কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবকিছুতেই রয়েছে একটি পরিবারের ভাগ । একটি পরিবারটি সৈকতের বালিয়াড়িতে গড়ে তুলেছেন মার্কেট, সৈকতের টিউব, ছাতা, চেয়ার, ঝুপড়ি দোকান থেকে শুরু করে বিচ বাইক ও ওয়াটার বাইক সব কিছুতে ক্ষমতাধর এক আমলার জমিদারি চলছে। পরিবারটির জমিদারি বাড়াতে কক্সবাজার সৈকতের এইসব অপরিকল্পিত ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবকিছুতেই জমিদারির অভিযোগ সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প পরিচালক শফিউল আলমের পরিবারের বিরুদ্ধে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট দিয়ে নেমে হাতের ডানপাশে বালিয়াড়ির উপরে দেখা যাবে একটি বিশাল ঝুপড়ি মার্কেট। ২৭ টি দোকান নিয়ে গড়ে উঠা এই মার্কেটটি নাম জহুর মার্কেট। এই মার্কেটের জমিদার জহুর আলম আবু । তিনি সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলমের ভাই।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, শফিউল আলমের মন্ত্রীপরিষদ সচিবের চুক্তি শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহ আগে রাতের আঁধারে এই মার্কেটটি গড়ে তোলা হয়। জহুর আলম ও তার ভাগ্নে শহরের মোহাজের পাড়ার তোফায়েল আহম্মদ প্রকাশ এমপি তোফাইল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে রাতের আঁধারে এই ঝুপড়ি মার্কেটটি গড়ে তোলেন। পরের দিন এই মার্কেটের ২৭ টি দোকানের ৭টি দোকান নিজের নামে রেখে বাকি ২০টি দোকান বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির থেকে এই ২৭টি দোকানের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা করেন জহুর আলম। সফিউল আলমের ভাই ভাতিজাদের নামে ঝিনুক ও আচারের দোকান রয়েছে। তাদের কিছু কার্ডে নাম্বারও জানা গেছে, তা হলো ১২২৮, ১৫৫০, ১৫৫৬ ও ১৫৫২।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন পয়েন্টে ১৪০ জনকে কিটকট (ছাতা চেয়ার) ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে কক্সবাজার বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। কক্সবাজারের বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার সৈকতে সবচেয়ে বেশি চেয়ারের মালিক সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলমের পরিবার। তাদের পরিবারের সদস্যদের নামেই রয়েছে ৩০ টি কিটকট (চেয়ার)। শফিউল আলমের ভাইদের নামে বরাদ্দ কৃত কিটকটের কার্ডের নাম্বার হলো ৪১, ৫৬ ও ৫৭।
কিটকট ব্যসায়ীরা অভিযোগ করেছেন শফিউল আলম মন্ত্রীপরিষদ সচিব হওয়ার পরে তার ভাইয়েরা কিটটকের কার্ড নেন। এই দাপুটে আমলার ভাইদের নামে চেয়ার বরাদ্দ দিয়ে তাদের স্থান করে দিতে দীর্ঘ দুই যুগধরে অবস্থান করা কিটকট ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেয়া হয়।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে কিটকট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাবু ভোরের পাতাকে জানান, এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে তিনি পারবেননা। এই বিষয়ে তার হাত, পা, চোখ সবকিছুই বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
কক্সবাজারের সাগরের পানিতে যে কয়েকটি ওয়াটার বাইক চলছে তাতেও রয়েছে শফিউল আলমের ভাইদের ভাগ। তার ভাই সুরুত আলম ও ভাগ্নে তোফায়েল আহম্মদ (প্রকাশ এমপি তোফাইল) এর নামে দুইটি ওয়াটার বাইকের লাইসেন্স রয়েছে। নাসির উদ্দিন নামের এক ব্যাক্তিকে এই ওয়াটার বাইক ও কিটকট পরিচালনা করে আসছেন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারর সিভিল সোসাইটির সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে রাতের আঁধারে দোকান নির্মাণ করা ক্ষমতাবানের কাজ। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আধুনিক করতে এইসব ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করে পরিকল্পিত পর্যটন গড়ে তুলতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর কক্সবাজারের সাধারন সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান জানিয়েছেন, মন্ত্রী পরিষদ সচিবের ভাই সৈকতের আচারের ও ঝিনুকের ঝুপড়ি দোকানে ভাগ বসাবেন, তা অকল্পনীয়। সৈকত কেন্দ্রিক সকল ব্যবসা ক্ষমতাবানরাই করতে পারছে। রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ছাড়া কক্সবাজার সৈকতে সাধারণ মানুষ কোন সুযোগ পায়না।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলমের ভাই জহুর আলম আবু বলেন, তাকে, তার ছেলেকে, তার ভাই ও ভাগ্নেকে আচারের দোকান, ঝিনুকের দোকান, কিটকট ব্যবসা ও ওয়াটার বাইক ব্যবসার অনুমতি জেলা প্রশাসক দিয়েছেন। কোন কিছু জানার প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসক থেকে জানতে পরামর্শ দেন জহুর আলম।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ হাসান জানিয়েছান, বিচ যেইসব কার্ড ইস্যু করা হয়েছে তা দুই বছর আগের। সেই সময়ের বিচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সদস্যরা এইসব অনুমতি দিয়েছিলো।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প পরিচালক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার হোয়াটসআপ ও ইমুতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পুরো বিষয়ে জানতে চেয়ে মেসেজ করা হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।