সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা ও সাধারণ সদস্য পদে মোট ৭৪৮ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
রবিবার (১৭ অক্তবর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিল মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময়।
সাতক্ষীরার আলীপুর ইউনিয়ন বাদে বাকি ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ৭৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা পদে ১৬২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে মোট ৫১৩ জন মনোনয়ন পত্র উপজেলার স্ব স্ব রিটার্টিং অফিসারের কার্যালয়ে দাখিল করেছেন।
দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিলেও সাতক্ষীরায় সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বৈকারী, কুশখালী, ফিংড়ী ও ধুলিহর ইউনিয়ন ব্যতিত বাকি ৯ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সরাসরি বিএনপির পদে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
এদিকে, ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়ন বাদে বাকি ১২ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
এছাড়া ফিংড়ী, ঘোনা, বৈকারী ও বাশদাহ ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী রয়েছে।
এদিকে, আগরদাঁড়ি, ঘোনা ও বৈকারীসহ কয়েকটি ইউনিয়নে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। আর দুটি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
তবে একাধিক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অধিকাংশ ইউনিয়নে এবার নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবির শংকা রয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ঘোনা ইউনিয়নে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নৌকার প্রার্থী মো. ফজলুর রহমান মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এখানে সদর উপজেলার পশ্চিম জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশারাফ হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
এছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এড. কামরুজ্জামান ভূট্ট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক পেয়ে নির্বাচন করছেন মো. বদরুজ্জামান বাবলু।
এদিকে, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম স্বতন্দ্র প্রার্থী হিসেবে আবারও লাবসা ইউনিয়নে নির্বাচন করেছেন। এখানে থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম নৌকা প্রতীক পেয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৫ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম তিনি আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
এখানে থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলামও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিমেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নৌকা প্রার্থী মো. আলাউদ্দিন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের ইবাদুল ইসলাম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
শিবপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাাদক এস এম আবুল কালাম আজাদ ও তার ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইউপি মেম্বর আবুল কাশেম চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
এখানে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মজিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এছাড়া হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইমাদুল হোসেন এবং স্বতন্ত্রসহ মোট ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
আগরদাঁড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
এখানে থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৌকার প্রার্থী মো. মইনুল ইসলামের পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মজনুর রহমান মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. লুৎফর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
কুশখালি ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ মোট ১৩ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।
এদের মধ্যে কুশখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী, ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন পলাশ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মনিরুল ইসলামসহ একাধিক নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মুনসুর আলী সরদার লাঙ্গল প্রতীক পেয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
ভোমরায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এখানে নৌকার প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম।
ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী আজমল হোসেনর পাশাপাশি জয়দেব কুমার ঘোষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
এখানে থানা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
বল্লি ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. খাইরুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
এখানে উপজেলা বিএনপির সদস্য এড. মহিতুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
বাশদাহ ইউনিয়নে এবার ৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান নৌকা প্রতীক পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান এস এম মোশারাফ হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এখানে বিএনপি নেতা এবিএম বদরুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এছাড়া লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
বৈকারী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অছলে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা আবু মো. মোস্তফা কামাল মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এখানে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জালাল উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
এছাড়া ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়ন বাদে বাকি ১২টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে গলার কাটা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাঠে থাকায় থাকায় ১১ নভেম্বর সদর উপজেলার অনুষ্ঠিত ১৩ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ভোরের পাতা/অ