে আরো বড় বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আমাদের চমক দেবেন।’ শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিনকে উপলক্ষ্য করে এমন বড় আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। একই সঙ্গে আসরে অংশ নেয়া দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের শুভ কামনাও জানান। এছাড়া বক্তব্যের শুরুতে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল শহীদ শেখ রাসেলসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।