প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১:৪৮ পিএম আপডেট: ০৭.১০.২০২১ ১:৫৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দরকার হবে নতুন কমিশন গঠনের। নতুন কমিশনের অধীনেই হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের এখনো চার মাসের বেশি সময় অবশিষ্ট থাকলেও রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অঙ্গনে এনিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। নতুন কমিশন গঠনের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কিছু প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কিছু নির্দেশনা চেয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
চলতি মাসেই যেকোনো সময় রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। এই সার্চ কমিটিতে কারা থাকবেন সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এই সার্চ কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন, এটিও জানা গেছে।
সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারগণের নাম প্রস্তাব করা হবে এবং একাধিক নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হবে। এদের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য কমিশনারদেরকে নিযুক্ত করবেন। সার্চ কমিটি যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করবেন, কিন্তু এখন সার্চ কমিটি গঠনের আগেই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সম্ভাব্য বেশকিছু নাম আলোচনায় আসছে। চায়ের টেবিলে, রাজনৈতিক আলোচনায় এবং দলীয় কার্যালয়ে এই সমস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নানারকম চর্চা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তির যোগ্যতা-অযোগ্যতা নিয়ে রাজনৈতিক আড্ডায় চায়ের কাপে ঝড় উঠছে। যে পাঁচজনকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই আমলা এবং এই পাঁচজন হলেন:
১- আলী ইমাম মজুমদার: সুশীল সমাজ এবং বিএনপির পছন্দের ব্যক্তি আলী ইমাম মজুমদার এবং এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আলী ইমাম মজুমদারের নামই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। সুশীলসমাজ নিয়ন্ত্রিত সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) দেশের নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের ভাবনা আলী ইমাম মজুমদারের মতো একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ভালো কাজ করতে পারেন। আলী ইমাম মজুমদার ২০০৭-০৮ সালে এক এগারোর সরকারের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য রেখে আলোচিত হয়েছেন।
২- মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া অত্যন্ত জ্ঞানী এবং বিচক্ষণ একজন মানুষ। তাকে নিয়ে বিতর্ক খুব কমই আছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হয়েছিলেন। তারপর তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। এখন তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, এবং ব্যক্তিত্ববান মানুষ হিসেবে তিনি পরিচিত। তাকে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা নিয়ে জোর গুঞ্জন আছে।
৩- আবুল কালাম আজাদ: আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ছিলেন এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়কারী ছিলেন। সেখান থেকে অবসর গ্রহণের পর এখন তিনি কোন দায়িত্ব পালন করছেন না। যদিও একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে তার সুনাম ছিল। কিন্তু শাহেদ কেলেঙ্কারির পর তাকে নিয়ে কিছু বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাছাড়া তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলে বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল তার প্রবল প্রতিবাদ করবে বলে জানা যাচ্ছে। কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
৪- নজিবুর রহমান: নজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ছিলেন। তার আগে তিনি এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ ঘারানার হলেও আওয়ামী লীগের খুব একটা আস্থাভাজন নন। তাছাড়া বিএনপির মধ্যেও তাকে নিয়ে প্রবল আপত্তি রয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করেন।
৫- ড. জাফর আহমদ খান: ড. জাফর আহমদ খান সদ্য অবসরে যাওয়া সিনিয়র সচিব। তিনি ৮২ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি সর্বশেষ সংসদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তার নামও আলোচনা হচ্ছে। মোটামুটি একজন নিরপেক্ষ আমলা হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তাছাড়া তিনি দীর্ঘ ১১ বছর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এটা তার বড় একটি ইতিবাচক দিক বলে অনেকে মনে করছেন।
তবে এই পাঁচজন আমলার বাইরে এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিচার বিভাগের কাউকে দেওয়ার কথাও আলোচনায় আছে এবং সেক্ষেত্রে একাধিক নাম বিবেচনা আছে। তবে শেষপর্যন্ত সার্চ কমিটি কাদেরকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেন এটাই দেখার বিষয়।